জয়শঙ্কর এবং সের্গেই লাভরভ সাক্ষাত। ছবি রয়টার্স।
দু’দিনের সফরে রাশিয়া পৌঁছলেন বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। চরম টালমাটালে ভরা এই ভূকৌশলগত পরিস্থিতিতে তিনি কাল বৈঠক করবেন রাশিয়ার বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং উপপ্রধানমন্ত্রী দানিস মান্তুরভের সঙ্গে। বিশ্ব জুড়ে এই জ্বালানি সঙ্কটের মধ্যে চলতি সফরে সস্তায় কতটা অশোধিত তেল রাশিয়া থেকে ভারত আমদানি করতে পারে, তা নির্ভর করছে জয়শঙ্করের দৌত্যের উপর। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন দৌত্যের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতাকারী হিসাবে নয়াদিল্লির ভূমিকা এই সফরের আগেই কিছুটা লঘু হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছে কূটনৈতিক শিবির।
গত মাসে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে ফোনে কথা বলে কূটনীতির রাস্তায় ফেরার অনুরোধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সূত্রের খবর, সেই প্রস্তাবে মুখের উপর না বলে দিয়েছেন জ়েলেনস্কি। তাঁর অফিসসূত্রে জানা গিয়েছে, ইউক্রেন প্রেসিডেন্ট মোদীকে বলেছেন, ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে শান্তি ফেরানোয় আগ্রহী ঠিকই। কিন্তু রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কোনও আলোচনায় জ়েলেনস্কি বসবেন না। কারণ পুতিন উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে সংলাপের রাস্তা বন্ধ করে রেখেছেন।
কূটনৈতিক শিবিরের মতে, মধ্যস্থতা তখনই কেউ করতে পারে যখন বিবদমান দু’পক্ষের মধ্যেই মধ্যস্থতাকারীর প্রভাব থাকে। ভারতের রাশিয়ার সঙ্গে প্রাচীন সখ্য এবং প্রভাব আজও যথেষ্ট পরিমাণ থাকলেও নয়াদিল্লির সঙ্গে ইউক্রেনের সম্পর্ক অনেকটাই ফিকে। বিদেশ মন্ত্রক বলছে, “আমরা তখনই মধ্যস্থতাকারী হিসাবে সফল হব, যখন দু’পক্ষই আমাদের কূটনৈতিক সততা সম্পর্কে নিঃসন্দেহ হবে। এ ক্ষেত্রে আস্থার অভাব রয়েছে। আর পুতিনকে বাদ দিয়ে কোনও মধ্যস্থতা কার্যকর হবে না।”
আমেরিকা-সহ পশ্চিম বিশ্ব প্রায় আট মাস ধরে ভারত মধ্যস্থতা করানোর জন্য প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে অনুরোধ করে যাচ্ছে। ভিয়েতনাম, ইজ়রায়েল, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরশাহির সঙ্গেও রাশিয়ার সম্পর্ক ভাল। তাদেরকেও মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজে লাগানোর চেষ্টা হয়েছিল। ইজ়রায়েলের সঙ্গে ইউক্রেনের ইহুদি-সংযোগও রয়েছে। কিন্তু কূটনৈতিক মহল বলছে, এই দেশগুলির কারও এখনও পর্যন্ত রাশিয়ার উপরে সেই প্রভাব নেই, যা কিনা ভারতের আছে। কিন্তু ইউক্রেনের সঙ্গে সূর্যমুখী তেল, সে দেশের কিছু মেডিক্যাল কলেজ এবং আন্তোনভ মালবাহী বিমান ছাড়া দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য কিছু নেই যে কিভ নয়াদিল্লির কথায় প্রভাবিত হবে। ভারত ও ইউক্রেনের রাষ্ট্রনেতারা কবে একে অন্যের দেশ সফর করেছেন, তা জানতে ইতিহাসের ধুলো ঘাঁটতে হবে।
এ বার যুদ্ধে পরমাণু হুমকি চলে আসায় আসরে নেমেছে আমেরিকা। সোমবার ওয়াশিংটন পোস্টের একটিপ্রতিবেদন প্রকাশের পরে হইচই পরে গিয়েছে। এই রিপোর্টে বলা হয়েছে, আমেরিকায় অন্তর্বর্তী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের ফলাফল ভাল না-হওয়ারই পূর্বাভাস। সেই ক্ষেত্রে জো বাইডেনের পক্ষে একই রকম ভাবে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ায় মদতপ্রদান এবং ইউক্রেনকে ডলার দেওয়ার প্রশ্নে সেনেটের ভিতর থেকেই বিরোধিতা আসবে।
ওয়াশিংটন পোস্টের দাবি, ‘রাশিয়ার সঙ্গে খোলা মনে আলোচনায় বসার জন্য বাইডেন প্রশাসন গোপনে ইউক্রেনকে চাপ দেওয়া শুরু করেছে। পুতিনকে ক্ষমতাচ্যূত না-করা হলে আলোচনায় বসব না, এই অনড় মনোভাব ত্যাগ করতে বলা হচ্ছে জ়েলেনস্কিকে।’ ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হচ্ছে, ‘ইউক্রেন পরিস্থিতি নিয়ে বাইডেন প্রশাসনের অবস্থান ক্রমশই জটিল হচ্ছে। সংঘাতের নিরসন হবে এই ধরে নিয়ে আমেরিকা প্রবল ভাবে অর্থ ঢেলে গিয়েছে আট মাস। পরিণামে বিশ্বের অর্থনীতি কোণঠাসা হয়েছে, পরমাণু হামলার বিপদও বাড়ছে।’ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওয়াশিংটনের এক কর্তার কথায়,“ইউক্রেন নিয়ে ক্লান্তিজনিত পীড়া এসেযাচ্ছে আমাদের অনেক বন্ধু রাষ্ট্রের।”
শীর্ষ কূটনৈতিক সূত্রের খবর, চেষ্টা চলছে ইন্দোনেশিয়ার বালিতে ১৫ তারিখ শুরু হওয়া জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনে বাইডেন-পুতিন শীর্ষ পর্যায়ের পার্শ্ব বৈঠক করানোর। এক কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞর কথায়, “এই সংঘাত থামাতে রাশিয়া এবং আমেরিকাকে এক টেবিলে আসতে হবে, কথা বলতে হবে।”