চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। —ফাইল চিত্র।
২০০-র বেশি নতুন কারাগার বানিয়ে ফেলেছে চিন সরকার। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সেই সমস্ত জেলখানা। প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের নির্দেশেই এই কারাগারগুলি তৈরি করা হয়েছে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার পুরনো কারাগার সংস্কার করে খোলা হয়েছে নতুন বিভাগ। সেখানে নতুন নিয়ম চালু করছে সরকার। প্রতিটি কারাগারের দেওয়ালে লাগানো রয়েছে নরম গদি!
সিএনএন জানিয়েছে, দেশ জুড়ে দুর্নীতিদমন অভিযান শুরু করেছেন জিনপিং। তার জন্যই নতুন কারাগারগুলি তৈরি করা হয়েছে। এই কারাগারের নাম দেওয়া হয়েছে ‘লিউঝি সেন্টার’। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত আছেন, এমন সন্দেহভাজনদের ধরে এই সেন্টারগুলিতে নিয়ে আসা হবে। চিন সরকারের নিদান অনুযায়ী, অন্তত ছ’মাস সেখানে তাঁদের বন্দি করে রাখা যাবে বিনা বাধায়। এই সময়ের মধ্যে তাঁরা কোনও আইনি সাহায্য পাবেন না। এমনকি, দেখা করতে পারবেন না পরিবারের সঙ্গেও। স্রেফ সন্দেহের বশেই আটক করা যাবে অভিযুক্তদের।
কিন্তু নরম গদি কেন?
জিনপিংয়ের এই ‘লিউঝি সেন্টার’গুলির নানা বিশেষত্ব রয়েছে। বন্দি অবস্থায় কেউ যাতে নিজেকে আঘাত করতে না পারেন, তার জন্য দেওয়ালে লাগানো আছে নরম গদি। ছ’মাস পর ‘লিউঝি সেন্টার’ থেকে বেরিয়ে এক জন দাবি করেছিলেন, তাঁকে প্রতি দিন ১৮ ঘণ্টা সোজা হয়ে বসিয়ে রাখা হত, ঘুমোনোর অবকাশও দেওয়া হত না। এমনই নানা ধরনের অত্যাচারের অভিযোগ উঠেছে জিনপিংয়ের আধিকারিকদের বিরুদ্ধে।
২০১২ সালে চিনে ক্ষমতায় এসেছিলেন জিনপিং। তার পর থেকে চিনের কমিউনিস্ট পার্টিতে তাঁর মুঠি আরও শক্ত হয়েছে। বর্তমানে চিনের প্রেসিডেন্ট হিসাবে জিনপিংয়ের তৃতীয় মেয়াদ চলছে। বরাবর নিজের দুর্নীতি-বিরোধী ভাবমূর্তিকে অটুট রাখতে চেয়েছেন জিনপিং। নানা সময়ে তার জন্য নানা পদক্ষেপ করেছেন। দেশ জুড়ে ২০০-র বেশি ‘লিউঝি সেন্টার’ তৈরি তাঁর সেই প্রচেষ্টারই অন্যতম অঙ্গ।
চিনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে এত দিন ‘শুয়াংগুই সিস্টেম’ চালু ছিল। দুর্নীতিতে অভিযুক্তদের সেখানে বন্দি করা হত। অত্যাচার এবং হেনস্থার অভিযোগে দীর্ঘ দিন ধরে সমালোচিত হয়ে আসছে সেই ব্যবস্থা। ‘লিউঝি সেন্টার’-এর মাধ্যমে তাকেই আবার নতুন রূপে ফিরিয়েছেন জিনপিং।
দুর্নীতিদমন অভিযানে শাসকদলের কর্তাব্যক্তি থেকে শুরু করে বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের আধিকারিক, কাউকেই রেয়াত করবেন না জিনপিং। এমনকি, ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠলেও তাঁদের নিয়ে আসা হবে এই বিশেষ কারাগারে। ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে চিনের নানা প্রান্তে ‘লিউঝি সেন্টার’ তৈরি হয়েছে। কোভিড অতিমারি-পরবর্তী সময়ে তা আরও বেড়েছে। নতুন এই কারাগারগুলি নিয়েও নানা মহলে সমালোচনা শুরু হয়েছে।