উহানের গবেষণায় আমেরিকার জড়িত থাকার অভিযোগও উঠেছিল। প্রতীকী ছবি।
নোভেল করোনাভাইরাস বা সার্স কোভ-২ ‘মানুষের তৈরি’। এমনটাই দাবি করলেন আমেরিকান গবেষক অ্যান্ড্রু হাফ। আরও জানালেন, দু’বছর আগে চিন সরকার পরিচালিত ‘উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি’-র গবেষণাগার থেকেই সেটি কোনও ভাবে বেরিয়েছিল। একটি ব্রিটিশ সংবাদপত্রকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এই দাবি করেছেন তিনি। পরে তাঁর কথা প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকার একটি প্রথম সারির দৈনিকেও।
উহান ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অতীতে কাজ করেছেন এপিডিমিয়োলজিস্ট হাফ। তাঁর সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে একটি বই প্রকাশ করেছেন সম্প্রতি। নাম ‘দ্য ট্রুথ অ্যাবাউট উহান’। লেখক হাফের দাবি, এই অতিমারির পিছনে রয়েছে চিন ও আমেরিকা। আমেরিকা সরকারের দেওয়া অর্থ ও জৈবপ্রযুক্তিতেই করোনাভাইরাস নিয়ে গবেষণা চলেছিল চিনে। ভাইরাসটি ল্যাব থেকে ছড়িয়ে পড়ার কারণ, গবেষণাগারে উপযুক্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না।
অতিমারির শুরু থেকেই চিনের উহান ইনস্টিটিউট বিতর্কের শিরোনামে। ২০১৯ সালের একেবারে শেষে উহানে প্রথম করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ে। এ জন্য চিনকে কাঠগড়ায় তোলা হয়েছিল। কিন্তু চিন সরকার কিংবা উহানের গবেষকেরা, কেউই সেই অভিযোগ মানেনি। চিনের দাবি ছিল, তাদের দেশে ভাইরাসটি চিহ্নিত হয়েছে মাত্র। উৎস অন্য কোনও দেশ। তাদের ইঙ্গিত স্পষ্টতই ছিল আমেরিকার দিকে। এর মধ্যে রাষ্ট্রপুঞ্জ একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছিল চিনে। কিন্তু বিশেষজ্ঞেরা ফিরে এসে ক্লিন চিট দিয়ে দেন উহান ইনস্টিটিউটকে। তাতেও উহান নিয়ে সন্দেহ যায়নি। উহানের গবেষণায় আমেরিকার জড়িত থাকার অভিযোগও আগে উঠেছিল। যদিও বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। চিনের ‘পাল্টা অভিযোগ’ হিসেবেই দেখা হয়েছিল মাত্র।
অ্যান্ড্রু হাফ তাঁর বইয়ে বলেছেন, ‘‘বায়োসেফটি, বায়োসিকিয়োরিটি বা অন্যান্য বিপদ সামলানোর মতো ব্যবস্থাপনা বিদেশি গবেষণাগারটিতে ছিল না। তার জন্যই ‘উহান ইনস্টিটিউট অব ভাইরোলজি’-র ল্যাব থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছিল।’’
এক দশকেরও বেশি সময় ধরে উহান ইনস্টিটিউট বাদুড়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের করোনাভাইরাস নিয়ে কাজ করছে। সংস্থাটিকে অর্থসাহায্য করে গিয়েছে আমেরিকান সরকারের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেল্থ’ (এনআইএইচ)। এরা বিভিন্ন ধরনের বায়োমেডিক্যাল রিসার্চে অংশ নেয়। হাফ ২০১৪ থেকে ২০১৬ ‘ইকোহেল্থ অ্যালায়েন্স’ নামে একটি আমেরিকান অলাভজনক সংস্থায় কাজ করেছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, এই সংস্থাটি বহু বছর ধরে উহান ল্যাবের সঙ্গে কাজ করেছিল। তাদের কাজই ছিল বাদুড়ের নতুন করোনাভাইরাস প্রজাতি তৈরি করা। লক্ষ্য ছিল, বায়োইঞ্জিনিয়ারিংয়ের মাধ্যমে এমন সব প্রজাতি তৈরি করা, যারা পৃথিবীতে থাকা বিপজ্জনক ভাইরাস ধ্বংস করতে পারে। হাফ তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ‘‘চিন প্রথম দিন থেকে জানত, গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া ভাইরাসটি জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ারড। তবে চিনের হাতে এমন বিপজ্জনক জৈবপ্রযুক্তি তুলে দেওয়ার জন্য আমেরিকা সরকারের উপরেও দায় বর্তায় ।’’