Prison Mirror

দেড়শো বছরের দিকে পা বাড়াচ্ছে জেলের সংবাদপত্র

স্থানীয় খবরের কাগজ, যেখানে প্রধানত শহরতলি, অথবা কাউন্টির খবর প্রকাশিত হয়, এত দিন তার পাঠক ছিল যথেষ্ট। কিন্তু কোভিড অতিমারির পরে আমেরিকা-সহ পৃথিবীর নানা দেশেই অনেক স্থানীয় ও ছোট সংবাদপত্রের ছাপা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

বস্টন শেষ আপডেট: ২১ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:৩০
Share:

প্রিজ়ন মিরর।

বিশ শতকের প্রথম দিকে আমেরিকায় খবরের কাগজের সংখ্যা ছিল ২৪ হাজার। কিন্তু ২০০৫ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে ২৯০০টি সংবাদপত্র। এই সময়ে বেঁচে থাকা প্রায় ৬ হাজার সংবাদপত্রের বেশির ভাগই সাপ্তাহিক। বেশির ভাগ কাগজ এখন ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার কারণে আরও কমে গেছে ‘কাগজ’ পড়া। স্থানীয় খবরের কাগজ, যেখানে প্রধানত শহরতলি, অথবা কাউন্টির খবর প্রকাশিত হয়, এত দিন তার পাঠক ছিল যথেষ্ট। কিন্তু কোভিড অতিমারির পরে আমেরিকা-সহ পৃথিবীর নানা দেশেই অনেক স্থানীয় ও ছোট সংবাদপত্রের ছাপা বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

Advertisement

এই পরিস্থিতিতে, একটি ছোট্ট খবরের কাগজ পার করে দিল ১৩৭ বছর। ‘প্রিজ়ন মিরর’ নামের কাগজটি প্রকাশিত হয় আমেরিকার মিনেসোটা প্রদেশের স্টিলওয়াটার নামে একটি সংশোধনাগার থেকে। এই সংবাদপত্রের প্রথম সংখ্যাটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৮৭ সালে। আমেরিকার বিভিন্ন সংশোধনাগার থেকে প্রকাশিত কাগজগুলির মধ্যে এটিই
সব থেকে পুরোনো।

এই সংবাদপত্রে লেখেন এবং এটি সম্পূর্ণ ভাবে চালান স্টিলওয়াটারের আবাসিকেরা। কী থাকে এই খবরের কাগজে? বন্দি আবাসিকদের নিজেদের অভিজ্ঞতা ও তাঁদের সমস্যার কথা যেমন থাকে, তেমনই সেই অঞ্চল, দেশ এবং গোটা পৃথিবীরও অনেক খবর থাকে। ষ্টিলওয়াটার সংশোধনাগারের আবাসিকেরা তাঁদের নিজেদের কাগজে লেখেন বিভিন্ন আইনের বিশ্লেষণ, বইয়ের সমালোচনাও। লেখা থাকে সংশোধনাগারের মধ্যে হওয়া সমস্যা নিয়ে। থাকে দেশের এবং বিদেশের খবরও। কোন লেখা ছাপা হবে এবং সংবাদপত্রের হয়ে কারা কাজ করবেন, তার জন্য রীতিমতো প্রতিযোগিতা হয়। পল গর্ডন, ‘প্রিজ়ন মিরর’-এর এক জন সম্পাদক, যিনি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়ে ওই সংশোধনাগারে রয়েছেন, তাঁর কথায়, ‘‘আমি লিখি কারণ পৃথিবী থেকে চলে যাওয়ার আগে, যে বিষয়গুলি আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ, সেগুলি নিয়ে লিখে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য রেখে যেতে চাই এবং একই সঙ্গে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে এই সংশোধনাগারের একটা সেতু গড়তে চাই।’’ সংশোধনাগারের আর এক আবাসিক এবং এই সংবাদপত্রের সিনিয়র এডিটর প্যাট্রিক বোঙ্গা, যিনি এখন জেলের বাইরে, তিনি বলেন ‘‘এই খবরের কাগজের কাজ আমাকে জীবনে প্রথম বার অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে এবং অন্যের মতামত শুনতে শিখিয়েছে। আমি বিশ্বাস করি এই ধরনের কাজ আমাদের অপরাধের বৃত্ত থেকে বার করে আনার ক্ষমতা রাখে। একটা খবরের কাগজ প্রকাশ করা এবং এতে লেখা আমাদের মতো সংশোধনাগারের আবাসিকদের মধ্যে একটা আত্মসম্মানবোধ ও দায়িত্ববোধ জাগিয়ে তুলেছে।’’

Advertisement

তবে এই ‘প্রিজ়ন জার্নালিজ়ম’ বা সংশোধনাগার সাংবাদিকতা আদপেই সহজ কাজ নয়। সংশোধনাগারে কোনও ইন্টারনেট নেই। তাই আবাসিকদের সংবাদের উৎস হল অন্য খবরের কাগজ। কোনও বিষয় ইন্টারনেট থেকে জানতে হলে তাঁরা সংশোধনাগারের কর্মচারীদের সাহায্য নিয়ে প্রিন্ট আউট জোগাড় করেন। এ ছাড়া, আবাসিকদের লেখা ‘সেন্সর’ করা হয়। স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ‘প্রিজ়ন জার্নালিজ়ম প্রজেক্ট’-এর প্রধান ইউকারি কেন-এর মতে, সেন্সরশিপ থাকা সত্ত্বেও বা শুধু আবাসিকেরা এই কাগজ পড়লেও, একটা খুব ইতিবাচক প্রভাব আছে এই কাজটার।

আশার কথা, ৩০ বছর আগে আমেরিকার সংশোধনাগার থেকে প্রকাশিত কাগজের সংখ্যা ছিল ছয়। যেটা এখন বেড়ে পঁচিশ ছাড়িয়েছে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement