বেনজ়ির শাহ।
দু’দিন বাদেই ভোট আমাদের দেশে। এই নিয়ে দ্বিতীয় বার ‘গণতান্ত্রিক’ পথে নেতা নির্বাচন করবে পাকিস্তানের মানুষ। কিন্তু কত জনের এই ভোটে উৎসাহ আছে? কত জনই বা ২৫ তারিখ নির্বাচন বুথের সামনে লাইন দেবেন?
এই আশঙ্কার কারণ দু’টো। এ বার ভোটের আগে লাগাতার সন্ত্রাসে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তানে জঙ্গি হামলার ঘটনা বেশ কিছুটা কমে গিয়েছিল। কিন্তু ভোটের আগের দু’সপ্তাহে চেহারাটা পাল্টে গেল। ১০ জুলাই পেশোয়ারে এক জঙ্গি হামলায় আওয়ামি ন্যাশনাল পার্টি-র নেতা হারুন বিলৌর-সহ ২২ জন নিহত হন। খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের অন্যতম ধর্মনিরপেক্ষ দল এই এএনপি। আরও ভয়াবহ হামলা ঘটে ১৩ জুলাই। বালুচিস্তানের মাস্তুংয়ে বালুচ আওয়ামি পার্টির এক জনসভায় জঙ্গি হামলায় প্রায় দেড়শো জন নিহত হন। জখম হন শতাধিক। নিহতদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামি দলের নেতা সিরাজ় রায়সানিও। ভোটের দিন যত এগিয়ে আসছে, আতঙ্ক বাড়ছে।
তবে শুধু জঙ্গি হামলার আতঙ্ক নয়। দেশের রাজনৈতিক ডামাডোল দেখে অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠছে— ‘‘ভোট দিতে যাব কেন?’’ এই স্বপ্নভঙ্গের আভাস পাওয়া গিয়েছে বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক মিটিং-মিছিলেও। সাধারণত ভোটের আগে রাজনৈতিক সমাবেশে যে ধরনের ভিড় হয়, এ বার তার থেকে ভিড় অনেকটাই কম। গত বার বিপুল সংখ্যক কমবয়সি ছেলেমেয়ে ভোট দিয়েছিল। কিন্তু এ বার অনেকের সঙ্গেই কথা বলে দেখছি তাঁদের মনের ভাবটা অনেকটা এ রকম— ভোটের ফল যদি আগে থেকেই ঠিক হয়ে গিয়ে থাকে, তা হলে আর ভোট দিয়ে লাভ কী!
সামনেই ভোট। প্রচারে ছেয়ে দিয়ে গিয়েছে রাস্তাঘাট। ছবি: এএফপি।
ভোট বা প্রাক-ভোট রিগিংয়ের অভিযোগ পাকিস্তানে নতুন নয়। কিন্তু এ বার যে ভাবে ছোট-বড় রাজনৈতিক দল এবং সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে, তাতে মানুষের মনে এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সম্বন্ধে বড়সড় প্রশ্নচিহ্ন দেখা দিয়েছে। সামরিক শাসন দেখেছে আমাদের দেশ। দেখেছে ‘সেন্সরশিপ’ও। কিন্তু এখন যে-ভাবে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে, তা অভূতপূর্ব! সাধারণত, ভোটের ফল কী হবে, তা বলে দেয় দেশের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ প্রদেশ— পঞ্জাব। কিন্তু এ বার এতটাই টালমাটাল অবস্থা যে কোনও ধরনের ভবিষ্যদ্বাণীই করা যাচ্ছে না।
যেমন সত্যিই বোঝা যাচ্ছে না, পিটিআই নেতা ইমরান খান এ বার মসনদে বসতে চলেছেন কি না। সেই ১৯৯৭ সালে যখন রাজনীতিতে পা রাখেন ইমরান, তখন তিনি আশ্বাস দিয়েছিলেন, দুর্নীতিগ্রস্তদের দলে ঢুকতে দেবেন না। তাঁর একটা ধর্মনিরপেক্ষ ভাবমূর্তিও মানুষের মনে তৈরি হয়েছিল। কিন্তু এ বার তাঁর তালিকায় আছেন বেশ কিছু কট্টরপন্থী ও দুর্নীতিগ্রস্ত প্রার্থী। ফলে যে যুবসমাজকে আগে পাশে পেয়েছিলেন ইমরান, তারা এ বার তাঁর থেকে অনেকটাই দূরে সরে গিয়েছে।
তবে একটাই আশার কথা। একটি সমীক্ষায় দেখছিলাম, এ বার প্রার্থীদের একটা বিরাট অংশ বয়সে বেশ প্রবীণ, সত্তরের উপরে। পরের ভোটে এঁদের জায়গায় হয়তো এক ঝাঁক তরুণ প্রার্থী আসবেন, নতুন দিশা দেখাবেন।