এত দিন জানা ছিল আইএসের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে অংশ নিচ্ছে না ব্রিটেন। কিন্তু রবিবার এক ব্রিটিশ দৈনিকই জানাল, গত চার সপ্তাহ ইরাকে প্রায় প্রতি দিন গড়ে আট জন করে আইএস জঙ্গিকে নিধন করেছে ব্রিটেনের স্পেশ্যাল এয়ার সার্ভিসের (স্যাস) অফিসাররা। রাতের আঁধারে জঙ্গিঘাঁটি বেছে বেছে হামলা চালিয়েছেন তাঁরা। তবে প্রত্যেকটা অভিযানই হয়েছে অত্যন্ত গোপনে। দৈনিকের দাবি, জঙ্গিদের অপ্রস্তুত করতেই এ হেন চোরাগোপ্তা হামলার পথ বেছেছে ব্রিটেন। সম্ভবত তাই প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে কিছু বলতে চায়নি ডেভিড ক্যামেরন প্রশাসন।
দৈনিকের এ দিনের এই দাবির পরও অবশ্য চুপই রয়েছে ব্রিটিশ সরকার। কিন্তু অভিযানগুলির যে বিবরণ এ দিন প্রকাশিত হয়েছে, তার পর রীতিমতো শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ওই দৈনিকের দাবি, আইএস অধিকৃত এলাকাগুলিতে স্যাসের অফিসারদের পৌঁছে দিত রয়্যাল এয়ার ফোর্সের (র্যাফ) চিনুক হেলিকপ্টার। তার পরই শুরু হত অভিযানের আসল পর্ব। ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে আইএস ঘাঁটিগুলিতে পৌঁছে যেতেন অফিসাররা। এই হামলার জন্য বিশেষ ধরনের ‘কোয়াড বাইক’ ব্যবহার করতেন তাঁরা। তাতে লাগানো থাকত মেশিন গান। সেগুলিই ব্যবহার করা হত আইএস-নিধনে। গোটাটাই অবশ্য সারা হত রাতের আঁধারে। এবং এই হামলা যে কতটা ব্যাপক ভাবে করা হয়েছে, তার আন্দাজ দিতে ওই দৈনিকের দাবি, ইতিমধ্যেই সব অস্ত্র খরচ হয়ে গিয়েছে ইরাকে জঙ্গিনিধনের কাজে ব্যস্ত স্যাস অফিসারদের। দ্বিতীয় দফার হামলার জন্য ফের ব্রিটেন থেকে তাদের কাছে অস্ত্র পাঠানো হবে।
তবে গোপন অভিযান চালিয়েই থামছে না ব্রিটেন। পাশাপাশি আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য তৈরি করছে ইরাকি সেনা ও কুর্দ বাহিনীকে। আগামী বছর অন্তত ২০ হাজার ইরাকি ও কুর্দ সেনা আইএসের উপর হামলা চালাবে বলে জানিয়েছে ওই দৈনিক। সেই হামলার প্রশিক্ষণ দিচ্ছে ব্রিটেন। অস্ত্র সরবরাহও করবে তারা। এমনকী হামলার সময় ইরাকি সেনা ও কুর্দ বাহিনীর পাশেও থাকবে ব্রিটেন। আর সেই ভবিষ্যৎ হামলার মুখে যাতে সংগঠিত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে না পারে আইএস, সে জন্যই চোরাগোপ্তা হামলা চালিয়ে জঙ্গিঘাঁটিগুলি নষ্ট করে দিতে শুরু করেছে স্যাস। আগামী চোদ্দো দিনের এই গোপন হামলার অভিযানের রিপোর্ট হাত পাবেন ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী মাইকেল ফ্যালন।
তবে লাগাতার হামলা সত্ত্বেও যে দমছে না আইএস জঙ্গিরা, তা শনিবার ফের স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। ইরাকের রামাদির একটি গ্রাম থেকে অলবু ফহদ উপজাতির ২৫ জনের দেহ পেয়েছে ইরাকি সেনা। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, আইএসের বিরোধিতা করায় ওই সুন্নি মুসলিম উপজাতির ২৫ জনকে খুন করেছে জঙ্গিরা। গত মাসে একই ভাবে আনবার প্রদেশের অলবু নিমর উপজাতির শতাধিক সদস্যকে খুন করেছিল জঙ্গিরা। এই গণহত্যার পরও আমেরিকা ও ব্রিটেন আইএস দমনে ভরসা করছে উপজাতিদের উপরই। মার্কিন কংগ্রেসে এ নিয়ে একটি প্রস্তাবও পেশ করা হতে পারে বলে খবর। তাতে বলা হয়েছে, এই সুন্নি উপজাতিদের হাতে একে-৪৭, রকেট ছুড়তে সক্ষম গ্রেনেড ও মর্টার তুলে দেবে আমেরিকা। যাতে কি না কুর্দ ও ইরাকি সেনার পাশাপাশি তারাও লড়াই চালাতে পারে।