দলীয় দফতর থেকে বেরোচ্ছেন ঋষি সুনক। রবিবার লন্ডনে। রয়টার্স।
দশ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটের রাস্তা প্রায় পরিষ্কার ঋষি সুনকের সামনে।
আজ সকালে আনুষ্ঠানিক ভাবে কনজ়ারভেটিভ পার্টির নেতা তথা ব্রিটেনের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিজের প্রার্থিপদের কথা ঘোষণা করেছিলেন দেশের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ঋষি। আর তাঁর দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর অন্যতম, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এ দিনই রাতে জানিয়ে দিলেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে নেই। অন্য জন, ব্রিটিশ পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ হাউস অব কমন্সের নেত্রী পেনি মরড্যান্ট যেখানে মাত্র ২৩ জন এমপি-র সমর্থন পেয়েছেন, সেখানে সুনককে সমর্থন করছেন ১৪৬ জন। কনজ়ারভেটিভদের নয়া নেতা বাছতে আগামী কালই ভোট হবে। স্থানীয় সময় দুপুর ২টো নাগাদ মনোনয়ন পর্ব শেষ হবে। হাউস অব কমন্সের ৩৫৭ জন কনজ়ারভেটিভ এমপি-ই ভোটে অংশ নেবেন। দলের বিশেষ কমিটি আগেই জানিয়েছে, ভোটে লড়তে অন্তত ১০০ জন টোরি এমপি-র সমর্থন প্রয়োজন প্রতিটি প্রার্থীর।
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে ছুটি কাটানো ছেড়ে গত কালই লন্ডন পৌঁছেছিলেন বরিস। জানিয়েছিলেন, দেশকে আরও এক বার নেতৃত্ব দিতে তিনি প্রস্তুত। দলের একটা বড় অংশ চায়নি যে, বরিস এই ভোটে লড়ুন। তবু ৫৭ জন এমপি সমর্থন করেছিলেন তাঁকে। এ দিন বরিস যদিও দাবি করেছেন, ১০২ জন তাঁর পাশে ছিলেন। তা হলে লড়ছেন না কেন? বিবৃতিতে বরিস বলেন, ‘‘পার্লামেন্টে একটা ঐক্যবদ্ধ দল না থাকলে কার্যকরী ভাবে সরকার চালানো সম্ভব নয়।’’ এখন সত্যিই যদি বরিসের সঙ্গে ১০২ জনের সমর্থন থাকে এবং তাঁরা যদি পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ঋষির বদলে পেনিকে সমর্থন করেন, তা হলে পেনির সামনে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার একটা ক্ষীণ আশা থাকছে। অন্যথায় আগামিকালই ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রথম প্রধানমন্ত্রী পাচ্ছে ব্রিটেন।
আজ সকাল ১১টা নাগাদ একটি টুইট করেন ঋষি। লেখেন, ‘ব্রিটেন এক অসাধারণ দেশ, কিন্তু সম্প্রতি সে ভয়াবহ এক অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যে দাঁড়িয়ে। তাই আমি কনজ়ারভেটিভ পার্টির নেতা ও আপনাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী পদের জন্য লড়তে চাই। আমি এই আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে দলকে নেতৃত্ব দিতে চাই। দেশের সেবা করতে চাই’।
বস্তুত, প্রাক্তন ‘বস’ বরিসকে নিয়েই একমাত্র চিন্তা ছিল ঋষির। বরিসের সমর্থকদের একাংশও দাবি করেছিলেন, তিনি ১০০-র বেশি সমর্থন পাবেন। তাঁরা আরও চেয়েছিলেন, এই ভোট যেন পার্লামেন্টের বাইরে পার্টি সদস্যদের মধ্যে হয়। কারণ সেখানে বরিসের জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। কিন্তু ঋষির সমর্থকেরা বলেছিলেন, বরিসের এই ৫৭ জন সমর্থককে নিয়েই যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে। কারণ বরিসকে সমর্থন জানিয়েছেন, এমন অনেক এমপি নিজেদের নাম প্রকাশ্যে আনতে চাননি। শেষ মুহূর্তের ভোটে ওই সব এমপি নিজেদের সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলতে পারেন বলে মনে করছিল ঋষি-শিবির। তাই ঠিক কারা কারা প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে সমর্থন করছেন, তাঁদের নাম প্রকাশ্যে আনার দাবি তুলেছিল তারা। গত কাল নাকি বরিসের সঙ্গে কথা হয়েছিল ঋষির। কিন্তু তা নিয়ে কোনও পক্ষই মুখ খুলতে চায়নি।
আজ ঋষি মনে করিয়েছেন, তিনি প্রধানমন্ত্রী মনোনীত হলে দলের ইস্তাহারের প্রতিশ্রুতিগুলি রাখার চেষ্টা করবেন। পাশাপাশি ব্রিটেনের মানুষকে একাধারে দায়িত্বশীল, সৎ ও পেশাদার সরকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছেন তিনি। এই সততা নিয়েই প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন বরিস জনসন। পার্টিগেট কেলেঙ্কারিতে এখনও তাঁর নাম জড়িয়ে। পার্লামেন্টে দাঁড়িয়ে গোটা দেশের মানুষকে লকডাউন চলাকালীন তাঁর সরকারি বাসভবনে পার্টি চলা নিয়ে বিপথে চালিত করার অভিযোগ রয়েছে জনসনের বিরুদ্ধে। পার্লামেন্টের প্রিভিলেজ কমিটি খুব শীঘ্রই সে নিয়ে তদন্ত শুরু করবে।
এর মধ্যেই আবার বিরোধী লেবার পার্টির নেতানেত্রীরা অবিলম্বে দেশে সাধারণ নির্বাচন আয়োজন করার জন্য গলা ফাটাচ্ছেন। তাঁদের দাবি, দেশের মানুষ আর কনজ়ারভেটিভদের চাইছেন না। ২০২৪ সালের আগে দেশে নির্বাচন হওয়ার কথা নয়। ঋষি আগামী কালই প্রধানমন্ত্রীর কুর্সির জন্য মনোনীত হলে তাঁর জন্য অর্থনীতির পাশাপাশি আরও অনেক বড় বড় চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞেরা।