হংকংয়ে পুলিশি তৎপরতা। ছবি— রয়টার্স।
চিনা কমিউনিস্ট পার্টির শতবর্ষ উপলক্ষে সে দেশের শীর্ষ নেতারা দেশজুড়ে কমিউনিস্ট আদর্শের জয়গান গাইছেন। পশ্চিমি দুনিয়ার কাছে দলের উদার, আদর্শবাদী মুখ তুলে ধরতেও চেষ্টার কসুর করছেন না। অথচ নিজেদের দেশে তাঁরাই নবীন প্রজন্মের ‘আদর্শ’ নিয়ে উদ্বিগ্ন! অন্তত চিন-পন্থী বলে পরিচিত, হংকংয়ের প্রশাসক ক্যারি লামের বক্তব্যে তা স্পষ্ট। তিনি জানিয়েছেন, জাতীয় নিরাপত্তা অক্ষুণ্ণ রাখার পথে
হংকংয়ের অধিবাসীদের একাংশের ‘আদর্শই’ তাঁর বড় চিন্তা। বাবা-মা, শিক্ষক থেকে ধর্মীয় নেতা — সকলের উদ্দেশে তাঁর বার্তা, কিশোর-কিশোরীদের হাবভাবের দিকে নজর রাখতে হবে। বস্তুত, সাপ্তাহিক সাংবাদিক বৈঠকে লাম এই কথা বলার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই হংকং পুলিশ জানায়, শহর জুড়ে বোমা বিস্ফোরণের ষড়যন্ত্রের অভিযোগে ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৬ জন আবার হাইস্কুলের পড়ুয়া!
হংকংয়ে চিনা আধিপত্যের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়েই মাথাচাড়া দিয়েছে আমজনতার ক্ষোভ। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই বিরোধী আদর্শের কথাই এ দিন বলতে চেয়েছেন লাম। হংকং থেকে সন্দেহভাজন অপরাধীদের চিনে প্রত্যর্পণের বন্দোবস্ত রাখা হয়েছিল যে বিতর্কিত বিলটিতে, প্রবল বিক্ষোভের মুখে সেটি বাতিল করতে বাধ্য হয়েছিলেন তিনি। তার পরেও হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইন পাশ হয়েছে। বিচ্ছিন্নতাবাদ, চিন সরকারের বিরোধিতা, সন্ত্রাসবাদী কাজকর্ম, জাতীয় সুরক্ষা বিপন্ন করতে বিদেশিদের সঙ্গে জোট বাঁধার মতো অপরাধের শাস্তির ব্যবস্থা করা হয়েছে নয়া আইনে। হংকংয়ের রাজনৈতিক আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, ওই আইন আদতে তাঁদের দমন করার কাজেই ব্যবহার করা হবে।
গত ১ জুলাই হংকংয়ে ৫০ বছরের এক ব্যক্তি এক পুলিশকে ছুরি মারার পরে আত্মহত্যা করেন। পুলিশের দাবি, এটি ‘লোন উল্ফ’ কায়দায় জঙ্গি হামলা। গত শুক্রবার সেই হামলার জায়গায় বেশ কিছু মানুষ জড়ো হয়ে ফুল দিয়ে নিহত হামলাকারীকেই শ্রদ্ধা জানান বলে সরকারপক্ষের অভিযোগ। আজ তা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করে লাম বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে সাধারণ মানুষ বেআইনি পথে ভুল ধারণার বশবর্তী হয়ে চলেছেন।’’ তাঁর মন্তব্য, জাতীয়
নিরাপত্তার সামনে ‘আদর্শই’ অন্যতম বিপদ। লামের এই বক্তব্যের ঘণ্টাখানেক পরে পুলিশ জানায়, ‘জঙ্গি কার্যকলাপে বিস্ফোরক ব্যবহারের ষড়যন্ত্র’ করার অভিযোগে ৬ স্কুলপড়ুয়া-সহ ৯ জনকে গত কাল গ্রেফতার করেছে তারা। এদের বয়স ১৫ থেকে ৩৯ বছরের মধ্যে। রয়েছে চারটি মেয়ে। সকলেই ‘রিটার্নিং ভ্যালিয়েন্ট’ নামে একটি স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীর সদস্য। স্কুলপড়ুয়ারা ছাড়া বাকি তিন জনের মধ্যে দু’জন স্থানীয় একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও স্কুলের কর্মী। এক জন গাড়িচালক। প্রশাসনে চিনপন্থী বলে পরিচিত জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সুপারিন্টেন্ডেন্ট স্টিভ লি-র দাবি, ‘‘গ্যাংস্টারেরা হস্টেলের মধ্যে অস্থায়ী পরীক্ষাগারে উচ্চ ক্ষমতার বিস্ফোরক টিএটিপি বা ট্রাইঅ্যাসিটোন ট্রাইপারক্সাইড তৈরির চেষ্টা করছিল। তাদের পরিকল্পনা ছিল সমুদ্রের তলার সুড়ঙ্গপথ, রেলপথ, আদালত কক্ষের মতো জায়গায় বিস্ফোরণ ঘটানো।’’