ভ্লাদিমির পুতিন। — ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রপুঞ্জের পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ ঘোষণা আটকে দিল রাশিয়া। বিশ্বে পরমাণু অস্ত্র ছড়িয়ে পড়া রুখতে প্রতি পাঁচ বছর এই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তিটি খতিয়ে দেখেন ১৯১ জন স্বাক্ষরকারী। এ বারে ইউক্রেনের জ়াপোরিজিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রে সামরিক কার্যকলাপের অভিযোগ তুলে রাষ্ট্রপুঞ্জের ঘোষণাপত্রের বিরোধিতা করলেন রুশ প্রতিনিধি। ঘোর উদ্বেগও প্রকাশ করলেন তিনি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার অল্প দিনের মাথাতেই জ়াপোরিজিয়া পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র অঞ্চলটি দখল করে নেয় রাশিয়া। তার পর থেকে এটি তাদের দখলে। ইউক্রেনের অভিযোগ, রাশিয়া এই কেন্দ্রটিকে সামরিক ঘাঁটি বানিয়ে তুলেছে। মস্কোর বাহিনী এই কাজ করছে, কারণ তারা জানে, এখানে ইউক্রেন পাল্টা হামলা চালাতে পারবে না। রাশিয়ার অভিযোগ, ইউক্রেন হামলা চালাচ্ছে পরমাণু কেন্দ্রটি লক্ষ্য করে। রাষ্ট্রপুঞ্জের বৈঠকে রাশিয়া ফের সেই অভিযোগই তুলেছে।
শেষ বার ২০১৫ সালেও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষর করতে একমত হতে পারেনি রাষ্ট্রপুঞ্জ। ২০২০ সালে পরবর্তী বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অতিমারির জন্য তা পিছিয়ে যায়। অবশেষে ২০২২ সালে বৈঠক বসল। টানা চার সপ্তাহ ধরে নিউ ইয়র্কে সম্মেলন চলার পরে শেষমেশ এ বারেও পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ চুক্তি স্বাক্ষরে ব্যর্থ হল রাষ্ট্রপুঞ্জ।
অস্ট্রেলিয়ার বিদেশমন্ত্রী পেনি ওং বলেন, ‘‘খুবই হতাশাজনক। ঘোষণাপত্রের বয়ান নিয়ে সকলে সম্মতি প্রকাশ করেছিল। কিন্তু রাশিয়া এই চুক্তিপত্রে সই করতে আপত্তি প্রকাশ করল।’’ রাষ্ট্রপুঞ্জে আমেরিকার প্রতিনিধি বনি জেনকিন্স বলেছেন, ‘‘এত আলোচনার এই ফল গভীর হতাশার। আরও এই কারণে যে, আজ আমাদের এখানে আসতেই হয়েছে রাশিয়ার কার্যকলাপের জন্য।’’
ঘোষণাপত্রের বয়ানের একাংশ নিয়ে আপত্তি রয়েছে রাশিয়ার। ইউক্রেনের পরমাণু শক্তি কেন্দ্রগুলি নিয়ে আপত্তি রয়েছে তাদের। তাদের বক্তব্য, জ়াপোরিজিয়ার কেন্দ্রটি-সহ অন্যান্য ইউক্রেনীয় পরমাণু শক্তি কেন্দ্রগুলি নিয়ে তারা চিন্তায়। রুশ প্রতিনিধি ইগর ভিশনেভেতস্কি বলেন, ‘‘ওই চুক্তির বয়ানে সমতা ছিল না।’’ তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের প্রতিনিধি দলের মূল আপত্তি চুক্তিপত্রের বয়ানের কিছু প্যারাগ্রাফ নিয়ে। ভীষণই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ।’’ চুক্তিপত্রটি সফল হতে হলে সকলের স্বাক্ষর প্রয়োজন ছিল। এ দিনের ঘটনায় হতাশা প্রকাশ করেছে চিনও। বেজিংয়ের দূত বলেছেন, ‘‘সকলের নিরাপত্তার জন্য এটি জরুরি ছিল।’’
আজই রাশিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ জানিয়েছেন, ইউক্রেন যদি নেটোতে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা প্রত্যাখ্যানও করে, তাতেও সেনা আগ্রাসন থামবে না। মেদভেদেভ বর্তমানে রুশ নিরাপত্তা কাউন্সিলের ডেপুটি চেয়ারম্যান। একটি ফরাসি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘ইউক্রেনের নেটোয় যোগ না দেওয়া আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য তা আর যথেষ্ট নয়।’’