অনিচ্ছা সত্ত্বেও ব্রেক্সিটের পথেই হাঁটতে হল ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে। (প্রতীকী ছবি / এএফপি)
ব্রেক্সিটকে বিপুল সমর্থন জানাল ব্রিটিশ পার্লামেন্ট। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত ব্রিটেনের তরফে চূড়ান্ত করতে পার্লামেন্টে যে প্রস্তাব আনা হয়েছিল, বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতায় সে প্রস্তাব পাশ হয়ে গেল। শাসক দল কনজারভেটিভ (টোরি) পার্টি এবং প্রধান বিরোধী দল লেবার পার্টির মোট ৪৯৮ জন এমপি ব্রেক্সিটকে সমর্থন করেছেন। প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট পড়েছে ১১৪টি। তবে টোরি এবং লেবার, দু’দলই বিদ্রোহের সম্মুখীন হয়েছে। দুই দলেরই বেশ কিছু এমপি হুইপ অগ্রাহ্য করে ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন বলে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম সূত্রের খবর।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য ব্রিটেনকে লিসবন চুক্তির ৫০ নম্বর ধারা প্রয়োগ করতে হবে। সেই ধারা প্রয়োগের পরই ব্রেক্সিটের বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতৃত্বের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের আলোচনা আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হবে। চলতি বছরের ৩১ মার্চের মধ্যে ৫০ নম্বর ধারা প্রয়োগ করা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে দেশবাসীকে কথা দিয়েছিলেন। পার্লামেন্টে ব্রেক্সিটের প্রস্তাব ৩৮৪ ভোটে জয়ী হওয়ার পর থেরেসা মে-র সামনে সে লক্ষ্য পূরণে আর কোনও বাধা রইল না।
টানা দু’দিন ধরে বিতর্কের পর ব্রেক্সিট নিয়ে ভোটাভুটি হল হাউস অব কমনসে। ছবি: এএফপি।
ইংল্যান্ডের এমপিরা বড় সংখ্যায় ব্রেক্সিটকে সমর্থন করলেও স্কটল্যান্ডের দল স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টি, ওয়েলসের দল পার্টি অব ওয়েলস এবং লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি ব্রেক্সিটের বিপক্ষে ভোট দিয়েছে। শাসক টোরিদের প্রবীণ নেতা তথা দলের প্রাক্তন চ্যান্সেলর কেন ক্লার্ক দলের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে ব্রেক্সিট প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন। লেবার পার্টির ৪৭ জন এমপি দলের সিদ্ধান্তের বিপক্ষে গিয়ে ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের নাতনি তথা হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্নের এমপি টিউলিপ সিদ্দিকও।
আরও পড়ুন: নিষেধাজ্ঞা জারির পরে ট্রাম্পের গলায় ফুটতে পারে অ্যাপল-কাঁটা
২০১৬-র জুনে ব্রিটেনে গণভোট নেওয়া হয়। তাতে ৫২ শতাংশের কাছাকাছি মানুষ ব্রেক্সিটের পক্ষে ভোট দেন। ৪৮ শতাংশের কিছু বেশি মানুষ ভোট দেন ব্রেক্সিটের বিপক্ষে। নীতিগত ভাবে কনজারভেটিভ পার্টি ব্রেক্সিটের বিপক্ষে থাকলেও গনভোটের রায় মেনে নিয়ে ব্রেক্সিটের তোড়জোড় শুরু করতে বাধ্য হয় সরকার। ডেভিড ক্যামেরন প্রধানমন্ত্রী পদ ছেড়ে দেন। থেরেসা মে তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন এবং ব্রেক্সিটের তোড়জোড় শুরু করেন। পার্লামেন্টের সম্মতি তিনি পেয়ে গেলেন। এ বার থেরেসা মে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে আলোচনা শুরু করবেন।
ব্রিটেনের বিদেশ মন্ত্রী বরিস জনসন হাউস অব কমনসের এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি গণভোটের সময়েও ব্রেক্সিটের পক্ষেই প্রচার করেছিলেন। স্বাভাবিক ভাবেই ব্রেক্সিটের প্রস্তাব পার্লামেন্টে পাশ হয়ে যাওয়ায় তিনি খুশি। তবে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর মন্তব্য, ‘‘হতে পারে আমরা ইউরোপীয় ইউনয়িন ছাড়ছি। কিন্তু আমরা ইউরোপ ছাড়ছি না।’’ ব্রেক্সিটের পর নতুন পরিচয় নিয়ে ব্রিটেন আত্মপ্রকাশ করবে এবং ইউরোপের জন্য আরও অনেক বেশি ইতিবাচক অবদান রাখবে বলে তিনি জানিয়েছেন।