রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। —ফাইল চিত্র।
প্রশংসায় কখনও অস্বস্তি বাড়ে। আবার প্রশংসা কখনও বিশেষ অর্থবোধক হয়ে ওঠে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে। ব্রিকস বৈঠক শুরু হওয়ার ঠিক আগে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দরাজ প্রশংসা করার পর এমনটাই মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল।
এই মুহূর্তে ভারত-রাশিয়া সম্পর্কের ওঠাপড়ার দিকে শ্যেন দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে আমেরিকা তথা পশ্চিম। এই তাকিয়ে থাকার মধ্যেও মিশ্র কূটনীতি রয়েছে। একদিকে আমেরিকার নয়াদিল্লিকে প্রয়োজন রাশিয়ার সঙ্গে দরকষাকষির জন্য। অন্যদিকে ভারত, রাশিয়ার কাছ থেকে তাদের নিষেধাজ্ঞা এড়িয়ে অশোধিত তেল আমদানি করে চলায় রক্তচাপও বাড়ছে ওয়াশিংটনের।
এই আবহে পুতিনের মন্তব্য, “নরেন্দ্র মোদী আমাদের বন্ধু। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের কথা তিনি বারবার উত্থাপন করেছেন আমাদের আলোচনার সময়। তাঁর বিবেচনার কথা জানিয়েছেন। আমরা তাঁকে ধন্যবাদ দিতে চাই।” সেই সঙ্গে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট এ কথাও জানাতে ভোলেননি যে কবে এই যুদ্ধ শেষ হবে তার কোনও সময়সীমা দেওয়া তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। তাঁর বক্তব্য, রাশিয়া চায় শান্তিপূর্ণ সমাধান, তবে দুর্ভাগ্যবশত ইউক্রেন তা চায় না। মোদীর প্রশংসা করার পাশাপাশি আমেরিকাকে নিশানা করতেও ছাড়েননি পুতিন। তাঁর কথায়, “নেটো আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তবে আমরাই শেষ কথা বলব। আমরাই জিতব। ইউক্রেন যুদ্ধে আমরাই টিকে থাকব।”
রাশিয়ার কাজ়ান শহরে ২২ অক্টোবর থেকে শুরু হচ্ছে ব্রিকস সম্মেলন। ব্রিকস-এর মর্ম ব্যাখ্যা করতে গিয়ে ‘বন্ধু’ মোদীকে টেনে এনে পুতিন বলেছেন, “ব্রিকস গোষ্ঠীর লক্ষ্য পশ্চিমের শক্তির বিরোধিতা করা নয়। এই একই কথা ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও বলেছেন এবং তিনি ঠিকই বলেছেন। ব্রিকস পশ্চিম বিরোধী নয়, তবে অপশ্চিমী গোষ্ঠী। আগামী দিনে বিশ্বের বড় অংশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির চালিকাশক্তি হয়ে উঠবে ব্রিকস। এর কারণ, পশ্চিমের দেশগুলির তুলনায় এই গোষ্ঠীভূক্ত রাষ্ট্রগুলির বিপুল আয়তন এবং তাদের দ্রুততর আর্থিক বৃদ্ধি।”
এক মাসে আগেই ইউক্রেন সফর সেরে পুতিনের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিলেন মোদী। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ভারতের ভূমিকার কথা উঠেছিল তখন। তারপরেই সমাজমাধ্যমে মোদী লিখেছেন, ‘‘রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাত নিয়ে পুতিনের সঙ্গে কথা হয়েছে। সাম্প্রতিক ইউক্রেন সফরে গিয়ে আমার যা ধারণা হয়েছে, তাঁকে তা জানিয়েছি। দ্রুত, স্থায়ী এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের সমর্থন জানাতে ভারত প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’ শুধু তা-ই নয়, ভারত এবং রাশিয়ার দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়েও কথা হয়েছে বলে জানিয়েছেন মোদী।
রাশিয়া সফরের মাস দেড়েক পর মোদী ইউক্রেনে গিয়েছিলেন। সেখানে একটি বার্তা তিনি স্পষ্ট করেন— ভারত শান্তির পক্ষে। প্রয়োজনে ব্যক্তিগত ভাবে এই যুদ্ধ থামাতে মোদী সাহায্য করবেন বলেও জানিয়েছিলেন। প্রধানমন্ত্রী জানান, যুদ্ধ চলাকালীন ভারত কোনও পক্ষ নেয়নি। তবে নয়াদিল্লি মোটেই নিরপেক্ষ ছিল না। ভারত বরাবর শান্তির পক্ষে ছিল এবং তা-ই থাকবে।
নয়াদিল্লি-মস্কো দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কে বলিউড সব সময়েই বড় ভূমিকা নিয়েছে। রাজ কপূর থেকে মিঠুন চক্রবর্তী হয়ে শাহরুখ খান— ভারতের অন্যতম সেরা কূটনৈতিক দূতের কাজ করেছেন। সিনেমার বিষয়ে ব্রিকসের দেশগুলিকে রাশিয়া কোনও সুযোগ সুবিধা দেবে কিনা, সেই প্রশ্নের জবাবে পুতিন আজ বলেছেন, “আমাদের আলাদা টিভি চ্যানেল রয়েছে শুধুমাত্র ভারতীয় ফিল্ম দেখানোর জন্য। যদি ভারতের ফিল্ম নির্মাতারা আগ্রহী হন, আমরা রাশিয়ায় তাঁদের সিনেমার প্রচারের বিশেষ সুবিধা করে দেব। এই নিয়ে কথা হতেই পারে।“