লিজ় ট্রাস এবং ঋষি সুনক ছবি সংগৃহীত।
যত দিন লড়াইটা এমপিদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে ছিলেন তিনিই। দফায় দফায় যত বার ভোট হয়েছে কনজ়ারভেটিভ দলের অন্দরে, প্রতিবার এক নম্বর স্থানেই থেকেছেন বরিস জনসন ক্যাবিনেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ঋষি সুনক। তখন দু’নম্বরে কে থাকবেন তা নিয়ে লড়াই হলেও, ভারতীয় বংশোদ্ভূত সুনক শীর্ষে বেশ স্বচ্ছন্দই ছিলেন।
কিন্তু এখন লড়াইয়ের পরিসর অনেটাই বিস্তৃত হয়েছে। কনজ়ারভেটিভ দলের সদস্য সংখ্যা প্রায় দু’লক্ষ। তাঁরাই এ বার ঠিক করবেন, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনক, নাকি বর্তমান বিদেশ ও কমনওয়েলথ মন্ত্রী লিজ় ট্রাস, কে যাবেন ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে। সম্প্রতি এক টিভি বিতর্কে সুনক মেনে নেন যে, দলের সাধারণ সদস্যদের মধ্যে ট্রাসের গ্রহণযোগ্যতা এখনও বেশি। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘প্রতিটি ভোটের জন্য জোরদার লড়াই চালাব।’’ সর্বশেষ সমীক্ষা বলছে, ৪৭ শতাংশ সদস্য লিজ়কে ভোট দেবেন বলে ঠিক করেছেন, আর ৩৮ শতাংশের ভোট যাবে সুনকের ঝুলিতে। বাকি ১৫ শতাংশ ভোটার এখনও তাঁদের পছন্দের প্রার্থী সম্পর্কে কোনও সিদ্ধান্তে পৌঁছননি।
ট্রাসের জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ, তাঁর প্রস্তাবিত জনমোহিনী বাজেট। বিদেশমন্ত্রী আশ্বাস দিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী হলে প্রথমেই তিনি বিশাল কর ছাড় দেবেন। যার ফলে লাভবান হবেন সাধারণ মানুষ। লিজ়ের দাবি, অতিমারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে এই ধরনের পদক্ষেপ অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রীর দাবি, লিজ়ের এই প্রস্তাবিত করছাড় অত্যন্ত অবাস্তব, ‘রূপকথার’ মতো। এর ফলে কয়েক বছরেই মূল্যবৃদ্ধি বিশাল আকার ধারণ করবে। সুনকের কথায়, ‘‘এই ধরনের করছাড় সাময়িক স্বস্তি দিলেও দেশের অর্থনীতিতে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এই বোঝা আমরা পরবর্তী প্রজন্মের উপরে চাপিয়ে দেব কেন?’’ তবে লিজ়ের সঙ্গে পাল্লা দিতে সুনক তাঁর সাম্প্রতিকতম টিভি বিতর্কে বিদ্যুৎ বিলে ভ্যাট কমানোর আশ্বাস দিয়েছেন।
সমীক্ষায় আরও দেখা যাচ্ছে, লিজ়ের জনপ্রিয়তার অন্যতম প্রধান কারণ— বরিস জনসনের প্রতি তাঁর আনুগত্য। নানা কেলেঙ্কারিতে নাম জড়িয়ে মসনদ হারানোর পরেও বরিস জনসন কনজ়ারভেটিভ ভোটারদের কাছে সব থেকে জনপ্রিয় নেতা। লিজ়-ঋষি বিতর্কে যত বার জনসনের কথা উঠেছে, করতালির ঝড় উঠেছে সমবেত দর্শকের মধ্যে। প্রকাশ্যে কখনও জনসনের সমালোচনা করেননি লিজ়। অন্য দিকে, এক সময়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রিয়পাত্র সুনক ইস্তফা দিয়ে বরিস-অপসারণের রাস্তা খুলে দেন। ফলে দলের অন্দরে অনেকেই তাঁকে ‘বিশ্বাসঘাতক’ মনে করেন।
এখনও আরও ১১টি বিতর্কসভা বাকি রয়েছে। ফলে এখনই হাল ছাড়ছেন না সুনক। আগামী সপ্তাহ থেকে ভোটারদের ব্যালট পেপার পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে, ২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভোট দিতে পারবেন তাঁরা। ৫ সেপ্টেম্বর বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হবে।