সরস্বতী পুজোর জোগাড়ে বেজিংবাসী বাঙালিরা। —নিজস্ব চিত্র।
কথায় বলে, দশ জন বাঙালি এক জায়গায় হলে দুর্গাপুজোর আয়োজন করে। চিন দেশে দুর্গাপুজোর আয়োজন বাঙালি আগেই করেছে। এ বার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে বাচ্চাদের হাতেখড়ি দেওয়ার। আর জায়গাও পাওয়া গিয়েছে জব্বর। পূর্ব মেদিনীপুরের এক সন্তান একেবারে চিনের রাজধানী বেজিংয়ে চালু করতে চলেছেন এক ভারতীয় রেস্তরাঁ। সরস্বতী পুজোর দিনে দুই কাজই এক সঙ্গে হবে।
৫ ফেব্রুয়ারি বেজিংয়ে শেফ রবিউল বক্সের রেস্তরাঁর উদ্বোধন হবে। দিঘার কাছে রবিউলের বাড়ি। সাড়ে চার বছর বেজিংয়ে রয়েছেন। শেফ হিসাবে কাজ করতেন এক বহু তারকাখচিত হোটেলে। তার আগে বছর দেড়েক দক্ষিণ চিনের একটি হোটেলে কাজ করেছেন। এ বার নিজেই রেস্তরাঁ খুলছেন। চেয়েছিলেন, বাঙালিদের কোনও উৎসব দিয়ে তাঁর রেস্তরাঁ খোলা হোক। রবিউল বলেন, ‘‘দেখা গেল, সামনে সরস্বতী পুজো রয়েছে। আলোচনা করলাম এখানকার পরিচিত বাঙালিদের সঙ্গে। সিদ্ধান্ত হল, ওই দিনই রেস্তরাঁর উদ্বোধন করব।’’
এই পুজোর পুরোহিত এবং অন্যতম আয়োজক অমিত চক্রবর্তী জানালেন, বেজিংয়ে গত তিন বছর ধরে আরও একটি সরস্বতী পুজো হয় কিন্তু এই পুজোটি তাঁরা আরও বড় করে করতে চাইছেন। অমিত বেজিংয়ের একটি গাড়ি প্রস্তুতকারী সংস্থার তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগে কাজ করেন। বললেন, ‘‘রবিউল চাইছিল, ওর হোটেলের উদ্বোধন কোনও বাঙালি উৎসব দিয়ে হোক। এ দিকে এখানকার কয়েকটি বাঙালি বাচ্চার হাতেখড়ি হওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। তাই ঠিক হয়, সামনেই সরস্বতী পুজো। দুই কাজই এক দিনে হওয়া সম্ভব।’’ অমিতের মেয়ে রাইয়েরও ওই দিন হাতেখড়ি হবে। ইতিমধ্যে প্রায় আড়াই ফুট মাপের ধাতুর তৈরি সরস্বতী প্রতিমার জোগাড় হয়ে গিয়েছে। এর সঙ্গে বড় ছবি দিয়ে তা বাঁধিয়ে পুজোর মঞ্চে রাখা হবে।
অমিতের সঙ্গে এই উদ্যোগে রয়েছেন ওঁর স্ত্রী জয়িতা। এ ছাড়া, বেশ কয়েক বছর ধরে বেজিংয়ের প্রবাসী বারাসতের সৌম্যদীপ এবং সোমা মহলানবীশ, কসবার রঞ্জন এবং রেশমী দত্ত, কসবার লিজা মহন্ত, চন্দননগরের জয়দীপ মহন্তরা। সকলে এক হয়ে আপাতত সরস্বতী পুজোর আয়োজনে ব্যস্ত। তৈরি করা হবে রসগোল্লা, কালাকাঁদ, পাটিসাপ্টা, নারকেল নাড়ু। থাকবে আলু কাবলি, ফুচকাও। শেষ দু’টির দায়িত্বে স্বয়ং শেফ রবিউল।
শুধুই পুজো নয়। এর সঙ্গে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চস্থ করার প্রস্তুতিও চলছে। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য ভারতীয় দূতাবাস থেকে শিল্পীরা আসবেন। বেজিংয়ের স্থানীয় শিল্পীদেরও ডাকা হচ্ছে। অমিত জানালেন, ভারতীয় দূতাবাস থেকে অতিথি হিসাবেও বেশ কয়েক জনকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
করোনার আতঙ্ক পেরিয়ে কিছুটা পারস্পরিক মেলামেশার মাধ্যমে আনন্দ মেতে উঠতে চাইছেন বেজিংয়ের বাঙালিরা। অমিত জানালেন, বেজিংয়ে এখন করোনার প্রকোপ প্রায় নেই। ফেব্রুয়ারির প্রথমেই চিনা নববর্ষ আসছে। সতর্ক প্রশাসন। এখন তাই ব্যাপক ভাবে করোনার পরীক্ষা হচ্ছে। এরই মধ্যে আসছে সরস্বতী পুজো। অমিতরা উদ্গ্রীব তা পালনের জন্য।