Anisuzzaman

প্রয়াত অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

আনিসুজ্জামানের জন্ম ১৯৩৭-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলার বসিরহাটে। কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

ঢাকা শেষ আপডেট: ১৫ মে ২০২০ ০৪:৪৪
Share:

আনিসুজ্জামান (১৯৩৭-২০২০)

তাঁর আত্মজীবনী ‘বিপুলা পৃথিবী’র শেষ বাক্য ছিল— ‘আমাদের পথচলা এক সময় থেমে যায়, জীবন থামে না।’ থেমে গেল বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, লেখক, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, মৌলবাদ-বিরোধী আন্দোলনের পুরোধা এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আনিসুজ্জামান (৮৩)-এর পথচলা। তাঁর পুত্র আনন্দ জামান জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় অধ্যাপকের। গুরুতর অসুস্থতার কারণে ২৭ এপ্রিল তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। রাতে তাঁর করোনা পরীক্ষার ফলও পজিটিভ এসেছে।

Advertisement

আনিসুজ্জামানের জন্ম ১৯৩৭-এর ১৮ ফেব্রুয়ারি অবিভক্ত বাংলার বসিরহাটে। কলকাতার পার্ক সার্কাস হাইস্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু। পরে তাঁর পরিবার তৎকালীন পূর্ববঙ্গে চলে এলে খুলনা জেলা স্কুলে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জনের পরে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বি‌শ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন আনিসুজ্জামান। ১৯৫২-র ভাষা আন্দোলন এবং ১৯৬৯-এ পাকিস্তান-বিরোধী গণ-অভ্যুত্থানে তিনি সক্রিয় ভাবে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ভারতে গিয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য হিসেবে কাজ করেন আনিসুজ্জামান। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরে ১৯৭২-এ জাতীয় শিক্ষা কমিশনের সদস্য হন। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস নিয়ে তাঁর গবেষণা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। স্বাধীন বাংলাদেশে রাজাকার ও মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আজীবন প্রথম সারিতে থেকেছেন আনিসুজ্জামান।

শিক্ষা ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ সরকার তাঁকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অসামরিক পুরস্কার একুশে পদক এবং সাহিত্যে অবদানের জন্য ২০১৫-য় সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার দেয়। ১৯৯৩ ও ২০১৭-এ দু’বার আনন্দ পুরস্কার অর্জন করেন আনিসুজ্জামান। এই পুরস্কারের প্রক্রিয়ার সঙ্গে তিনি দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট ছিলেন। সাহিত্যে ও শিক্ষায় অবদানের জন্য পেয়েছেন পদ্মভূষণ। পেয়েছেন বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগত্তারিণী পদক, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট। ছিলেন ঢাকা বাংলা একাডেমির সভাপতিও।

Advertisement

আরও পড়ুন: অধ্যাপক আনিসুজ্জামান: চলে গেলেন আশ্রয়ের মহীরুহ

আনিসুজ্জামানের লেখা অনেক বইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য— মুসলিম মানস ও বাংলা সাহিত্য (১৯৬৪), মুসলিম বাংলার সাময়িকপত্র (১৯৬৯), স্বরূপের সন্ধানে (১৯৭৬), আঠারো শতকের বাংলা চিঠি (১৯৮৩), পুরোনো বাংলা গদ্য (১৯৮৪), আমার একাত্তর (১৯৯৭), মুক্তিযুদ্ধ এবং তার পর (১৯৯৮), আমার চোখে (১৯৯৯), বিপুলা পৃথিবী (২০১৭)।

জাতীয় অধ্যাপকের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সংসদের বিরোধী দলনেতা গোলাম মহম্মদ কাদের। আমৃত্যু উপদেষ্টার প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছে মৌলবাদ-বিরোধী সংগঠন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে লড়াই এক বিশ্বস্ত সঙ্গীকে হারাল, বলেছে কলকাতার ইন্দো-বাংলাদেশ ফোরাম ফর সেকুলার হিউম্যানিজ়ম। কলকাতা তথা পশ্চিমবঙ্গ হারাল এক প্রাজ্ঞ এবং সহৃদয় হিতৈষীকে।

আরও পড়ুন: তিস্তাপারের বৃত্তান্ত রেখে চলে গেলেন দেবেশ রায়

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement