আমেরিকান এয়ারলাইন্সের বিমান। ছবি: ইনস্টাগ্রাম
গন্তব্যে যাচ্ছিল যাত্রিবাহী বিমান। মাঝ আকাশে আচমকাই একটি ঝাঁকুনি দিয়ে সটান নীচে নামতে শুরু করল সেটি। স্রেফ তিন মিনিটের মধ্যে ১৫ হাজার ফুট অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক এভারেস্ট সমান উচ্চতা নেমে এল প্লেনটি। পরের আট মিনিটে আরও পাঁচ হাজার ফুট। আকাশ থেকে এমন সজোরে নীচে নামার সময় ভিতরের যাত্রীদের কী অবস্থা হয়েছিল, সমাজ মাধ্যমে তার বিবরণ দিয়েছেন এক যাত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘‘বহুবার প্লেনে সফর করেছি। কিন্তু এ বারের অভিজ্ঞতা ভয়ানক। শেষ পর্যন্ত মাটি ছুঁতে পেরে ধড়ে প্রাণ এল।’’
ঘটনাটি ফ্লোরিডার। ঘটেছে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের ‘ফ্লাইট ৫৯১৬’-এ। ওই যাত্রী এই উড়ানেই নর্থ ক্যারোলিনার শার্লট থেকে ফিরছিলেন ফ্লোরিডার গাইনেসভিলে। বিমান সংস্থা সূত্রে খবর, ওই বিমানের চালক হঠাৎই বুঝতে পারেন বিমানে একটি বায়ুর চাপজনিত সমস্যা হচ্ছে, তার অনতিবিলম্বেই বিমানটি দ্রুত নীচে নামতে শুরু করে।
যে যাত্রী বিমানের ভিতরের অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়েছেন, তাঁর নাম হ্যারিসন হোভ। তিনি ফ্লোরিডার বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। হ্যারিসন ওই বিমানে নিজের অভিজ্ঞতার কথা জানানোর পাশাপাশি, সেই সময়ের কিছু ছবিও দিয়েছেন টুইটারে। তবে একইসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, এই ছবি ওই ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কণামাত্র বর্ণনা করতে পারবে না। কারণ, ‘‘তখনকার সেই কটু পোড়া গন্ধ, কান ফেটে যাওয়ার মতো যন্ত্রণা, ওই প্রবল শব্দ আর ওই আতঙ্ককে লেন্সে বন্দি করা সম্ভব নয়।’’ লিখেছেন হ্যারিসন।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে বিমানে যাত্রীদের আসনের উপরে ঝুলছে অক্সিজেন মাস্ক। যাত্রীদের সেই মাস্ক মুখে নিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার দৃশ্যও দেখা গিয়েছে সেখানে। তবে হ্যারিসন যে অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন, তা সত্যিই ছবিতে ধরা সম্ভব নয়। আরও একটি টুইটে হ্যারিসন জানিয়েছেন, ‘‘মাঝরাতে বিমানের প্রযুক্তিগত কোনও গোলযোগ হয়। তার পরেই হঠাৎ বিমানের কেবিনে অক্সিজেনের চাপ কমতে শুরু করে।’’
পরে আমেরিকান এয়ারলাইন্সের তরফে জানানো হয়, বিমানে অক্সিজেনের অভাব হতে পারে আশঙ্কা করেই বিমানটিকে দ্রুত নামিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেন চালক। বাতাসের যে স্তরে বেশি অক্সিজেন রয়েছে, সেই উচ্চতাতেই নামিয়ে আনেন তিনি বিমানটিকে। তাতে সমস্যার সুরাহাও হয়।
আমেরিকার এয়ারলাইন্স জানিয়েছে, বিমানটি ৪৩ মিনিট আকাশে ওড়ার পর ওই গোলযোগ দেখা দেয়। এর পরে ছ’মিনিটেরও কম সময়ে ১৮ হাজার ৬০০ ফুট নেমে আসে বিমানটি। ১১ মিনিটে নামে ২০ হাজার ফুট। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বৃহস্পতিবার গাইনেসভিল বিমানবন্দরে নিরাপদেই অবতরণ করতে পেরেছিল ওই বিমান। যদিও যাত্রীদের ওই সময়ের অভিজ্ঞতার জন্য বিমান সংস্থাটির তরফে ক্ষমা চাওয়া হয়েছে।