বিক্ষোভে তেহরানের মানুষ।—ছবি এএফপি।
প্রথমে অস্বীকার করলেও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে শনিবার ইউক্রেনীয় বিমানে ‘ভুল করে’ হামলার কথা মেনে নিয়েছিল ইরানি সেনা। সেই ভুলের বিচার চেয়ে এ বার পথে নেমে বিক্ষোভ দেখালেন তেহরানের মানুষ। অন্য দিকে রবিবার ফের ইরাকের মাটিতে অবস্থিত একটি মার্কিন বায়ুসেনা ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়। সেনা জানিয়েছে, বাগদাদের উত্তরে আল-বালাড নামে ওই সেনা ঘাঁটিতে চারটি রকেট আছড়ে পড়ে। তাতে চার জন জখম হন। এ বারও সন্দেহের তির ইরানের দিকেই।
বুধবার ১৭৬ জন যাত্রীকে নিয়ে ওড়ার কিছু ক্ষণের মধ্যেই ভেঙে পড়েছিল কিয়েভগামী বিমানটি। নিহত যাত্রীদের স্মরণে শনিবার তেহরানের আমির কবির বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে মোমবাতি মিছিলের আয়োজন করেছিলেন পড়ুয়ারা। কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যে সেই মিছিল সরকার বিরোধী বিক্ষোভের রূপ নেয়। এত দিন যে সমস্ত সরকারি কর্তা ক্ষেপণাস্ত্র হানার কথা অস্বীকার করে আসছিলেন এ দিন তাঁদের পদত্যাগের দাবি তোলেন বিক্ষোভকারীরা। দোষীদের শাস্তির দাবিতে স্লোগান তাঁরা দেন। সেই মিছিলে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতোল্লা আলি খামেনেইয়ের পদত্যাগের দাবিও ওঠে।
শনিবারের ওই মিছিলে যোগ দিয়ে আটক হন ইরানে ব্রিটেনের রাষ্ট্রদূত রব ম্যাকেয়র। বিক্ষোভে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগে শনিবার তাঁকে আধ ঘণ্টার জন্য আটক করে ইরানি প্রশাসন। যদিও পরে টুইট করে রব জানান, নিহত যাত্রীদের প্রতি শোক প্রকাশ করতেই গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু শোকসভা বিক্ষোভের রূপ নেওয়ায় তিনি বেরিয়ে আসেন। রবের আটক হওয়ার ঘটনার নিন্দা করে ব্রিটিশ বিদেশসচিব ডমিনিক রাব জানান, রাষ্ট্রদূতকে আটক করে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করেছে ইরান। এই ঘটনায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও (ইইউ)। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক বিমানগুলিকে ইরানের আকাশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছে ইইউ-এর উড়ান নিরাপত্তা সংস্থা। শনিবার একটি বিবৃতি দিয়ে তারা বলেছে, ‘‘পরবর্তী নোটিস জারি না হওয়া পর্যন্ত ইরানের আকাশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’’
এই ঘটনার দায় নিয়ে ইতিমধ্যেই দুঃখপ্রকাশ করেছেন ইরানি প্রেসিডেন্ট হাসান রৌহানি। এমন ঘটনা আর যাতে না ঘটে সে জন্য দেশের সেনাবাহিনীকে সতর্ক করেছেন খামেনেই। তবে হামলার কথা মানলেও দোষ আমেরিকার উপরেই চাপিয়েছে ইরান। এই পরিস্থিতিতে ইরানে বিক্ষোভকারীদের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার মুখে পড়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রবিবার একটি টুইটে ট্রাম্প বলেন, ‘‘ইরানে যাঁরা এত দিন ধরে ভুগছেন, সেই সমস্ত সাহসীর উদ্দেশে বলছি, আমি আপনাদের সঙ্গে আছি এবং থাকব। বিক্ষোভের উপরে নজর রাখছি। আপনাদের সাহস দেখে আমরা অনুপ্রাণিত।’’ ট্রাম্পের এই টুইটের জবাবে জনৈক নেটিজ়েন লিখেছেন, ‘‘যে ভাবে আপনি আমাদের ঐতিহ্যবাহী সৌধগুলি উড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিচ্ছেন, আপনার নিষেধাজ্ঞার চাপে যে ভাবে অভুক্ত অবস্থায় দিন কাটছে ইরানীয়দের, তাতেই স্পষ্ট যে আপনি আমাদের পাশে রয়েছেন!’’