অকপট হ্যারি। ফাইল চিত্র।
‘‘দাদা চিৎকার করছিল, বাবা একগুচ্ছ মিথ্যে কথা বলছিল, আর ঠাকুরমা... তিনি তো চুপচাপ বসেছিলেন।’’
হ্যারি-মেগানকে নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রে ব্রিটেনের ছোট রাজকুমারের এই ‘অকপট ভাষণ’ রাজপরিবারের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্কের ফাটল আরও বাড়িয়ে দেবে, সে বিষয়ে রাজপরিবারের ঘনিষ্ঠ মহল ও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের কোনও সন্দেহই নেই। তবে যাঁদের উদ্দেশে হ্যারির এই উক্তি, সেই রাজা তৃতীয় চার্লস ও তাঁর বড় ছেলে, যুবরাজ উইলিয়াম এখনও এ বিষয়ে মুখ খোলেননি।
আজ মুক্তি পেয়েছে আমেরিকা নিবাসী হ্যারি-মেগানকে নিয়ে একটি ওটিটি প্ল্যাটফর্মের তৈরি তথ্যচিত্রের দ্বিতীয় তথা শেষ ভাগ। প্রথম ভাগের মতো এই ভাগেও রয়েছে তিনটি পর্ব। প্রথম তিন পর্বে হ্যারি ও মেগানের সমালোচনার তিরের মুখ ছিল ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের দিকে। আর শেষ পর্বে তাঁরা চাঁছাছোলা ভাবে আক্রমণ করেছেন হ্যারির পরিবার, অর্থাৎ, ব্রিটিশ রাজপরিবারকে।
এই তথ্যচিত্রে একটি বিশেষ দিনের কথা উল্লেখ করেছেন রাজকুমার হ্যারি। ২০২০ সালের সেই দিনটিতে স্যান্ড্রিংঅ্যামের রাজপ্রাসাদে হ্যারিকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন রানি দ্বিতীয় এলিজ়াবেথ। হ্যারিকে বিশেষ ভাবে বলে দেওয়া হয়েছিল, স্ত্রী মেগানকে যেন সঙ্গে নিয়ে আসেন তিনি। মেগান ও হ্যারি রাজপরিবারের প্রতিনিধি হয়ে কী কী দায়িত্ব পালন করবেন, মূলত সে বিষয়েই কথা বলার জন্য এই ঘরোয়া বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল।
কী হয়েছিল সেই বৈঠকে?
হ্যারির কথায়, ‘‘প্রথম থেকেই উইলিয়াম চিৎকার করতে শুরু করে দিয়েছিল। আমাকে কোনও কথাই বলতে দিচ্ছিল না। যা-ই বলতে যাই, ধমক দিয়ে থামিয়ে দেয়। আর বাবা যে কথাগুলো বলছিলেন, সেগুলো সম্পূর্ণ অসত্য। ওঁদের হাবভাব দেখে আমি সে দিন খুবই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।’’ সেই বৈঠকে ছিলেন তৎকালীন রানি, দ্বিতীয় এলিজ়াবেথও। ছেলে ও নাতিদের তরজায় তাঁর ভূমিকা কী ছিল? সেই প্রসঙ্গে হ্যারির মন্তব্য, ‘‘ঠাকুরমা কোনও কথাই বলছিলেন না। তাঁর মন্ত্রণাদাতারা যা বলছিলেন, তাই শুধু ওঁকে শুনে যেতে হচ্ছিল।’’
এই পর্বেও ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের প্রতি নানা অভিযোগ জানিয়েছেন হ্যারি ও মেগান। তার মধ্যে প্রধান অভিযোগ— বাকিংহাম প্রাসাদের ‘নির্দেশে’ মেগান সম্পর্কে ভূরি ভূরি মিথ্যাকথা প্রকাশ করা। হ্যারির দাবি, রাজপরিবারের নানা ‘দুষ্কর্মের কথা’ যাতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে ফাঁস হয়ে না যায়, সেই গোপনীয়তা রক্ষা করার প্রতিশ্রুতির বিনিময়েই মেগান সম্পর্কে অসংখ্য মিথ্যা তথ্য দেওয়া হত সংবাদমাধ্যমকে।
হ্যারি-মেগানের দাবি, ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম প্রথম থেকে কিন্তু মেগানের উপরে বিরূপ ছিল না। বিয়ের পরে পরে মেগান সম্পর্কে ইতিবাচক কথাবার্তাই লেখা হত ব্রিটিশ সংবাদপত্র ও ট্যাবলয়েডগুলিতে। যেমন, তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, বিয়ের পরে কী ভাবে দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠছিলেন মেগান। যেমন, গ্রেনফেল টাওয়ার অগ্নিকাণ্ডের পরে হ্যারির স্ত্রী দুর্গতদের পাশে দাঁড়িয়ে সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় জায়গা করে নিয়েছিলেন। বিয়ের পরে তাঁদের অস্ট্রেলিয়া সফরও আন্তর্জাতিক তথা ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমে প্রশংসিত হয়েছিল বলে তথ্যচিত্রে দাবি করা হয়েছে। সেখানেই রাজপরিবারের সমস্যা তৈরি হয় বলে দাবি করেছেন হ্যারিরা। তাঁদের কথায়, ‘‘রয়্যাল অ্যালবার্ট হলের একটি অনুষ্ঠানে রানিও ছিলেন। কিন্তু পরের দিনের খবরের কাগজের প্রথম পাতায় শুধু মেগানের ছবি ছাপা হয়েছিল। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনা রাজপরিবার মেনে নিতে পারেনি।’’ এবং, হ্যারির দাবি অনুযায়ী, ‘‘যখনই আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যম টের পেল যে রাজপরিবার আমাদের পাশে নেই, তখনই তাদের সুর পাল্টে গেল।’’
এখনও রাজপরিবারের তরফে হ্যারিদের এই অভিযোগ নিয়ে কোনও মন্তব্য করা হয়নি।