‘ট্রাম্পের নামে মামলা করা যেতেই পারে’

২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে দীর্ঘ তদন্তের পরে গত মার্চে তাঁর রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন মুলার।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

ওয়াশিংটন শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৯ ০৫:৪০
Share:

তাঁর তদন্ত-রিপোর্টে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ‘পুরোপুরি ‘অপরাধমুক্ত’ বলা হয়নি। আজ মার্কিন কংগ্রেসে এই কথা জানালেন প্রাক্তন বিশেষ আইনজীবী রবার্ট মুলার।

Advertisement

২০১৬-র প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপ নিয়ে দীর্ঘ তদন্তের পরে গত মার্চে তাঁর রিপোর্ট জমা দিয়েছিলেন মুলার। রিপোর্ট পেশের চার মাস পরে এখনও স্পষ্ট নয় যে, নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের প্রচার টিমের সঙ্গে রুশদের যোগাযোগ ছিল কি না বা এই তদন্তে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বাধা দিয়েছিলেন কি না। প্রশ্নোত্তর পর্বের শুরুতে হাউসের বিচারবিভাগীয় কমিটি মুলারকে জিজ্ঞাসা করে— ‘‘আপনার রিপোর্টে কি বলা হয়েছে যে, প্রেসিডেন্ট কোনও অপরাধ করেননি?’’ মুলার উত্তর দেন— ‘‘না!’’ তার পরে যোগ করেন, ‘‘প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে যা যা অভিযোগ উঠেছিল, তার প্রেক্ষিতে তাঁকে পুরোপুরি অপরাধমুক্ত তকমা দেওয়া হয়নি।’’ মুলারের দাবি, ‘‘বিচারবিভাগের নীতি মেনে আমরা এই অবস্থান নিয়েছিলাম যে, প্রেসিডেন্ট কোনও অপরাধ করেছেন কি না, সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেব না। সেই অবস্থান পাল্টায়নি।’’ তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়— রাশিয়া কার জয় চাইছিল? মুলারের উত্তর, ‘‘ট্রাম্পের।’’ প্রেসিডেন্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে তদন্তে বাধা দেওয়ার জন্য ফৌজদারি মামলা করা যায় কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে মুলার বলেন— ‘‘যেতেই পারে!’’ হোয়াইট হাউসের প্রাক্তন কৌঁসুলি ডন ম্যাকগানকে ‘মিথ্যা সাক্ষ্য’ দেওয়ার জন্য প্রেসিডেন্ট চাপ দিয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরে মুলার জবাব দেন, ‘‘হ্যাঁ, তাই।’’

আজ ডেমোক্র্যাট-প্রধান হাউস অব রিপ্রেজ়েন্টেটিভসের দু’টি পৃথক কমিটি (বিচারবিভাগীয় কমিটি ও গোয়েন্দা কমিটি)-র সামনে দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর পর্বে দৃশ্যতই অস্বচ্ছন্দ দেখাচ্ছিল স্বল্পবাক মুলারকে। অধিকাংশ প্রশ্নের উত্তর তিনি ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’-এ সারেন। মাঝেমধ্যেই বলেন— ‘‘রিপোর্টেই তো এর উত্তর দেওয়া রয়েছে।’’ এক ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য জানিয়েছেন, মোট ১২৩ বার ‘এই প্রশ্নের উত্তর দেব না’ বলেছেন প্রাক্তন বিশেষ কৌঁসুলি। প্রেসিডেন্ট পুত্র, ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র তাঁকে তদন্তের সময়ে যোগাযোগ করেছিলেন কি না, সেই প্রশ্নের উত্তরেও মুলার বলেন— ‘‘কোনও মন্তব্য করব না।’’

Advertisement

মুলার কংগ্রেসে সাক্ষ্য দেবেন শোনার পরেই ট্রাম্প জানিয়ে দেন, সাক্ষ্যের সরাসরি টিভি সম্প্রচার তিনি দেখবেন না। তবে আজ প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হওয়ার আগে টুইটারে ফের ঝড় তোলেন প্রেসিডেন্ট। ‘এ রকম হওয়ার কথা ছিল না’, ‘ফের অপরাধী খোঁজার হুজুগ শুরু হয়েছে’, ‘রুশ হস্তক্ষেপে যোগ ছিল না, তদন্তে বাধা দিইনি’— এ রকম এক গুচ্ছ টুইট করেন প্রেসিডেন্ট। বিচারবিভাগীয় কমিটির সামনে প্রশ্নোত্তর পর্ব শেষ হওয়ার পরে প্রেসিডেন্ট একটি ট্রাম্পপন্থী মার্কিন টিভি চ্যানেলের সাংবাদিককে উদ্ধৃত করে টুইট করেন, ‘‘মুলারকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তদন্ত করার সময়ে কোনও বাধা পেয়েছিলেন কি না। মুলার বলেছেন— না। অর্থাৎ, আমি তদন্তে বাধা দিইনি।’’

দীর্ঘ দু’বছর ধরে তদন্ত চলার সময়ে এবং তদন্ত-রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে এক বার আট মিনিটের বক্তৃতা দেওয়া ছাড়া মুখ খোলেননি মুলার। মার্চে মার্কিন কংগ্রেসের কাছে তাঁর রিপোর্টের সারমর্ম পেশ করেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল উইলিয়াম পি বার। সেই সারমর্মে বলা হয়েছিল, আমেরিকার ভোটে ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ যোগসাজশের প্রমাণ মেলেনি। তাই তাঁকে ‘অপরাধী’ বলা যাবে না। মুলারের-রিপোর্ট এই ‘ব্যাখ্যা’ নিয়ে জোর বিতর্ক বেঁধে যায়। ট্রাম্প দাবি করেন, তাঁকে সম্পূর্ণ নির্দোষ বলেছেন মুলার। কিন্তু ডেমোক্র্যাটরা বলতে থাকেন, ট্রাম্পকে এ রকম কোনও ‘ছাড়’ রিপোর্টে দেওয়া হয়নি।

গত মে মাসে মার্কিন বিচারবিভাগের সামনে মুলার বলেছিলেন, ‘‘বিচারবিভাগের নীতি অনুযায়ী, পদে থাকাকালীন কোনও প্রেসিডেন্টকে অপরাধমূলক আইন (ফেডারেল ক্রাইম)-এ অভিযুক্ত করা যায় না। এটা অসাংবিধানিক। তাই প্রেসিডেন্টকে অভিযুক্ত করার কোনও উপায় আমাদের হাতে ছিলও না।’’ মুলারের আজকের সাক্ষ্যের ভিত্তিতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে ‘ইমপিচ’ বা অপসারণ করার দাবিতে ডেমোক্র্যাটরা আরও সরব হবেন বলেই ধারণা রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement