রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। ফাইল ছবি।
ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু, হত্যা ও শিশু-নির্যাতনের ‘অপরাধে’ রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি)। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি দ্য হেগ-এর আদালতে কাঠগড়ায় উঠতে হবে পুতিনকে? যুদ্ধাপরাধে দোষী সাব্যস্ত করা হবে তাঁকে? রাশিয়া গোটা বিষয়টিকে হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। ক্রেমলিন জানিয়েছে, ওই কোর্টকে তারা মানে না। রাশিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ আইসিসি-র রায়কে ‘টয়লেট পেপারের’ সঙ্গে তুলনা করেছেন। তিনি টুইট করেছেন, ‘‘আইসিসি পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছে। এই কাগজ কোথায় ব্যবহার করা উচিত, তা আর ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন নেই।’’
রাশিয়া আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে মানতে অস্বীকার করলেও এর সদস্য দেশগুলিতে পুতিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। শুধু তিনি-ই নন, রাশিয়ার শিশু অধিকার বিষয়ক প্রেসিডেন্সিয়াল কমিশনার মারিয়া লোভা-বেলোভার বিরুদ্ধেও একই পদক্ষেপ করা হয়েছে। আইসিসি-র সদস্য দেশগুলির মধ্যে কোনওটিতে পা রাখলেই গ্রেফতার করা হবে এঁদের দু’জনকে।
আইসিসি-র আইনজীবী করিম খান জানিয়েছেন, ১২৩টি দেশ আইসিসির সদস্য। এর কোনওটিতে প্রবেশ করেই গ্রেফতার করা হবে পুতিনকে। এতে পুতিনের জন্য বিদেশ সফরে বাধা তৈরি হবে। তবে একই সঙ্গে আইসিসি-র নিজস্ব কোনও পুলিশ বাহিনী নেই। তারা সদস্য দেশগুলির উপর নির্ভরশীল। ফলে কোনও দেশ যদি তাদের মত বদলায়, আইসিসি-র কিছুই করার নেই। যে ঘটনা খুব অস্বাভাবিক নয়। বিশেষ করে ‘অভিযুক্ত’ ব্যক্তি যখন পুতিন।
এর আগে সুদানের প্রাক্তন নেতা ওমর আল-বাশিরের ক্ষেত্রেই এমন ঘটনা ঘটেছে। আইসিসি-র গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা সত্ত্বেও দক্ষিণ আফ্রিকা, জর্ডন-সহ তাদের একাধিক সদস্য দেশে সফর করেছেন তিনি। ২০১৯ সালে গদিচ্যুত হন ওমর। তার পরেও সুদান তাঁকে আইসিসি-র হাতে তুলে দেয়নি।
কলম্বিয়া আইন স্কুলের অধ্যাপক ম্যাথ্যু ওয়াক্সম্যান বলেন, ‘‘আইসিসি যে পদক্ষেপ করেছে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পুতিনের গ্রেফতার হওয়ার সম্ভাবনা একেবারেই ক্ষীণ।’’ কারণ, আমেরিকা ও চিনের মতো রাশিয়াও আইসিসি-র সদস্য নয়। আইসিসি রাশিয়ার বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করতে পেরেছে, কারণ ইউক্রেন আইসিসি-র বিচারব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছে। রাশিয়া পুরো প্রক্রিয়াটিকেই হেসে উড়িয়ে দিয়েছে। এবং তারা কোনও ভাবেই তাদের নাগরিককে আইসিসি-র হাতে তুলে দেবে না। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকোভ বলেছেন, ‘‘ওই আদালতের বিচারব্যবস্থাকে মানে না রাশিয়া। ফলে আইনি দিক থেকে ভাবলে ওই আদালতের সিদ্ধান্ত পুরোটাই ফাঁপা।’’ আর এক অভিযুক্ত মারিয়া লোভা-বেলোভা বলেছেন, ‘‘এমনিতেই আমার বিরুদ্ধে বহু দেশ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এমনকি জাপানও। এ বার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হল। কিন্তু আমরা কাজ চালিয়ে যাব।’’
রাশিয়ার সরকারি টিভি চ্যানেলের প্রধান মার্গারিটা সিমোন্যান সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, ‘‘দেখি কোন দেশ পুতিনকে গ্রেফতার করে!’’ আইসিসির বক্তব্য, এর আগে বহু রাষ্ট্রনেতাই অপরাধের সাজা ভুগেছে। তাদের আইনজীবী খান বলেন, ‘‘অনেকেই ভেবেছিলেন, তাঁরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু শেষমেশ আইনের জালে ফেঁসেছেন তাঁরাও।’’ লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জেমস টেলরকে ২০১২ সালে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। যুগাস্লাভ যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত সাইবেরিয়ার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট স্লোবোডান মিলোসেভিক বিচার চলাকালীন দ্য হেগ-এ তাঁর কুঠুরিতে মারা যান। ২০০৮ সালে ধরা পড়েন বসনিয়ার প্রাক্তন নেতা রাডোভান কারাজ়িক। গণহত্যায় দোষী সাব্যস্ত হন তিনি। তাঁর মিলিটারি নেতা রাটকো মাডিক ২০১১ সালে গ্রেফতার হন। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয় তাঁর। রাশিয়ার বিষয়েও আশাবাদী আইসিসি।