Russia Ukraine War

Russia Ukraine War: বিশ্বে প্রায় একঘরে মস্কো, নিষেধাজ্ঞার জেরে আর্থিক মন্দার আশঙ্কায় কাঁপছে রাশিয়া

যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানাচ্ছে সব দেশই। মস্কোর পাশে রয়েছে একমাত্র চিন ও বেলারুস। তাদের উপরেও চাপ বাড়ানো হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০২২ ০৬:২৭
Share:

রাশিয়ার বোমারু বিমানগুলি ধ্বংস করে দিয়েছে মারিয়ুপোলের এই আবাসন। সেই ধ্বংস হয়ে যাওয়া আবাসনের সামনে দাঁড়িয়ে এক বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার। ছবি রয়টার্স।

রাশিয়ার বোমা থেকে প্রাণ বাঁচাতে কমপক্ষে ১০০০ থেকে ১২০০ মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন স্থানীয় থিয়েটারে। বোমা পড়ল সেখানেই। ইউক্রেনের মারিয়ুপোলের ঘটনা। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, হতাহতের খবর স্পষ্ট নয়। তবে আশা করা হচ্ছে, বেসমেন্টে লুকিয়ে ছিলেন সকলে। বোমায় থিয়েটার ভবনটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলেও মাটির তলার বাঙ্কার হয়তো ভেঙে পড়েনি। সেক্ষেত্রে ইট-কাঠ-পাথরের স্তূপের তলায় হয়তো বেঁচে রয়েছে অনেক প্রাণই। শর্তসাপেক্ষে যুদ্ধ থামাতে ‘আগ্রহ’ প্রকাশ করলেও রাশিয়ার হামলা বন্ধ করার কোনও লক্ষণ নেই।

Advertisement

শহরের প্রশাসনিক কর্তা পেত্রো অ্যান্ড্রিশচেঙ্কো জানিয়েছেন, লাগাতার গোলাবর্ষণ চালিয়ে যাচ্ছে রুশ বাহিনী। তাই ঘটনাস্থলে পৌঁছতে গিয়ে বিপাকে পড়ছে প্রশাসনের উদ্ধারকারী দল। মারিয়ুপোলের সিটি কাউন্সিল একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, রুশরা জানে সাধারণ মানুষ গির্জা, স্কুল কিংবা থিয়েটারের মতো জায়গায় আশ্রয় নিচ্ছে। তাই জেনেবুঝে ওই থিয়েটারে বোমা ফেলেছে ওরা। পাশাপাশি চেরনিহিভ শহরে রুশ হামলায় তাদের এক নাগরিক মারা গিয়েছেন বলে জানিয়েছে আমেরিকা। সাংবাদিক ও চলচ্চিত্র নির্মাতা ব্রেন্ট রেনোর পরে ইউক্রেনের যুদ্ধে দ্বিতীয় আমেরিকান নিহত হলেন।

বিশ্বে প্রায় একঘরে রাশিয়া। যুদ্ধ বন্ধের দাবি জানাচ্ছে সব দেশই। মস্কোর পাশে রয়েছে একমাত্র চিন ও বেলারুস। তাদের উপরেও চাপ বাড়ানো হচ্ছে। গত কাল রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক আদালত নির্দেশ দিয়েছে, অবিলম্বে যুদ্ধ বন্ধ করতে হবে রাশিয়াকে। না-হলে তাকে আরও কোণঠাসা করে দেওয়া হবে। একের পর এক আর্থিক নিষেধাজ্ঞায় এমনিতেই জেরবার রাশিয়ার অর্থনীতি। শীঘ্রই মন্দা নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় কাল রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন জানিয়েছিলেন, ইউক্রেনের ‘নিরপেক্ষ অবস্থান’ ঘোষণার প্রেক্ষিতে তাঁরা সমঝোতা করতে রাজি। শান্তি চুক্তিরও ইঙ্গিত মিলেছিল পুতিনের কথায়। যদিও আজ যুদ্ধ বন্ধের কোনও লক্ষণ চোখে পড়ল না। রুশ প্রেসিডেন্টকে বারবারই ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলে চলেছে ইউক্রেন। আজ মারিয়ুপোলের ঘটনার পরে বিদেশমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা ফের একই কথা বলেন। কিন্তু এই প্রথম এ কথা শোনা গেল আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মুখেও। পুতিনকে তিনিও আজ ‘যুদ্ধাপরাধী’ বলেন। ওয়াশিংটনে এক সাংবাদিক বৈঠকে তাঁকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, ‘‘সব কিছু দেখার পরে আপনি কি পুতিনকে যুদ্ধাপরাধী ঘোষণা করতে প্রস্তুত?’’ জবাবে বাইডেন বলেন, ‘‘আপনি জানতে চাইছেন, আমি এ রকম কিছু বলব কি না? আমি মন থেকে বলছি, উনি একজন যুদ্ধাপরাধী।’’ পরে হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জেন সাকি বলেন, ‘‘ইউক্রেনের মানুষের সঙ্গে যে বর্বরতা, নৃশংসতা ঘটছে, তা দেখে মন থেকেই এই মন্তব্য করেছেন প্রেসিডেন্ট।’’

Advertisement

বাইডেনের কথায় ক্ষুব্ধ ক্রেমলিন। তাদের হুঙ্কার— ‘‘এ সব মেনে নেওয়া যায় না। ক্ষমার অযোগ্য।’’ আমেরিকার সমালোচনা করে রাশিয়া বলেছে, ‘‘পৃথিবীতে কয়েকশো হাজার মানুষকে যুদ্ধের নামে হত্যা করেছে ওরা।’’ পুতিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেন, ‘‘একটা দেশ, যারা কি না গোটা বিশ্বে কয়েকশো হাজার মানুষকে খুন করছে, সে দেশের প্রধানের মুখে এ ধরনের মন্তব্য মেনে নেওয়া যায় না।’’

যুদ্ধের শুরুতেই রাশিয়া ফতোয়া জারি করেছিল, ইউক্রেনের সমর্থনে যারা মুখ খুলবে, তাদেরও দাম দিতে হবে। গোড়ায় অনেকেই তাই সমঝে চলছিল। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে এক-এক করে ইউরোপের বহু দেশই ইউক্রেনের পাশে। এর মধ্যে অন্যতম চমক, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের রাজধানী কিভে হাজির হলেন তিন পড়শি দেশের প্রধানমন্ত্রী। পোল্যান্ড, স্লোভেনিয়া ও চেক প্রজাতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রীরা কিভে এসে দেখা করে গিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে। পোল্যান্ড সীমান্ত থেকে তাঁরা ট্রেনে করে কিভে পৌঁছন। এক দিন কিভে ছিলেন তাঁরা। গত কাল ফিরে যান। তাঁদের অসীম সাহসিকতাকে বাহবা জানিয়েছে ইউক্রেন। জ়েলেনস্কি বলেছেন, ‘‘আপনাদের এই সফর ইউক্রেনের সমর্থনে এক শক্তিশালী পদক্ষেপ।’’ জবাবে তিন রাষ্ট্রনেতাই জানিয়েছেন, ইউক্রেন ‘একা নয়’। বরাবরই ইউক্রেনকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছে পড়শি দেশ পোল্যান্ড। রুশ হুমকির মুখেও তারা উদ্ধারকাজে সাহায্য করেছে, অস্ত্র পাঠিয়েছে, ত্রাণও পাঠিয়েছে।

আজ পোল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ম্যাথিউজ়ি মোরাউইকি টুইট করেন, ‘‘ইউরোপকে মনে করিয়ে দিচ্ছে ইউক্রেন, সাহসিকতা কাকে বলে। এই অবক্ষয়ের সময়ে ইউরোপ আবার জেগে উঠুক। সব বাধা ভেঙে ইউক্রেনকে আশার আলো দেখাক।’’

গত কাল আমেরিকান কংগ্রেসের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের পরে আজ জার্মান এমপিদের সামনে নিজের বক্তব্য রাখেন জ়েলেনস্কি। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘বার্লিনের প্রাচীরের মতো ইউরোপেও নতুন ধরনের দেওয়াল তোলা হচ্ছে। স্বাধীন ও নিপীড়িত, এই দুই ভাগে ভেঙে দেওয়া হচ্ছে ইউরোপকে।’’ আরও এক ধাপ এগিয়ে জ়েলেনস্কি জানান, ইউক্রেনের ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়া নিয়ে জার্মানি যে ভাবে অনিচ্ছা প্রকাশ করে গিয়েছে, সেটাই হল এই প্রাচীরের ‘সিমেন্ট’। তা ছাড়া, জার্মান শিল্পপতিরা এখনও রাশিয়ায় ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। গ্যাসের পাইপ লাইন তৈরি নিয়ে কথা চলছে। এই বিষয়গুলিকেও ইউরোপকে দ্বিধাবিভক্ত করার কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন জ়েলেনস্কি।

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, ‘‘ইউক্রেনে ১০৮টি শিশু প্রাণ হারিয়েছে। প্রতি বছর রাষ্ট্রনেতারা হলোকস্ট নিয়ে কথা বলেন, নাৎসি অত্যাচারের নিন্দা করেন, কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে সব কথার কোনও মূল্য নেই।’’ তাঁর এই ধরনের ধারালো মন্তব্যের পরেও জার্মান পার্লামেন্টের সদস্যেরা ওঠে দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানান ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্টকে। যদিও এর পরেই ইউক্রেন প্রসঙ্গ নিয়ে চর্চা না করে কোভিড টিকাকরণ ও অন্যান্য দেশীয় সমস্যা নিয়ে আলোচনায় ঢুকে যায় পার্লামেন্ট। জানাজানি হয়েছে সে খবরও।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement