মোমের আলোয় ঘুরে দাঁড়ানোর সংকল্প। ছবি— রয়টার্স।
একটা যুদ্ধ বদলে দিয়েছে জীবন। প্রবল শক্তিধর রাশিয়া বিপুল শক্তি নিয়ে গত ফেব্রুয়ারিতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ইউক্রেনের উপর। তার পর দানিয়ুব দিয়ে বহু জল বয়ে গিয়েছে ঠিকই কিন্তু যুদ্ধ থামেনি। যুদ্ধের ধাক্কায় ভেঙে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। কিন্তু মনের জোর ভাঙা যায়নি ইউক্রেনীয়দের। অন্ধকার কিভে মোমের আলোয় চলছে নৈশভোজ। রোমান্টিক নয়, এই দৃশ্যেই ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন বুনছে জেলেনস্কির দেশ।
কিভের অন্যতম জনপ্রিয় রেস্তরাঁ ‘টিনটিন ফুড স্পট’। সেখানেই নৈশাহার সারতে গিয়েছিলেন ২০ বছরের ভিক্টোরিয়া। তাঁর কাছে মোমের আলোয় রাতের খাবারের অর্থ কী? ২০ বছরের তরুণী বলেন, ‘‘সত্যি বলতে এ ভাবে একসঙ্গে বসে খাওয়া আমাদের আরও দৃঢ় করেছে। কোনও সন্দেহ নেই, এটি একটি অত্যন্ত রোমান্টিক ব্যাপার। মোমের আলোয় দুর্দান্ত আবহ তৈরি হয়। এটাই আমাদের মেরুদণ্ডকে আরও শক্তি দিচ্ছে।’’
আর রেস্তরাঁর ম্যানেজার ৩০ বছরের অ্যানিয়া বলেন, ‘‘রাশিয়ার উদ্দেশ্য কোনও দিন সফল হবে না। ওরা কিছুই করতে পারবে না। এ ভাবে মোমের আলোয় নৈশভোজ সারার মধ্যে দিয়ে আমার সমস্ত অভ্যাগতরা আরও এক বার বুঝিয়ে দিচ্ছেন, আঘাত যতই আসুক, আমরা মাথা নিচু করব না।’’
বস্তুত, সম্প্রতি রণকৌশল বদলে বিমানহানা শুরু করেছে মস্কো। চলছে রকেট হামলাও। এই কারণেই শহরের সমস্ত আলো নিভিয়ে রাখা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে রাশিয়ার হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলোও ধুঁকছে। এই পরিস্থিতিতে আঁধারে আলো হয়ে উঠেছে মোমবাতি।
প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি স্বীকার করে নিয়েছেন, গত ১০ অক্টোবর থেকে রাশিয়ার বিমানহানায় দেশের ৩০ শতাংশ বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস হয়েছে। দেশবাসীর কাছে যতটা কম সম্ভব বিদ্যুৎ ব্যবহারের আর্জিও জানিয়েছেন তিনি। সেই মতোই শহর ও গ্রামে আলো নিভিয়ে জীবন কাটাচ্ছেন ইউক্রেনীয়রা। তাই রেস্তরাঁয় মোমের আলোয় চলছে জমজমাট নৈশভোজ।
সাধারণত, মোমের আলো রোমান্টিক আবহ তৈরিতে নির্বিকল্প। কিন্তু যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেন, সেই মোমের আলোকেই বদলে ফেলেছে প্রত্যয় আরও দৃঢ় করার সংকল্পে। নতুন করে জোট বাঁধার প্রতিজ্ঞায়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে শত্রুর মোকাবিলায় ব্যারিকেড তৈরিতে।