ছবি রয়টার্স।
এক বছর আগের কথা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র বার্তায় প্রথম শোনা যায় আতঙ্ক— ‘‘দু’সপ্তাহে চিনের বাইরে ১৩ গুণ বেড়ে গিয়েছে সংক্রমণ। ১ লক্ষ ১৮ হাজার মানুষ, ১১৪টি দেশ করোনা-আক্রান্ত। প্রাণ হারিয়েছেন ৪২৯১ জন। অতিমারির চেহারা নিতে চলেছে কোভিড-১৯।’’
কাট টু ১১ মার্চ, ২০২১। বিশ্ব জুড়ে সংক্রমিত ১১ কোটি ৮৭ লক্ষের বেশি। প্রাণ হারিয়েছেন ২৬ লক্ষ ৩৪ হাজার ২০২ জন। অক্ষত নেই বিশ্বের প্রায় কোনও দেশই।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চিনের উহানে প্রথম শোনা যায় ‘রহস্যজনক জ্বরে’ মৃত্যু। ২০১৯ সালের নামেই কোভিড-১৯। সংক্রমণ ও মৃতের সংখ্যা ঝড়ের গতিতে বাড়তে থাকায় ২০২০-র ২৩ জানুয়ারি, রাতারাতি কয়েক ঘণ্টার নির্দেশে ১ কোটি ১০ লক্ষ বাসিন্দা-সহ ‘তালাবন্ধ’ করা হয়েছিল উহান শহরকে।
কেউ শহর ছেড়ে বেরোতে পারেনি, কেউ শহরে ঢুকতে পারেনি। ‘গৃহবন্ধি’ করা হয়েছিল শহরে থাকা সকলকে। চিনের কাণ্ড দেখে তখন স্তম্ভিত বিশ্ব, অনেকেই বলেন ‘‘চিনেইএ সব সম্ভব।’’ গত এক বছরে লকডাউন, সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং, মাস্ক পরা গোটা বিশ্বের কাছেই পরিচিত বিষয়। জীবন এখন ‘নিউ নর্মাল’।
সংক্রমণ ও মৃত্যুর নিরিখে আমেরিকা শীর্ষে রয়েছে দীর্ঘদিন। ২ কোটি ৯৮ লক্ষ সংক্রমণ। ৫ লক্ষ ৪২ হাজার মৃত্যু। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রিপোর্ট অনুযায়ী, ১ লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে ১৬১.৫ জন মারা গিয়েছেন এ দেশে।
এই নিরিখে দক্ষিণ আমেরিকার ছবিও ভয়াবহ। মেক্সিকোয় সংখ্যাটা ১৫২, ব্রাজিলে ১২৮.১, পেরুতে ১৫০.৬, আর্জেন্টিনায় ১১৯.৭।
ইউরোপে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রিটেন। ১ লক্ষ বাসিন্দার মধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন ১৮৮.৩ জন। ইটালিতে মৃত্যুহার ১৬৬.৮, চেক প্রজাতন্ত্রে ২১০.৭। করোনা-সংক্রমণ প্রথম যে দেশে শোনা যায়,সেই চিনের মৃত্যুহার কিন্তু ১ লক্ষে ০.৩ জন!
মৃতের সংখ্যার বিচারে আমেরিকার পরে দ্বিতীয় স্থানে ব্রাজিল। এখনও সেখানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। ২ লক্ষ ৭০ হাজারের উপরে মৃত্যু। গত বুধবার এক দিনে সংক্রমিত হয়েছেন ৮০ হাজার বাসিন্দা। ২০০০-এর উপরে মৃত্যু হয়েছে ওই দিন। ব্রাজিলের নতুন করোনা-স্ট্রেনকে দায়ি করছেন বিশেষজ্ঞেরা। টিকাকরণও চলছে মন্থর গতিতে। এ নিয়ে ব্রাজিলের বিরুদ্ধে উষ্মা প্রকাশ করেছেন হু-প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস।
এ দিকে, প্রতিষেধক এলেও আতঙ্ক কাটছে না। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও টিকাপ্রস্তুতকারী সংস্থা অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা-র তৈরি চ্যাডক্স১-কে এ পর্যন্ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে ইউরোপের আটটি দেশ। সর্বশেষ ডেনমার্ক। এ দেশের প্রশাসন জানিয়েছে, আপাতত বন্ধ করা হচ্ছে এর প্রয়োগ। প্রতিষেধক নেওয়ার পরে কয়েক জনের শরীরে রক্ত-জমাট বাঁধার সমস্যা দেখা দিয়েছে। এক জন মারাও গিয়েছেন। তবে এর সঙ্গে প্রতিষেধকের যোগ আছে কি না, তা নিয়ে চিকিৎসকেরা নিশ্চিত নন। সোমবার, চ্যাডক্স১ প্রয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে অস্ট্রিয়াও। এস্টোনিয়া, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, লাক্সেমবার্গ, আইসল্যান্ড ও নরওয়েতেও সাসপেন্ড করা হয়েছে চ্যাডক্স১-প্রয়োগ।
এ ঘটনায় একটি বিবৃতি দিয়ে অ্যাস্ট্রাজ়েনেকা জানিয়েছে— ‘‘রোগীর নিরাপত্তা সবার আগে। সমস্ত সুরক্ষাবিধি মেনে যে সব টিকাকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম এটি। ক্লিনিক্যাল
ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপে এটি কতটা নিরাপদ, তা নিয়ে বিস্তর পরীক্ষা হয়েছে। সমস্ত তথ্য প্রথম সারির জার্নালে প্রমাণ-সহ প্রকাশিত।’’