অমিত শাহ।
ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ‘সোনালি অধ্যায়’ চলছে, দাবি করে থাকেন দু’দেশের শীর্ষ নেতৃত্ব। কিন্তু লোকসভায় নাগরিকত্ব আইন সংশোধনী বিল পাশ ও তার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জবাবি বক্তৃতায় ক্ষোভের চোরা স্রোত তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে।
বিল নিয়ে বিতর্কে পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশকে এক বন্ধনীতে রেখে অমিত বলেন, ‘‘এই তিন প্রতিবেশী দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম। অন্য ধর্মের মানুষেরা নিপীড়িত হচ্ছেন সেখানে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘একাত্তরের পরেও সে-দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের উপরে নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।’’ ঢাকা সূত্রের খবর, সে-দেশের কট্টর মৌলবাদী এবং দক্ষিণপন্থী অংশ অক্সিজেন পেয়েছে এতে। ভারত-বিদ্বেষী প্রচারের ইন্ধন জোগাতে শুরু করে দিয়েছে বিএনপি। যথেষ্ট বিড়ম্বনায় শেখ হাসিনা সরকার। চাপ বেড়েছে সে-দেশের সংখ্যালঘু, বিশেষ করে হিন্দুদের উপরেও।
ঢাকা সূত্রের খবর, এত দিন ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের বার্তা দেওয়া হত, ভিটেমাটি কামড়ে পড়ে থাকুন। এখন পরিস্থিতি বদলাবে। গ্রামেগঞ্জে জামাতপন্থী নেতা, কর্মী ও সংগঠনের পক্ষ থেকে সংখ্যালঘুদের উপরে চাপ তৈরি করা হবে। আওয়ামি লিগের এক নেতার মতে, ‘‘এ বার সংখ্যালঘুদের বলা হবে, ভারত তো দরজা খুলেই রেখেছে, বাংলাদেশের মাটি ছেড়ে তাঁরা যেন সেখানেই ফিরে যান তারা।’’
অসমের এনআরসি নিয়ে আগে থেকেই বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক পরিসরে ভারত-বিরোধী আবহাওয়া এবং অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। এখন গোটা দেশে এনআরসি তৈরির কথা বলছে কেন্দ্র। গত অক্টোবরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে যে-কূটনৈতিক কর্তারা ভারতে এসেছিলেন, তাঁদের মতে, অসম, পশ্চিমবঙ্গ থেকে মুসলিমদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর আতঙ্ক তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের জনমানসে। যা ঘরোয়া রাজনীতিতে হাসিনার জন্য আদৌ অনুকূল নয়। এমনিতেই রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দেওয়া নিয়ে দেশে প্রবল বিরোধিতার সম্মুখীন হচ্ছেন তিনি। এ বার নাগরিকত্ব আইন সংশোধনের জেরে আওয়ামি লিগের ইসলামপন্থী কট্টর অংশও আরও বেশি করে ভারত-বিরোধিতার প্রচার শুরু করতে পারেন। যা ক্রমশ ভারত-বাংলাদেশ কৌশলগত ও বাণিজ্যিক আদানপ্রদানে বাধা হয়ে উঠতে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা। মাঝখান থেকে বাংলাদেশ নিয়ে সদা আগ্রহী চিনের প্রতি নির্ভরতা বাড়তে পারে ঢাকার।
সরকারি ভাবে বিষয়টি নিয়ে এখনও রা কাড়েনি হাসিনা সরকার বা তাঁর আওয়ামি লিগ। তবে প্রতিপক্ষ বিএনপির মহাসচিব আলমগির বলেছেন, ‘‘ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যে মারাত্মক সাম্প্রদায়িকতা এবং ঘৃণা মিশে রয়েছে। ভারতের দায়িত্বশীল নেতারা এমন মন্তব্য করলে তা শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না।’’