Shooters

জয় অধরা, তবু হাল ছাড়েন না মায়েরা

শুধু তর্ক-বিতর্ক নয়, এ দেশে আরও কড়া বন্দুক আইন আনার লক্ষ্যে কিন্তু তৃণমূল স্তরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন। এই সব সংগঠনগুলির মধ্যে অন্যতম হল ‘মমস ডিম্যান্ড অ্যাকশন’।

Advertisement

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

বস্টন শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২৩ ০৯:০৭
Share:

গত সপ্তাহে আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই থেকে প্রচারিত হল একটা ভিডিয়ো কোনও বন্দুকধারী এসে অতর্কিত হামলা শুরু করলে মানুষের কী কী করা উচিত। ফাইল ছবি।

এ লড়াই কোনও দিন হয়তো জিততে পারবেন না, এ কথা জেনেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। আজ মাতৃ দিবসের বিশেষ দিনে তাঁদের লড়াই এক বিশেষ মাত্রা পাচ্ছে, কারণ এই লড়াই তো মায়েদেরই।

Advertisement

গত সপ্তাহেই আমেরিকান গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই থেকে প্রচারিত হল একটা ভিডিয়ো— রাস্তাঘাটে, দোকানে-বাজারে কোনও বন্দুকধারী এসে অতর্কিত হামলা শুরু করলে মানুষের কী কী করা উচিত। কোন পরিস্থিতিতে আমরা পালানোর চেষ্টা করব, কখনই বা লুকিয়ে পড়ব, দুষ্কৃতীকে আটকানোর চেষ্টা করব কি না, এ সবই বিশদে ব্যাখ্যা করা হয়েছে সেই ভিডিয়োয়। এই ভিডিয়োটি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরে দু’ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেকে বলছেন, সাধারণ মানুষকে বিপদ সম্পর্কে সচেতন করে তাদের ‘কর্তব্য’ পালন করেছে এফবিআই। কিন্তু অনেকের মনে হচ্ছে, অ্যাসল্ট রাইফেল নিয়ে যে কোনও জায়গায় বন্দুকধারী উপস্থিত হতে পারে, এই ঘটনাকে যেন স্বাভাবিকত্বের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। গত রবিবার ডালাসের শপিং মলে বন্দুকবাজের হামলায় শিশু-সহ আট জন নিহত হওয়ার পরে বন্দুক হিংসা নিয়ে এ ধরনের বিতর্ক ফের মাথা চাড়া দিচ্ছে।

শুধু তর্ক-বিতর্ক নয়, এ দেশে আরও কড়া বন্দুক আইন আনার লক্ষ্যে কিন্তু তৃণমূল স্তরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বিভিন্ন সংগঠন। এই সব সংগঠনগুলির মধ্যে অন্যতম হল ‘মমস ডিম্যান্ড অ্যাকশন’। ২০১২ সালে স্যান্ডি হুক কিন্ডারগার্টেন স্কুলে ২৬টি ছ’-সাত বছরের বাচ্চা নিহত হওয়ার পরে শ্যানন ওয়াটস নামে এক মা ফেসবুকে একটি ‘গ্রুপ’ তৈরি করেন। সেই ছোট গোষ্ঠী আজ মহীরুহের আকার ধারণ করেছে, সদস্য সংখ্যা এক কোটির বেশি। আমেরিকার গ্রামে, ছোট শহরে, চার্চে, কমিউনিটি সেন্টারে, স্কুলে, স্থানীয় কাউন্সিল থেকে শুরু করে, মেয়র এমনকি প্রশাসনের শীর্ষ স্তর সেনেট পর্যন্ত তাঁরা অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, যাতে কড়া বন্দুক আইন তৈরি হয়, ১৮ পেরোলেই অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে তুলে নেওয়ার স্বাধীনতা না-পায় এ দেশের কিশোর-কিশোরীরা। টেক্সাসের মতো রাজ্যে, যেখানে বন্দুক আইন যথেষ্ট শিথিল, এই মায়েরা দোকানমালিকদের কাছে গিয়ে আবেদন করছেন, যাতে তাঁরা তাঁদের দোকানে অন্তত বন্দুক নিয়ে ঢোকা বেআইনি করেন।

Advertisement

আরকানস প্রদেশে অস্ত্র আইন এ দেশের মধ্যে সব থেকে খারাপ। প্রতিবাদে, আজ মাতৃ দিবসের বিশেষ দিনে, এই প্রদেশের মায়েরা ‘ফেড আপ’ (হয়রান হয়ে যাচ্ছি) এই কথা পোস্টারে লিখে প্রতিবাদ মিছিলে শামিল হলেন। তাঁদের সেই মিছিল দেখে মনে হচ্ছে, এই ‘মমস ডিম্যান্ড অ্যাকশন’-এর মায়েদের বড় প্রয়োজন। তাঁদের স্লোগান— ‘গান লবি শক্তিশালী? তা হলে মায়েদের তোমরা চেনো না’— এ দেশের বন্দুক-বিরোধী মানুষের চালিকাশক্তির কাজ করছে। পথে হাজার আশাভঙ্গ, গড়ে সাত দিন অন্তর মানুষ মরছে বন্দুকের গুলিতে, কিন্তু তাঁরা থামছেন না।

১৯৮০-র ৫ সেপ্টেম্বর এক মত্ত চালকের গাড়ির ধাক্কায় তাঁর ১৩ বছর বয়সি মেয়ের মৃত্যুর পরে ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্যান্ডেস লাইটনার নামে এক মা শুরু করেছিলেন ‘মাদার্স এগেনস্ট ড্রাঙ্ক ড্রাইভিং’ আন্দোলন। চার দশকে সেই আন্দোলন আমেরিকা থেকে কানাডা ও ব্রাজিলেও ছড়িয়ে পড়েছে। এই সংগঠনের লড়াই তৈরি করেছিল অনেক কঠিন আইন। তাই ‘মমস ডিম্যান্ড অ্যাকশন’-এ মায়েরাও আশায় রয়েছেন, বন্দুক হিংসার বিরুদ্ধে এই লড়াই যেন বৃথা না যায়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement