ইউক্রেনের সীমান্ত থেকে মঙ্গলবার নিজেদের সামরিক ঘাঁটির উদ্দেশে রওনা দিল রাশিয়ার ট্যাঙ্ক। ছবি রয়টার্স।
আমেরিকা-সহ পশ্চিমী দেশগুলি গত কয়েক দিন ধরে যতই যুদ্ধ পরিস্থিতির কথা বলুক না কেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বরাবর দাবি করে এসেছেন ইউক্রেন আক্রমণ বা দখলের কোনও অভিপ্রায় তাঁর সামরিক বাহিনীর নেই। উল্টে রাশিয়ার অভিযোগ ছিল, পশ্চিমী দুনিয়া ইচ্ছাকৃত ভাবেই এই আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করছে। ইউক্রেন সীমান্তে সামরিক মহড়া শেষ হয়ে গেলেই রুশ সেনারা নিজেদের ঘাঁটিতে ফিরে যাবে। আজ সকালে সেই বার্তাই দিল মস্কো। রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র আইগর কোনাশেনকভ জানান, দক্ষিণ ও পশ্চিম প্রদেশের সেনা বাহিনীর সংশ্লিষ্ট মহড়া শেষ হওয়ায় তারা নিজ নিজ ঘাঁটিতে ফিরে যাচ্ছে। তবে আজই ইউক্রেনে বসবাসকারী ভারতীয়দের প্রতি সে দেশের দূতাবাসের তরফে দেওয়া বার্তায় বলা হয়েছে, আপাতত কিছু দিনের জন্য হলেও তাঁরা যেন দেশে ফিরে যান।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের বার্তায় কিছুটা হলেও স্বস্তিতে গোটা বিশ্ব। নেটো প্রধান জেন্স স্টলটেনবার্গ বলেছেন, ‘‘এই বার্তা কিছুটা হলেও আশার আলো দেখাচ্ছে। তবে বাস্তবে রাশিয়া সেনা না সরানো পর্যন্ত ভরসা করা যায় না।’’ ইউক্রেনের তরফেও রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানানো হয়েছে। তবে বিদেশমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা-ও এক সংযত বার্তায় বলেছেন, ‘‘আমাদের একটা নীতি আছে। যা শুনবে সেটা নয়, যা দেখবে তাতে বিশ্বাস করে চলা। রুশ বাহিনী প্রত্যাহার হলেই আমরা বুঝব যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে।’’ রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রক অবশ্য আজ একটি ভিডিয়ো প্রকাশ করেছে, যেখানে দেখা গিয়েছে, তাদের বাহিনী ইউক্রেন সীমান্ত ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে ঠিক কত পরিমাণ বাহিনী তারা সরাচ্ছে, তার হিসেব দেয়নি পুতিন সরকার।
সীমান্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার বার্তা গত কালই দিয়েছিলেন রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু। কাল লাভরভ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘‘ইউক্রেনের সঙ্গে কোনও চুক্তিতে পৌঁছনোর রাস্তা সব সময়ই খোলা রয়েছে।’’ প্রতিরক্ষামন্ত্রীও জানিয়েছিলেন, গত ডিসেম্বরে সীমান্তে মোতায়েন সেনাদের মহড়া খুব শীঘ্রই শেষ হতে চলেছে। মস্কোর তরফে আজ আরও একবার গোটা বিষয়টি নিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য আমেরিকা-সহ পশ্চিমের দেশগুলির দিকে আঙুল তোলা হয়েছে।
তবে রাশিয়া পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার বার্তা দিলেও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে খুব দ্রুত ইউরোপ সফরে যাচ্ছেন আমেরিকান প্রতিরক্ষাসচিব লয়েড অস্টিন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে তিনি আলোচনায় বসবেন বলে জানিয়েছেন পেন্টাগনের মুখপাত্র জন কার্বি। ইউরোপের সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে আজ ফের ফোনে কথা বলেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।
এর মধ্যেই কিভের ভারতীয় দূতাবাসের তরফে এক বিবৃতিতে আজ বলা হয়েছে, আপাতত কিছু দিনের জন্য বিশেষ করে ভারতীয় ছাত্রছাত্রীরা যেন দেশে ফিরে যান। ইউক্রেনে প্রায় কুড়ি হাজার ভারতীয় পড়ুয়া রয়েছেন। দূতাবাসের তরফে জানানো হয়েছে, যাঁরা আপৎকালীন কর্মী নন, তাঁদের কয়েক দিনের জন্য দেশে ফিরে যাওয়া শ্রেয়। যাঁরা থাকবেন, তাঁরা যেন দূতাবাস কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। ভারতীয়দের ইউক্রেনে বা ইউক্রেনের অভ্যন্তরে যাতায়াতেও নিষেধ করা হয়েছে। রাশিয়া আজ সেনা সরানোর কথা জানালেও সম্ভাব্য যুদ্ধ পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ইউক্রেনের সেনা বাহিনীর সাহায্যে নেমেছে স্কুল পড়ুয়াদের একাংশ। সীমান্তে পরিখা বানিয়ে সহায়তা করছে একটি হোমের এক দল কিশোর। বছর পনেরোর মিখাইলো আনোপা যেমন বলল, ‘‘যে দিন থেকে শুনেছি পুতিন আমাদের দেশে হামলা চালাতে পারেন, ভয় পেতাম। আমাদের ফাদার বলেছেন, পরিখা তৈরি করে সেনার সাহায্য করতে। বন্ধুরা মিলে সেই চেষ্টাই করছি।’’