ফাইল চিত্র।
২৬ মার্চ: রাষ্ট্রপুঞ্জের আন্তর্জাতিক আদালত অবিলম্বে যুদ্ধ থামানোর নির্দেশ দিয়েছে রাশিয়াকে। ইউরোপ-আমেরিকা একের পর নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে চলেছে মস্কোর উপরে। কানাঘুঁষো খবর মিলছে, রীতিমতো চাপে রয়েছে ক্রেমলিনও। যদিও ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ বন্ধের কোনও ইঙ্গিত নেই। আজ রাজধানী কিভের উত্তরে স্লাভুতিচ শহরে ঢুকে পড়েছে রুশ সেনা। শহরের হাসপাতালের দখল নিয়েছে তারা। প্রায় ধ্বংসস্তূপের উপরে দাঁড়িয়ে থাকা দেশের মানুষ এখনও জমি আঁকড়ে। স্লাভুতিচের মেয়রের এক ডাকে শহরের মূল স্কোয়ারে হাজির হন শয়ে শয়ে বাসিন্দা। ‘শত্রুপক্ষকে’ তাঁদের অবস্থান বুঝিয়ে দিতে এই প্রতীকি প্রতিবাদ। বিক্ষোভস্থলে স্লোগান ওঠে, ‘‘স্লাভুতিচ ইউক্রেনের। ইউক্রেনের গর্ব।’’ পিছনে ভেসে ওঠে বোমার আওয়াজ। লিভিভে রকেট হামলাও চালায় রাশিয়া। আজই পোল্যান্ডে এসেছেন আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এমন সময়ে সেখান থেকে মাত্র ৪৫ মাইল দূরত্বের শহরে রকেট হামলা তাৎপর্যপূর্ণ।
কাল স্লাভুতিচের মেয়র ফেসবুকে লিখেছিলেন, ‘‘আমাদের বাহিনী সাহসের সঙ্গে, নিঃস্বার্থ ভাবে লড়ে চলেছে। কিন্তু ওদের সমান শক্তি আমাদের নেই। দুর্ভাগ্য, আমাদের কাছে শুধু মৃতদেহ!’’ আজ সকালে স্লাভুতিচ দখলের খবর মেলে। তার মধ্যেই শহরবাসীকে বিক্ষোভে নামার ডাক দেন মেয়র। তবে শোনা যাচ্ছে শহরের দখল নেওয়ার পরেই মেয়রকে অপহরণ করেছে রুশ বাহিনী।
ধীর পায়ে রাজধানীর দিকে এগিয়ে চলেছে ‘শত্রুর সেনা’। স্লাভুতিচের খবর পেতেই কিভের মেয়র ভিটালি ক্লিৎসকো আজ রাত থেকে সোমবার ভোর ৭টা পর্যন্ত রাজধানীতে কার্ফু জারির কথা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু পরিস্থিতি এখনও নিয়ন্ত্রণে থাকায় পরে সেই পরিকল্পনা বাতিল করেন।
ও দিকে ফের ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালিয়েছে রাশিয়া। দাবি করেছে, আজ পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিম ও মধ্য ইউক্রেনে ক্ষেপণাস্ত্র হানা চালিয়েছে তারা। গত কাল আমেরিকা দাবি করেছিল, মস্কোর ক্ষেপণাস্ত্রের ভান্ডার ফুরোচ্ছে। সেই বিষয়ে কোনও মন্তব্য না করে রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকোভ জানান, সমুদ্র থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল ক্যালিবর ক্রুজ় মিসাইল। ঝাইতোমির অঞ্চলের ভেলিকি কোরোভিনৎসি সেনা অস্ত্রাগার ধ্বংস করে ক্ষেপণাস্ত্রটি। মিকোলিভে একটি জ্বালানি ক্ষেত্র ধ্বংস করেছে রাশিয়ার ওনিক্স ক্রুজ় মিসাইল।
মস্কোর লাগাতার ক্ষেপণাস্ত্র হামলা, আকাশপথে গোলাবর্ষণ, পরমাণু যুদ্ধের হুমকি, এ সব রুখতে এককাট্টা ইউরোপ-আমেরিকা। কিন্তু তেলের প্রশ্নে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে অনেকেই। বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, জার্মানির মতো অনেকের সুর এমন— ‘‘আমাদের সঙ্গে তো যুদ্ধ চলছে না।’’ মতানৈক্য স্পষ্ট নেটো ও জি৭-এর বৈঠকে। তেল-সমস্যার সমাধান খুঁজতে আজ দোহার সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কি। সেখানে তিনি বলেন, রাশিয়া গোটা বিশ্বকে তেলের নামে ‘ব্ল্যাকমেল’ করছে। তাঁর কথায়, ‘‘ইউরোপের ভবিষ্যৎ আপনাদের হাতে। আপনারা দয়া করে জ্বালানি সরবরাহ বাড়ান। রাশিয়াকে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার, জ্বালানিকে ‘অস্ত্র’ করা যাবে না।’’
ইউরোপের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠকের শেষে আজ পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশ-এ ইউক্রেনের বিদেশমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ওলেক্সেই রেজ়নিকোভের সঙ্গে বৈঠক করলেন বাইডেন। প্রথমে ট্রেনে ও তার পরে তিন ঘণ্টা গাড়িতে করে পোল্যান্ডে এসেছিলেন দুই মন্ত্রী। পোল্যান্ডের শরণার্থী শিবিরেও যান বাইডেন। পরে সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘‘ইউক্রেনীয়দের লড়াকু মনোভাব দেখে আমি উচ্ছ্বসিত। ছোট-ছোট বাচ্চারা এগিয়ে এসে জড়িয়ে ধরছে। বলছে, ওদের বাবা, নয়তো দাদু, নয়তো বড় দাদা যুদ্ধে লড়ছে। বলছে, ওদের জন্য প্রার্থনা করবেন।’’ এর পরেই বাইডেন বলেন, ‘‘উনি (রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন) আসলে এক জন কসাই!’’