(বাঁ দিকে) লন্ডনের রাস্তায় অন্তর্বাস পরে প্রতিবাদ মহিলার এবং ইরানের প্রতিবাদী তরুণী (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
ইরানের পোশাকবিধি লঙ্ঘন করে সম্প্রতি আলোচনায় উঠে এসেছিলেন তেহরানের ইসলামিক আজ়াদ বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণী পড়ুয়া। পোশাকবিধির প্রতিবাদে তেহরানের রাস্তায় শুধু অন্তর্বাস পরে নেমেছিলেন। যদিও পরে পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে। সেই ঘটনার প্রতিবাদের রেশ গিয়ে পড়ল এ বার লন্ডনে। শহরের রাস্তায় বেশ কয়েক জন ইরানের প্রতিবাদী তরুণীর আটকের ঘটনাকে নিন্দা করে প্রতিবাদ জানান। তাঁদের মধ্যে এক জনকে আবার সেই একই ধরনের অন্তর্বাস পরে লন্ডনের রাস্তায় হাঁটতে দেখা গেল।
লন্ডনের রাস্তায় প্রতিবাদ দেখানোর বেশ কয়েকটি ভিডিয়ো সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। যদিও এই সব ভিডিয়োর সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার অনলাইন। বিভিন্ন পোস্টে দাবি করা হচ্ছে, প্রতিবাদী ইরানি তরুণীর প্রতি সংহতি এবং সমর্থন জানাতেই লন্ডনের রাস্তায় নেমেছেন মহিলারা। তাঁদের মধ্যে প্রায় সকলের পরনে ছিল লাল রঙের পোশাক। যা মাথা থেকে পা পর্যন্ত ঢাকা। হাতে পোস্টার। তাতে লেখা ‘নারীর জীবনের স্বাধীনতা’। প্রতিবাদের ভাষা হিসাবে যে ধরনের অন্তর্বাস বেছে নিয়েছিলেন ইরানের প্রতিবাদী তরুণী, ঠিক একই ধরনের অন্তর্বাসে লন্ডনের রাস্তায় ঘুরতে দেখা গেল এক মহিলাকে।
চলতি মাসের গোড়ার দিকে ইরানের পোশাকবিধিকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ঝড় তুলেছিলেন তেহরানের তরুণী। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে হেঁটেছিলেন শুধু অন্তর্বাস পরেই। ঘটনার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে আসতেই সেই তরুণীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর পর থেকেই আর কোনও খবর পাওয়া যায়নি তাঁর। তাঁকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে, গ্রেফতারির পর কোথায় রাখা হয়েছে তরুণীকে, তিনি কী অবস্থায় রয়েছেন— এখনও পর্যন্ত কিছুই জানা যায়নি। তবে অনেকে দাবি করছেন, তাঁকে মানসিক রোগের চিকিৎসাকেন্দ্রে রাখা হয়েছে। সন্দেহ, হেফাজতে তাঁর উপর অত্যাচার করা হয়।
ঘটনা প্রকাশ্যে আসতেই ইসলামিক আজ়াদ বিশ্ববিদ্যালয় তড়িঘড়ি ওই প্রতিবাদী তরুণীকে ‘মানসিক রোগী’ বলে দাবি করে। তবে বিশ্ববিদ্যালয় বা ইরান প্রশাসন যাই বলুক না কেন, ওই তরুণীর সাহসের প্রশংসা করে নানা মহল। তাঁর গ্রেফতারির খবর ছড়িয়ে পড়তেই ইরানের নানা প্রান্তে প্রতিবাদ দেখায় বিভিন্ন সংগঠন। রাষ্ট্রপুঞ্জও নজর রাখে বিষয়টির উপর। তবে এখনও পর্যন্ত ওই তরুণীর কোনও খোঁজ মেলেনি। অনেকেই আতঙ্কিত ওই তরুণীর অবস্থা মাহসা আমিনির মতো হবে না তো! ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে হিজাববিধি না মানার ‘অপরাধে’ ২২ বছর বয়সি মাহসাকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল পুলিশ। সেই গ্রেফতারির পর ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু হয় তাঁর। ওই ঘটনার পর বিশ্ব জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবাদের ঢেউ। হিজাব ফতোয়া উড়িয়ে, চুল কেটে প্রতিবাদে শামিল হয়েছিলেন ইরানের মেয়েরা। দু’বছর পর আবার সেই প্রতিবাদের ঢেউ উঠেছে ইরানে। শুধু ইরান নয়, প্রতিবাদের ঝড় বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে আছড়ে পড়েছে।