আমেরিকার রাস্তায় কৃষ্ণাঙ্গদের প্রতিবাদ। —ফাইল চিত্র।
আমেরিকায় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ হতে না হতেই কৃষ্ণাঙ্গদের ফোনে পাঠানো হচ্ছে বর্ণবিদ্বেষমূলক মেসেজ। আমেরিকায় বসবাসকারী কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষ, মহিলা, এমনকি পড়ুয়াদের কাছেও যাচ্ছে এই ধরনের মেসেজ। গত কয়েক দিন ধরেই এটি শুরু হয়েছে বলে অভিযোগ। নিউ ইয়র্ক, আলাবামা, ক্যালিফর্নিয়া, ওহায়ো, পেনসিলভেনিয়া-সহ বিভিন্ন প্রদেশ থেকে এই ধরনের অভিযোগ উঠে আসছে। সব ক্ষেত্রে মেসেজের ভাষা এক নয়। কিন্তু মেসেজ পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য একই। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের হেয় করা এবং দাসত্বপ্রথা ফিরিয়ে আনার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে মেসেজগুলিতে।
একের পর এক এই ধরনের মেসেজে প্রতিবাদের সুর চড়াতে শুরু করেছেন কৃষ্ণাঙ্গেরাও। আমেরিকার বিভিন্ন প্রদেশে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ জমা পড়েছে এই নিয়ে। পদক্ষেপ করেছে এফবিআইও। কৃষ্ণাঙ্গদের ফোনে বর্ণবিদ্বেষী মেসেজ পাঠানোর ঘটনার অনুসন্ধান শুরু করেছে এফবিআই এবং অন্য তদন্তকারী সংস্থাগুলি। তবে কে বা কারা এই ধরনের মেসেজ পাঠাচ্ছে, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেসেজে সংশ্লিষ্ট কৃষ্ণাঙ্গের কাছে যা কিছু আছে, সব নিয়ে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় যেতে বলা হচ্ছে। আবার কোনও মেসেজে আমেরিকার বাইডেন পরবর্তী প্রশাসনের কথাও বলা হয়েছে। কাউকে আবার একটি নির্দিষ্ট ঠিকানা পাঠিয়ে সেখানে চাষ করতে যেতে বলা হচ্ছে। মেসেজের সঙ্গে রয়েছে দাসত্বপ্রথা ফিরিয়ে আনার হুঁশিয়ারিও। বস্তুত, আমেরিকার ইতিহাসে কৃষ্ণাঙ্গদের চাষ করানোর সঙ্গে দাসত্বের যোগ রয়েছে। কৃষ্ণাঙ্গ দাসদের দিয়ে তুলো চাষ করানো হত আমেরিকায়। মূলত আফ্রো-আমেরিকানদের ব্যবহার করা হত এই কাজে।
সম্প্রতি এই বর্ণবিদ্বেষী মেসেজগুলিকে পুরনো সেই প্রথা ফিরিয়ে আনার হুঁশিয়ারি হিসাবে দেখছেন আমেরিকায় বসবাসকারী কৃষ্ণাঙ্গদের একাংশ। ক্যালিফর্নিয়ার বাসিন্দা কৃষ্ণাঙ্গ মহিলা তাশা ডানহাম এপিকে এই শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তাঁর ১৬ বছর বয়সি কন্যাকে এই ধরনের হুঁশিয়ারি পাঠানো হয়েছে। তাশা জানিয়েছেন, তিনি কোনও দিন দাসত্ব করেননি। তাঁর মা-ও করেননি। তবে দুই প্রজন্ম আগে তাঁদের পরিবার দাসত্ব করেছে। এই ধরনের মেসেজে আবারও সেই ‘নির্মম দাসত্ব’-এর প্রথা ফিরিয়ে আনার হুমকি দেখছেন তাশা।
আমেরিকার হবু প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের আবহেই এই পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় বিতর্ক আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। যদিও এই মেসেজগুলির সঙ্গে রিপাবলিকানদের যোগ নেই বলেই দাবি ট্রাম্প শিবিরের। সংবাদমাধ্যম ‘সিএনএন’-কে ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, এই টেক্সট মেসেজগুলির সঙ্গে ট্রাম্প শিবিরের কোনও যোগ নেই।
কে বা কারা এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত, তা খতিয়ে দেখছে এফবিআই। আমেরিকার তদন্তকারী সংস্থা জানিয়েছে তারা জাস্টিস ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে এ বিষয়ে। পাশাপাশি ফেডারেল কমিউনিকেশন কমিশনও বিষয়টির তদন্ত শুরু করেছে।