ইউক্রেনের খারকিভে রাশিয়ার বোমাবর্ষণ। ছবি: রয়টার্স।
জার্মান বিদেশমন্ত্রী অ্যানালিনা বেয়ারবোকের আচমকা সফরের পর কয়েক ঘণ্টাও কাটল না, খারকিভে তুমুল বোমাবর্ষণ করে তার প্রতিক্রিয়া জানাল রাশিয়া। মঙ্গলবার বেশি রাতে রাশিয়ার বোমা ঝাঁঝরা করে দেয় ইউক্রেনের এই নগরকে। এ খবর জানিয়েছেন সেখানকার আঞ্চলিক গভর্নর।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে বিপুল বোমাবর্ষণের সাক্ষী হয়েছে খারকিভ। কিন্তু যুদ্ধ যত এগিয়েছে, রণাঙ্গন সরে গিয়েছে পূর্ব দিকে। কিন্তু জার্মান বিদেশমন্ত্রীর সফরের পরেই, যে ভাবে রাশিয়া বোমাবর্ষণ করল, তাতে খারকিভ নতুন করে পুতিনের আক্রমণের নিশানায় চলে এল বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের একটি অংশ। অধিবাসীদের জন্য খারকিভের আঞ্চলিক গভর্নর ওলেগ সাইনেগুবোভ ঘোষণা করেন, ‘‘খোলা আকাশের তলায় ঘুরবেন না। আগ্রাসনকারীরা আবার বোমাবর্ষণ শুরু করেছে!’’ সংবাদ সংস্থা এএফপির এক সাংবাদিক শহরে লাগাতার বোমাবর্ষণের আওয়াজ পেয়েছেন বলে দাবি করেছেন। কিন্তু ক্ষয়ক্ষতি কত তা এখনও হিসাব করা যায়নি।
মঙ্গলবারই আচমকা খারকিভ সফরে গিয়েছিলেন জার্মান বিদেশমন্ত্রী। ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকও হয়। ইউক্রেনকে সব রকম ভাবে সহায়তার প্রকাশ্য বার্তাও দেন বেয়ারবোক। কিন্তু তাঁর শহর ছাড়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই রাশিয়া বোমাবর্ষণ শুরু করে। কিভ সূত্রে খবর, জার্মান বিদেশমন্ত্রীর সফর নিয়ে খুব বেশি উৎসাহিত হতে পারছেন না সে দেশের কূটনীতিকরা। প্রসঙ্গত, যুদ্ধ শুরুর লগ্ন থেকেই একটি নির্দিষ্ট জার্মান ট্যাঙ্ক চেয়ে আসছে ইউক্রেন। কিন্তু বার্লিন তাতে সাড়া দেয়নি। এ বারও বেয়ারবোকের সামনেই সেই ট্যাঙ্ক চেয়ে প্রকাশ্য আবদার করেন ইউক্রেনের অন্যতম কূটনীতিক দিমিত্রো কুলেবা। তিনি বলেন, ‘‘আমাদের দেশকে ট্যাঙ্ক দিতে চাইছে না বার্লিন। এর ফলে মানুষের প্রাণ যাচ্ছে।’’
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ স্কোলজ় সম্প্রতি ইউক্রেনকে একটি বিশেষ ধরনের যুদ্ধশকট দিতে সম্মত হয়েছেন। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ‘অ্যাডভান্সড লেপার্ড ব্যাটল ট্যাঙ্কস’ নিয়ে কোনও উচ্চবাচ্য নেই জার্মানির। এই প্রেক্ষিতে কুলেবার আবেদন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। জার্মান বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে এক মঞ্চ থেকেই তাঁর ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘সিদ্ধান্ত নিতে বার্লিনের যত বেশি সময় লাগবে, তত বেশি মানুষ প্রাণ হারাবেন।’’
স্বভাবতই তা নিয়ে কোনও মন্তব্য বা প্রতিক্রিয়ায় যাননি বেয়ারবোক। তিনি বলেন, ‘‘ইউক্রেনের প্রতিটি প্রান্ত, খারকিভ থেকে খেরসন, মানুষ যেন জানতে পারেন যে, আমরা সমস্ত সমর্থন নিয়ে আপনাদের পাশে আছি।’’ পূর্বঘোষিত প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, জার্মানি রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে লড়তে ইউক্রেনকে যুদ্ধাস্ত্র দিয়ে সহায়তা জারি রাখবে বলেও জানান তিনি।
আচমকা সফর শেষ করে বেয়ারবোক বার্লিন ফিরতেই সেই খারকিভেই তুমুল বোমাবর্ষণ শুরু করে দেয় রাশিয়া। জার্মান বিদেশমন্ত্রীর আচমকা সফর নিয়ে এটাই রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া বলে মনে করা হচ্ছে।