Russia

টিকার ঘোষণা নিয়ে পুতিনের তড়িঘড়ি? স্পুটনিক ভি নিয়ে উঠছে একগুচ্ছ প্রশ্ন

অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন তৃতীয় পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়াল না চালিয়েই তড়িঘড়ি এই ঘোষণা কেন? এর পিছনে কি ভিন্ন কোনও কৌশল রয়েছে?

Advertisement

নিজস্ব প্রতিবেদন

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ অগস্ট ২০২০ ২৩:৩৮
Share:

প্রতীকী ছবি।

টিকার তথ্য চুরির অভিযোগ উঠেছিল। মানব শরীরে তার যথাযথ পরীক্ষা (হিউম্যান ট্রায়াল) হচ্ছে কিনা তা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র সতর্কবার্তাও ছিল। এত কিছুর মধ্যেও মঙ্গলবার করোনার টিকা আবিষ্কারের ঘোষণা করেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। আর তার পর তা নিয়ে কার্যত বানের জলের মতো প্রশ্নবাণ ধেয়ে এসেছে বিশ্বের বিভিন্ন মহল থেকে। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন তৃতীয় পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়াল না চালিয়েই তড়িঘড়ি এই ঘোষণা কেন? এর পিছনে কি ভিন্ন কোনও কৌশল রয়েছে?

Advertisement

করোনাভাইরাসের টিকা তৈরির দৌড়ে রয়েছে ব্রিটেন, আমেরিকা, রাশিয়া, ইংল্যান্ড, ভারত-সহ পৃথিবীর একাধিক দেশ। কোথাও টিকার হিউম্যান ট্রায়ালের প্রথম, দ্বিতীয় বা তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চলছে। এর মাঝেই ‘বাজিমাত’ রাশিয়ার। বিষয়টিকে কী ভাবে দেখছে টিকা তৈরির প্রতিযোগিতায় থাকা অন্য দেশগুলির চিকিৎসক, গবেষক এবং রাজনীতিবিদরা? বুধবার থেকে তৃতীয় পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়াল শুরু করতে চলেছে রাশিয়া। তার আগেই এই ঘোষণা নিয়ে সন্দিহান অনেকেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হেল্থ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেসের সচিব অ্যালেক্স অ্যাজার বলছেন, ‘‘টিকা তৈরিতে প্রথম হওয়া নয়, বিষয়টি হল আমেরিকা-সহ গোটা বিশ্বের মানুষের কাছে সেই টিকা কতটা নিরাপদ এবং কার্যকর।’’

‘স্পুটনিক ভি’ নিয়ে একই সুরে কথা বলছেন আমেরিকার বিভিন্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞও। আমেরিকার ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের প্রাক্তন কর্তা স্কট গডলিয়েবও রাশিয়ার তৈরি টিকার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

Advertisement

আরও পড়ুন: করোনা যুদ্ধে বাজিমাত রাশিয়ার? বিশ্বে প্রথম টিকা তৈরির দাবি পুতিনের

রাশিয়ার বিরুদ্ধে হ্যাক করে টিকা সংক্রান্ত তথ্য চুরির অভিযোগ আগেই তুলেছিল ব্রিটেন। যদিও তা অস্বীকার করেছে মস্কো। কিন্তু এ দিন পুতিন টিকা আবিষ্কারের কথা ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন ব্রিটিশ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞেরাও। তাঁদের দাবি, ওই টিকার উপযুক্ত পরীক্ষা হয়নি। কাজেই রাশিয়ার টিকা নিয়ে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন অনেকে। গত সপ্তাহেই টিকা তৈরির ক্ষেত্রে পরীক্ষার সমস্ত প্রক্রিয়া পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে পালনের বার্তা রাশিয়াকে দিয়েছিল হু। তার পরেও টিকা তৈরির ক্ষেত্রে রাশিয়ার এমন বিদ্যুৎগতি দেখে চমকে গিয়েছেন অনেকে। এ দিন হু-এর তরফে বলা হয়েছে, তারা ‘স্পুটনিক ভি’ সম্পর্কে তথ্য জোগাড় করতে রুশ প্রশাসনের সঙ্গে কথাবার্তা চালাচ্ছে। সারা বিশ্বে যে ৬টি টিকা হু-এর তালিকায় রয়েছে তার মধ্যে নেই রাশিয়ার ‘স্পুটনিক ভি’। ওই ৬টি টিকারই তৃতীয় পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়াল চলছে।

করোনার টিকার পরীক্ষা চলছে ভারতেও। রাশিয়ার তৈরি ওই টিকা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছেন এ দেশের চিকিৎসকদের একাংশ। সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ দেবকিশোর গুপ্ত বলছেন, ‘‘টিকা প্রয়োগ করার আগে কোনও মেডিক্যাল জার্নালে সেই সংক্রান্ত গবেষণাপত্র প্রকাশ করাই রীতি। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তা হয়নি। ধরা যাক, মহামারি আটকানোর তাড়ায় গবেষণা পত্র জার্নালে পাঠানোর সময় পাওয়া যায়নি। কিন্তু টিকা প্রয়োগের আগে ফেজ থ্রি ট্রায়াল দেওয়া বাধ্যতামূলক। কিন্তু স্পুটনিক ভি-র ক্ষেত্রে ফেজ থ্রি ট্রায়ালও অসম্পূর্ণ।’’ তৃতীয় পর্যায়ের হিউম্যান ট্রায়াল নিয়ে দেবকিশোর গুপ্ত বলছেন, ‘‘ফেজ থ্রি ট্রায়াল দিতে হয় তিনশো থেকে ৩ হাজার মানুষের উপর। টিকা দেওয়ার পর কিছু দিন কার্যকারিতার ওপর নজর রাখা হয়। এ জন্য সময় লাগে কয়েক মাস। রাশিয়ার আবিষ্কৃত টিকায় তা করা হয়নি।’’ এই প্রসঙ্গেই তিনি জানাচ্ছেন, টিকা বাজারে ছাড়ার ব্যাপারে ফেজ থ্রি ট্রায়াল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এই ট্রায়ালে তিনটি জিনিস দেখা হয়। প্রথমত টিকাটি কতটা নিরাপদ, দ্বিতীয়ত, এর কার্যকারিতা এবং তৃতীয়ত টিকার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা। তাঁর মতে, অন্তত তিন মাস না পেরোলে দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া বোঝা সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন: অবস্থার অবনতি প্রণবের, রাখা হয়েছে ভেন্টিলেশনেই

আবার ভাইরোলজিস্ট সিদ্ধার্থ জোয়ারদারের মতে, ‘‘উন্নত দেশের এক জন রাষ্ট্রপ্রধান যখন দায়িত্ব নিয়ে বিশ্বের মানুষের কাছে টিকার কথা ঘোষণা করেছেন তখন নিশ্চয়ই এর পিছনে কোনও যুক্তি রয়েছে। সেখানকার বিজ্ঞানীরা নিশ্চয়ই রাষ্ট্রপ্রধানকে ব্যাপারটা পরিষ্কার করে বুঝিয়ে বলেছেন এবং প্রমাণ দাখিল করেছেন তাই তিনি একথা জোর দিয়ে ঘোষণা করতে পেরেছেন।’’

তবে দেবকিশোর গুপ্তের মতো ওই টিকার একটি ব্যাপার সংশয় প্রকাশ করেছেন সিদ্ধার্থ জোয়ারদারও। তাঁর মতে, যে হেতু কোনও আন্তর্জাতিক মেডিক্যাল জার্নালে এই টিকার কথা প্রকাশিত হয়নি, তাই বিশ্বের বিজ্ঞানীরা এ বিষয়ে কিছুই জানেন না। তিনি আরও বলছেন, ‘‘স্থানীয় ভাবে টিকা কার্যকর হলেও, অন্য দেশে এর কার্যকারিতা নাও থাকতে পারে। কারণ কোভিড ১৯ ভাইরাসটি এক এক দেশে এক এক রকম ভাবে সংক্রমণ সৃষ্টি করছে। সবার জন্য টিকা কার্যকর কি না তা জানতে গেলে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর ওপর ট্রায়াল দিতে হয়। কিন্তু রাশিয়ার টিকাটির সেই ট্রায়াল হয়নি।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement