নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র
এটা যুদ্ধের সময় নয়। ফের মনে করালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ইউক্রেন সফরে যাওয়ার আগে তাঁর এই মন্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করা হচ্ছে। বুধবার পোল্যান্ডের রাজধানী ওয়ারশয়ে অনাবাসী ভারতীয় এবং ভারতীয়দের সামনে বক্তৃতা করেন মোদী। সেখানেই গৌতম বুদ্ধের অহিংসার দর্শনের তুলনা টেনে মোদী বলেন, “ভারত বুদ্ধের ঐতিহ্যে বিশ্বাসী। তাই ভারতে শান্তিতে বিশ্বাস রাখে, যুদ্ধে নয়।”
১০ ঘণ্টার ট্রেন সফর করে শুক্রবার পোল্যান্ড থেকে ইউক্রেনে যাবেন মোদী। বৈঠক করবেন সে দেশের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জ়েলেনস্কির সঙ্গে। বিদেশ মন্ত্রকের সচিব (পশ্চিম) তন্ময় লাল জানিয়েছেন, জ়েলেনস্কির সঙ্গে বৈঠকে প্রাধান্য পাবে কৃষি, পরিকাঠামো, স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়। রাশিয়ার সঙ্গে প্রায় আড়াই বছর ধরে চলা যুদ্ধে বিপর্যস্ত ইউক্রেনকে ভারত সাহায্য করবে কি না, এই প্রশ্নের উত্তরে এস জয়শঙ্করের মন্ত্রক জানিয়েছে, যদি প্রয়োজন হয়, তবে ভারত কেবল এই সংঘাতের শান্তিপূর্ণ সমাধানের পথই খুঁজবে না, কী ভাবে সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসা যায়, তার দিশাও দেখাবে।
১৯৯১ সালের পর এই প্রথম ভারতের কোনও প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেনে যাচ্ছেন। ছয় সপ্তাহ আগেই রাশিয়া সফরে গিয়েছিলেন মোদী। মনে করা হচ্ছে, কূটনৈতিক ক্ষেত্রে ভারসাম্যের বার্তা দিয়েই এ বার মস্কোর প্রতিদ্বন্দ্বী দেশে যাচ্ছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। ইউক্রেনে যাওয়ার আগে মোদী প্রবাসী ভারতীয়দের উদ্দেশে আরও বলেন, “সহানুভূতি ভারতীয়দের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যখনই কোনও দেশ সঙ্কটে পড়েছে, প্রথম দেশ হিসাবে ভারত সাহায্য করেছে। যখন কোভিড এল, তখন ভারত বলেছিল, আগে মানবিকতা।” রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধের আবহে ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ থেকে চলে আসা ভারতীয় পড়ুয়াদের আশ্রয় দেওয়া এবং সাহায্য করার জন্য পোল্যান্ডের সরকার এবং সে দেশের অনাবাসী ভারতীয়দের ধন্যবাদ জানিয়েছেন মোদী।
প্রসঙ্গত, এর আগে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকেও মোদী স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন যে, এটা যুদ্ধের সময় নয়। যে কোনও আন্তর্জাতিক সঙ্কট যে কূটনৈতিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই মেটানো সম্ভব, তা বার বার জানিয়ে এসেছে নয়াদিল্লি। গত জুলাই মাসে অস্ট্রিয়া সফরে গিয়ে মোদী বলেছিলেন “ভারত বিশ্বকে বুদ্ধ দিয়েছে, যুদ্ধ নয়।” সেই মন্তব্যেরই প্রতিধ্বনি শোনা গেল এ বার পোল্যান্ডে।
পোল্যান্ড থেকে মোদী দেশের বিদেশনীতিতে বদল আসার ইঙ্গিতও দেন। তিনি বলেন, “কয়েক দশক ধরে বিদেশনীতির ক্ষেত্রে ভারত অন্য দেশগুলির থেকে দূরত্ব বজায় রাখত। পরিস্থিতি এখন বদলে গিয়েছে। আজ ভারতের নীতি হল সব দেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রাখা। আজকের ভারত সবার সঙ্গে সংযোগ রাখতে চায়। কারও নাম না করলেও মনে করা হচ্ছে, মোদী জওহরলাল নেহরুর আমলের জোট নিরপেক্ষ নীতিকেই আক্রমণ করেছেন।