শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পাশে রাষ্ট্রপতি মোহম্মদ সাহাবুদ্দিন। বৃহস্পতিবার ঢাকায়। ছবি: রয়টার্স।
শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভায় বিদেশ মন্ত্রকের দায়িত্ব পেলেন আগের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ। পূর্ণাঙ্গ তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্বে কেউ না থাকায় স্বাধীন প্রতিমন্ত্রী হিসাবে সেই মন্ত্রক সামলাবেন দলের তরুণ নেতা ও কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মোহাম্মদ আলী আরাফাত। ২০১৪-য় বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো এ এইচ মাহমুদ আলী হলেন বাংলাদেশের নতুন অর্থমন্ত্রী। দীপু মণিকে শিক্ষা মন্ত্রক থেকে সরিয়ে সমাজকল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্ব দিয়েছেন হাসিনা। তাঁর জায়গায় শিক্ষামন্ত্রী হচ্ছেন চট্টগ্রামের তরুণ নেতা, আগের সরকারে শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব সামলানো মহিবুল হাসান চৌধুরী। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পদে তিন বার দায়িত্ব সামলানো আসাদুজ্জামান খান কামালের উপরেই ভরসা রেখেছেন হাসিনা। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী হয়েছেন বিশিষ্ট চিকিৎসক ও টেকনোক্র্যাট হিসাবে মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়া সামন্তলাল সেন।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পঞ্চম বারের মতো প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতির বাসস্থান বঙ্গভবনে বিশেষ অনুষ্ঠানে তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি মোহম্মদ সাহাবুদ্দিন। এর পরে শপথ নেন তাঁর ৩৬ সদস্যের মন্ত্রিসভা। প্রথমে ২৫ জন পূর্ণমন্ত্রী, পরে ১১ জন প্রতিমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রী নিজের হাতে রেখেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, প্রতিরক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ, সংস্কৃতি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রকের দায়িত্ব। ক্রীড়া ও যুবকল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্ব পেয়েছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন। বছর খানেকের মধ্যে তিনি নতুন নেতৃত্বকে দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে ক্রিকেট বোর্ড থেকে সরে যাবেন বলে জানিয়েছেন।
শেখ হাসিনা যে দিন টানা চতুর্থ বারের মতো প্রধানমন্ত্রী পদে শপথ নিলেন, সেই দিনই প্রশাসনের লাগিয়ে দেওয়া তালা ভেঙে ঢাকার নয়া পল্টনে নিজেদের দফতরে ঢুকল শক্তির দিক দিয়ে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এ দিনই আবার ১৬৫ দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার পরে বাড়িতে ফিরেছেন বিএনপির চেয়ারপার্সন ও প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।
হাতুড়ি দিয়ে এ দিন পুলিশের লাগানো তালা ভাঙেন এত দিন ‘গোপন জায়গা’ থেকে ভার্চুয়াল সাংবাদিক বৈঠক করা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রহুল কবির রিজভি। ২৮ অক্টোবর এই দফতরের সামনে বিএনপির সভায় গোলমালের জেরে এক পুলিশ কর্মী এবং এক সাংবাদিকের মৃত্যু হয়। তার পরে পুলিশ সভা ভেস্তে দেয়। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল আলমগিরকে গ্রেফতার করে দফতরে তালা লাগিয়ে দেয় পুলিশ। বিএনপির অভিযোগ, তার পরে সারা দেশে তাদের ২৫ হাজার নেতা-কর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। দফতরের তালা ভাঙার পরে সেখানে সাংবাদিক বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মইন খান দাবি করেন, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে মানুষ ভোটই দেননি। ভুয়ো পরিসংখ্যান দিয়ে নির্বাচন কমিশন ভোটকে সফল বলে দেখাতে চাইছে। তার পরেও তারা ৪০ শতাংশের বেশি বলতে পারছে না। মইন বলেন, “৭ জানুয়ারি দেশে কোনও নির্বাচনই হয়নি। ভোটের সমস্ত ফল নির্ধারিত হয়েছে ঢাকার একটি উচ্চ পর্যায়ের টেবিল থেকে। কে কত ভোট পাবে, কে কে নির্বাচিত হবে, সবই নির্ধারিত হয়েছে আগে থেকে। ভুয়ো নির্বাচন করে সরকার সংসদকে কুক্ষিগত করেছে।”
মমতার অভিনন্দন: বাংলাদেশের নির্বাচনে ফের জয়ী হওয়ার জন্য শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর এক পড়শি দেশ ভুটানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত শেরিং তোবগেকেও মমতা অভিনন্দন জানিয়েছেন। সূত্রের খবর, দিনভর চেষ্টার পরে সন্ধ্যায় হাসিনার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে মমতার। হাসিনাকে এ রাজ্যে আমন্ত্রণ জানান মুখ্যমন্ত্রী। হাসিনার সঙ্গে মমতার ব্যক্তিগত সুসম্পর্ক বহু দিনের। হাসিনার জয়ে দু’দেশের এবং দু’পার বাংলার সম্পর্ক আরও মজবুত হবে বলে মনে করেন মুখ্যমন্ত্রী।