ফ্রান্সের বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী মাইকেল বার্নিয়ের (বাঁ দিকে জোড়হস্তে দাঁড়িয়ে)। ছবি: রয়টার্স।
আস্থাভোটে হেরে পদত্যাগ করতে চলেছেন ফ্রান্সের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল বার্নিয়ের। অকালভোটে জিতে তিন মাস আগেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বাজেট বরাদ্দ নিয়ে বিরোধী দলগুলির তোপের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। বুধবার ফরাসি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বামপন্থী এবং অতি দক্ষিণপন্থী সদস্যেরা একজোট হয়ে বার্নিয়েরের বিরুদ্ধে ভোট দেন। বিদায়ী ফরাসি প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে ‘অনাস্থা’ জানান ৩৩১ জন সদস্য। ফরাসি সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার সকালেই ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরেঁর কাছে পদত্যাগপত্র জমা দিতে চলেছেন বার্নিয়ের।
১৯৬২ সালের পর ফ্রান্সে আর কোনও প্রধানমন্ত্রী কিংবা তাঁর পরিচালিত মন্ত্রিসভাকে পদত্যাগ করতে হয়নি। বার্নিয়ের এবং তাঁর নেতৃত্বাধীন মন্ত্রিসভার সদস্যেরা পদত্যাগ করায় ফ্রান্সে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক সঙ্কট ঘনীভূত হল বলেই মনে করা হচ্ছে। জুলাই মাসের আগে ফ্রান্সে নতুন প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা কম। এই পরিস্থিতিতে দেশে বাজেট বরাদ্দ এবং অন্য প্রশাসনিক কাজ কী ভাবে হবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
তবে ফরাসি সংবাদমাধ্যমগুলির একাংশের দাবি, ফরাসি প্রেসিডেন্ট মাকরঁ শনিবার নতুন প্রধানমন্ত্রীর নাম ঘোষণা করতে পারেন। আর একটি অংশের দাবি, আপাতত বার্নিয়েরকেই তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিতে পারেন তিনি।
ফরাসি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষে কোনও দলেরই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। সেখানে মূলত তিনটি দলের প্রভাব রয়েছে। একটি মাকরঁর সেন্ট্রিস্ট বা মধ্যপন্থী দল, একটি বামপন্থী নিউ পপুলার ফ্রন্ট এবং অন্যটি অতি দক্ষিণপন্থী ন্যাশনাল র্যালি। প্রসঙ্গত, গত কয়েক বছর ধরেই ফ্রান্সে নাগরিকদের দৈনন্দিন খরচ বাড়ছে। মূলত এই অর্থনৈতিক সঙ্কটকে হাতিয়ার করেই মাকরঁর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছিল অতি দক্ষিণপন্থী ন্যাশনাল র্যালি। কিন্তু তাদের ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতে তিন মাস আগে অকালভোটের ডাক দেন মাকরঁ। বামপন্থী পার্লামেন্ট সদস্যদের সমর্থনে প্রধানমন্ত্রী করেন রক্ষণশীল বার্নিয়েরকে। কিন্তু তাঁর অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে বেশ কয়েক দিন ধরেই প্রশ্ন তুলছিল বিরোধী দলগুলি। তারা হুঁশিয়ারির সুরে জানিয়েছিল, সরকার নীতি বদল না-করলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হবে।
সেই মতোই অনাস্থা প্রস্তাব এনে বার্নিয়েরকে ক্ষমতাচ্যুত করল ঐক্যবদ্ধ বিরোধীরা। ২০২৭ সালে ফ্রান্সে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। সে দেশের একাংশের মতে রাজনৈতিক সঙ্কট কাটাতে এখনই প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ইস্তফা দিন মাকরঁ।