Mariupol

Russia Ukraine War: রুশ বোমায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে মারিয়ুপোল, পতন ঘটেনি, কিন্তু অস্তিত্বও নেই শহরের

এ দিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র ও দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারেন, আশঙ্কা প্রকাশ করলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস। বিশ্বের প্রায় ৪৫টি কম উন্নত দেশ রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করে, এ তথ্য স্মরণ করিয়ে গুতেরেসের দাবি, যুদ্ধের ফলে এই সরবরাহের প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হচ্ছে।

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২২ ০৬:১৫
Share:

বিধ্বস্ত মারিয়ুপোল। ছবি রয়টার্স।

তারা আত্মসমর্পণ করেনি, কিন্তু তারা বেঁচেও নেই! ইউক্রেনের দক্ষিণে বন্দর-শহর মারিয়ুপোলের অবস্থা এমনই। এ শহরকে আত্মসমর্পণ করার জন্য রবিবার পর্যন্ত সময় দিয়েছিল রাশিয়া। ধরা দেয়নি তারা। ইউক্রেনের প্রধানমন্ত্রী ডেনিস শ্মিহাল ঘোষণা করেছেন, ‘‘রুশ বাহিনীর বোমায় গুঁড়িয়ে গিয়েছে মারিয়ুপোল, কিন্তু পতন ঘটেনি!’’ কিন্তু শহরটা বেঁচে আছে তো? ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবার আস্ফালন, ‘‘এ শহরের আর কোনও অস্তিত্ব নেই।’’

Advertisement

একটি আমেরিকান সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কুলেবা বলেন, ‘‘সামরিক ভাবে দেখুন বা মানবিক ভাবে, মারিয়ুপোলের অবস্থা শোচনীয়। শহরটার আর কোনও অস্তিত্ব নেই। অল্প কিছু বাহিনী ও সাধারণ বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ এখনও বেঁচে আছে। কিন্তু তাঁদের চারদিক থেকে ঘিরে ফেলেছে রুশরা। তাঁরা প্রতিদিন বাঁচার জন্য লড়াই করে যাচ্ছে। তবে রাশিয়ার আচরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে, যে কোনও মূল্যে ওরা শহরটাকে মাটিতে মিশিয়ে দিতে চায়। সেই সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছে।’’

কুলেবা এক নন, এই হতাশা শোনা গিয়েছে ইউক্রেনের একাধিক নেতামন্ত্রীর মুখে। এর আগে ডনেৎস্ক অঞ্চলের গভর্নর পাবলো কিরিয়েঙ্কা বলেছেন, ‘‘পৃথিবীর বুক থেকে মারিয়ুপোলকে মুছে দিয়েছে রুশ ফেডারেশন।’’ গত সপ্তাহে মারিয়ুপোলের মেয়র বাদিম বয়চেঙ্কো জানান, শহরের পরিকাঠামোর ৯০ শতাংশ ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে।

Advertisement

মারিয়ুপোল ছাড়াও ইউক্রেনের অন্যান্য অংশে রুশ হামলা অব্যাহত। আজ সকালে পশ্চিম ইউক্রেনের পোল্যান্ড সীমান্ত ঘেঁষা শহর লিভিভে ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালায় রাশিয়া। ৭ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। শহরের মেয়র অ্যান্ড্রি সাডোভি অনলাইন বৈঠকে বলেন, ‘‘সাত জন সাধারণ মানুষের বেঁচে থাকার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু তাঁদের জীবন আজ থেমে গিয়েছে।’’ একটি সামরিক ঘাঁটি ও তার সংলগ্ন গাড়ি-কারখানায় ক্ষেপণাস্ত্রটি আছড়ে পড়ে। অন্তত ৪০টি গাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। সাডোভি বলেন, ‘‘ওই কারখানার মালিকের সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। কাঁদছিলেন। সম্পত্তি ধ্বংস হয়েছে বলে নয়, ওঁর কর্মীরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের জন্য।’’

রাষ্ট্রপুঞ্জ আজ জানিয়েছে, প্রাণ বাঁচাতে অন্তত ৫০ লক্ষ মানুষ ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছে। এর মধ্যে বড় অংশ শিশু ও মহিলা। যে অংশ ইউক্রেনে রয়ে গিয়েছে, তার একটা বড় অংশ প্রবীণ। আগ্নেয়াস্ত্র হাতে নিয়ে মাটি আঁকড়ে পড়ে রয়েছেন তাঁরা। ডনবাস অঞ্চলের বাসিন্দা ৫৯ বছর বয়সি মিকোলা লুহিনেটস বলেন, ‘‘সারা জীবন এ দেশে কাটিয়েছি। আমি এখানেই থাকব। প্রয়োজনে লড়ব।’’

গোটা বিশ্ব রাশিয়াকে যুদ্ধ থামানোর কথা বললেও মস্কো একরোখা। ইউক্রেন আজ জানিয়েছে, হামলা বন্ধ না হলে আর শান্তি বৈঠকে বসার প্রশ্ন নেই। তাদের আরও অভিযোগ, দক্ষিণ ইউক্রেনে ‘টর্চার-ক্যাম্প’ তৈরি করেছে রুশ বাহিনী। সেনা বা সাধারণ মানুষকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়ে অত্যাচার চালানো হচ্ছে। ইউক্রেনের অভিযোগ, রাশিয়ার পরবর্তী লক্ষ্য, দুর্ভিক্ষ তৈরি করা।

ক্রেমলিনের বক্তব্য, ইউক্রেনই কথার খেলাপ করেছে। তাই যুদ্ধ থামছে না। তাদের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ আজ সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘দুর্ভাগ্যজনক, যা কথা হয়েছিল, ইউক্রেন সেই শর্তে স্থির থাকেনি। ওরা বারবার ওদের অবস্থান পরিবর্তন করছে।’’ তা-ও তারা সমঝোতার চেষ্টা করছেন বলে জানিয়েছেন। যদিও যুদ্ধের গতি বাড়াতে আজ সিরিয়া সরকারের সঙ্গে জোট বেঁধেছে রাশিয়া। সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে যে বাহিনী লড়েছিল, এ বার তারা রুশ বাহিনীর সঙ্গে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়বে বলে শোনা গিয়েছে। চুক্তিপত্রে সই হয়ে গিয়েছে।

এ দিকে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বের প্রায় ২০ শতাংশ মানুষ দারিদ্র ও দুর্ভিক্ষের কবলে পড়তে পারেন, আশঙ্কা প্রকাশ করলেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস। বিশ্বের প্রায় ৪৫টি কম উন্নত দেশ রাশিয়া এবং ইউক্রেন থেকে গম আমদানি করে, এ তথ্য স্মরণ করিয়ে গুতেরেসের দাবি, যুদ্ধের ফলে এই সরবরাহের প্রক্রিয়া বিঘ্নিত হচ্ছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement