বিতর্কসভায় ঋষি। নিজস্ব চিত্র
হাতে আর মাত্র ক’টা দিন। ব্রিটেনের রাজনৈতিক দলগুলি এখন নির্বাচনী প্রচারে তুমুল ব্যস্ত। টিভি চ্যানেলগুলিতেও চলছে একের পর এক বিতর্ক। দিন কয়েক আগেই মুখোমুখি দাঁড়িয়েছিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং বিরোধী দলনেতা জেরেমি করবিন। এ বার বরিসেরই দলের নেতা তথা ভারতীয় বংশোদ্ভূত ঋষি সুনককে একটি চ্যানেলের বিতর্কসভায় কার্যত ধরাশায়ী করে দিলেন চার বিরোধী নেত্রী। ওই চার জনকে সামলাতে হিমশিম খেতে দেখা গিয়েছে ক্যাবিনেট মন্ত্রী ঋষিকে। সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন তুমুল সমালোচনাও হচ্ছে তাঁর ।
ঋষির আর একটা পরিচয়ও আছে। তিনি ইনফোসিস প্রতিষ্ঠাতা নারায়ণমূর্তির জামাই। প্রধানমন্ত্রী বরিসের হয়ে তিনিই ছিলেন কালকের বিতর্ক সভায় কনজারভেটিভ পার্টির মুখ। অন্য দিকে, লেবার পার্টির নেত্রী রেবেকা লং বেইলি অংশ নেন দলনেতা জেরেমি করবিনের হয়ে।
রেবেকা ছাড়াও বিতর্কে অংশ নিয়েছিলেন স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির নেত্রী তথা বরিসের কট্টর সমালোচক নিকোলা স্টারজন, লিবারাল ডেমোক্র্যাটিক নেত্রী জো সুইনসন এবং গ্রিন পার্টির প্রাক্তন নেত্রী ক্যারোলাইন লুকাস। এ বারের ভোটে কেন ব্রিটেনের মানুষ তাঁর দলকে ভোট দেবেন, সেই সওয়াল করতে গিয়ে রেবেকাদের যুক্তির সামনে দাঁড়াতেই পারেননি ঋষি।
বিতর্কের শুরুতেই ২০১০ সালে ব্রিটেনের দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার অবস্থা নিয়ে লেবার পার্টিকে দোষেন ঋষি। সঙ্গে সঙ্গেই রেবেকা পাল্টা আক্রমণ শানিয়ে জানান, দেশের কিছু ব্যাঙ্কার আর টোরি নেতাদের সৌজন্যেই ব্রিটেনের আর্থিক অগ্রগতি তলানিতে ঠেকেছিল সেই সময়ে। এই প্রসঙ্গে বর্তমান ব্রিটিশ অর্থমন্ত্রী সাজিদ জাভিদের নামও নেন রেবেকা। একই ভাবে স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে কথা বলতে গিয়েও কোণঠাসা হতে হয়েছে ঋষিকে। নিকোলা এ বার জানান, বরিসের একটা কথাও তাঁরা বিশ্বাস করেন না। এক বছরের মধ্যে ব্রেক্সিটের ধাক্কা সামলে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু বিরোধী নেত্রী জো সুইনসনের কথায়, ‘‘আপনারা মনে করছেন ব্রেক্সিটের সমাধান দ্রুত বার করে ফেলবেন। আপনারা আসলে দশ সিরিজের
একটা শো-য়ের প্রথম এপিসোডে রয়েছেন এখন।’’
নিজেকে অভিবাসী পরিবারের সন্তান বলে পরিচয় দিয়েছেন ঋষি। একই সঙ্গে জানিয়েছেন, অভিবাসীদের প্রতি বিরূপ আচরণ ব্রিটেনে মানা হবে না। কিন্তু রেবেকা এখানেই এক সরকারি নীতির উদাহরণ টানেন। জানান, নার্সিংয়ে এখন ৪০ হাজার পদ খালি রয়েছে। অথচ ইইউ পরিবারভুক্ত দেশের বাইরে থেকে যাঁরাই এই চাকরির জন্য আবেদন করছেন, তাঁদেরই নিজেদের স্বাস্থ্য পরিষেবার খাতে প্রতি বছর ছ’শো পাউন্ড করে জমা করতে হচ্ছে। এর জবাবে ঋষি নীরবই থেকেছেন।
সোশ্যাল মিডিয়া এই চার নেত্রীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ। টুইটারে কেউ লিখেছেন, ‘‘ঋষিকে তো ওই চার জনের সামনে রোবটের মতো লেগেছে।’’ কেউ তাঁর শ্বশুরবাড়ির পরিচয় নিয়েও আক্রমণ করেছেন। লিখেছেন, ‘‘ঋষির স্ত্রী তো কোটিপতি ভারতীয়ের সন্তান। ব্রেক্সিটে আমজনতার কী হল, তাই তাঁর দেখার দরকার নেই।’’ নিকোলায় মুগ্ধ এক নেট-নাগরিকের মন্তব্য, ‘‘আপনাকে ভোট দেব বলেই স্কটল্যান্ডে চলে যাব ভাবছি।’’