বাংলাদেশে গোপন বন্দিশালা বা আয়নাঘরের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন র্যাব প্রধান। —প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র।
গোপন বন্দিশালা বা আয়নাঘর ছিল বাংলাদেশে। এখনও তা আছে। ওই বন্দিশালার অস্তিত্বের কথা স্বীকার করে নিয়েছে বাংলাদেশ পুলিশের র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটেলিয়ন বা র্যাব। সেই সঙ্গে তারা এ-ও মেনে নিয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে একাধিক গুমখুন করা হয়েছে। সে সবের জন্য বৃহস্পতিবার ক্ষমা চাইলেন র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন, তিনি দায়িত্বে থাকাকালীন এই ধরনের ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে আর কখনও জড়িত হবে না র্যাব। যাঁরা র্যাব সদস্যদের দ্বারা নির্যাতিত হয়েছেন, যাঁদের পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তাঁদের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন শহিদুর। জানিয়েছেন, এর পরেও র্যাব অস্তিত্বশীল থাকবে কি না, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার সে বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
বাংলাদেশে শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়েছে হত ৫ অগস্ট। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে তিনি বাংলাদেশ ছেড়েছেন এবং ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন। তার পর বাংলাদেশে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসে। র্যাব হল বাংলাদেশ পুলিশের অপরাধদমন এবং সন্ত্রাসদমন শাখা। হাসিনার পতনের পর ৮ অগস্ট র্যাবের দায়িত্ব নেন শহিদুর।
হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন একাধিক ব্যক্তিকে গুমখুনের অভিযোগ উঠেছিল। শোনা যেত, সরকারের একটি গোপন বন্দিশালা রয়েছে, যার নাম আয়নাঘর। সেখানে দিনের পর দিন বিনা বিচারে অভিযুক্তদের আটকে রাখা হত বলে অভিযোগ। এমনকি, সরকারের বিরুদ্ধে কথা বললেও ঠাঁই হত গোপন ওই বন্দিশালায়। অভিযোগ, সরকারের নির্দেশে বাংলাদেশ পুলিশ খুন, গুমখুন বা অপহরণ করে আয়নাঘরে বন্দি করে রাখার মতো কাজ করেছে একাধিক বার। হাসিনার সরকার পড়ে যাওয়ার পর আয়নাঘরের কথা প্রকাশ্যে আসে। সেখান থেকে বন্দিরা মুক্তিও পান। সেই বন্দিশালার জন্য এ বার র্যাব ক্ষমা চাইল। এর আগে অতীত আচরণের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার শেখ মহম্মদ সাজ্জাত আলিও।
র্যাব মিডিয়া সেন্টার থেকে বৃহস্পতিবার শহিদুর বলেন, ‘‘আমি যত দিন দায়িত্বে আছি, র্যাবের কর্তারা কখনও কারও নির্দেশে গুম বা খুনের মতো কোনও অপরাধের সঙ্গে জড়িত হবেন না। আমি এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি। র্যাব সদস্যেরা যদি কোনও অপরাধে যুক্ত হন, তাঁর উপযুক্ত শাস্তি হবে। অতীতে র্যাবের অপরাধেরও বিচার হবে।’’ আয়নাঘর নিয়ে তিনি বলেন, ‘‘আয়নঘর ছিল। এখনও আছে। গুমখুনের ঘটনাগুলির তদন্তের জন্য যে কমিশন গঠিত হয়েছে, তারা নির্দেশ দিয়েছে, আয়নাঘর যে অবস্থায় ছিল, সেই অবস্থায় রেখে দেওয়া হবে। তাই কোনও পরিবর্তন করা হয়নি।’’