ফাইল চিত্র।
গণটিকাকরণের দৌড়ে এই মুহূর্তে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে ইজ়রায়েল। মোট প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার ৫০ শতাংশকেই টিকাকরণের আওতায় এনে খানিকটা স্বস্তির নিশ্বাস ফেলছে নেতানিয়াহু সরকার। তবু শান্তি নেই। প্রতিষেধকের প্রার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় খবরে নতুন করে আশঙ্কা তৈরি হয়েছে সে দেশে।
ইজ়রায়েলে ৫০ লক্ষেরও বেশি মানুষকে মূলত ফাইজার-বায়োএনটেক-এর করোনা প্রতিষেধক দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি ইজ়রায়েলের স্বাস্থ্য মন্ত্রকের করোনা কমিশনার ন্যাচম্যান অ্যাশ এক সাক্ষাৎকারে জানান, এ যাবৎ অন্তত ৬২টি ঘটনার কথা জানা গিয়েছে, যাঁদের ক্ষেত্রে প্রতিষেধক নেওয়ার পরে হৃদ্যন্ত্রের পেশি এবং পেশির পর্দা বা মেমব্রেনে প্রদাহের সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে টিকাকরণের সরাসরি কোনও সম্পর্ক রয়েছে কিনা, তা পরীক্ষা করে দেখছেন চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞেরা।
দেখা গিয়েছে, প্রতি ১ লক্ষ টিকাপ্রাপ্তদের মধ্যে এক জনের এই ধরনের সমস্যা হয়েছে। ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সিরা ছেলেদের মধ্যে সেই সংখ্যাটা হয়ে যাচ্ছে ৫ গুণ। দেখা গিয়েছে, প্রতি ২০ হাজারে এক জন করে প্রদাহজনিত সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছেন। আক্রান্তদের মধ্যে দু’জনের মৃত্যুও হয়েছে। বাকিরা সকলেই সুস্থ হয়ে উঠেছেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের দাবি, প্রদাহজনিত সমস্যা হলেই যে মৃত্যুর আশঙ্কা রয়েছে, এমনটা প্রমাণিত নয়। বরং বেশির ভাগই সুস্থ হয়ে উঠছেন। ন্যাচম্যান বলেছেন, ‘‘প্রতিষেধকের উপকারিতার দিকটাই বেশি। অল্প কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ঘটনা জানা গেলেও, তার ভিত্তিতে প্রতিষেধকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া ঠিক হবে না।’’ তিনি আরও বলেন, বিষয়টি তাঁরা ফাইজারকে জানিয়েছেন। সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, ‘এই সমস্যা যে টিকাপ্রাপ্তদের মধ্যে ব্যাপক ভাবে ছড়িয়েছে, তা নয়। এখনও প্রমাণিত হয়নি যে ফাইজারের প্রতিষেধকই সমস্যার কারণ। এবং এর থেকে বড়সড় ক্ষতি হতে পারে, তেমন প্রমাণও মেলেনি।’
এর আগে অ্যাস্ট্রেজ়েনেকা বা জনসনের টিকায় মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার মতো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কথা শোনা গিয়েছিল। যার জেরে আমেরিকা ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশ এই টিকা দু’টির প্রয়োগ বন্ধ রেখেছিল। তবে উপকারিতার তুলনায় প্রার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় ঘটনা নগণ্য, সেই যুক্তিতে জনসনের টিকাকে ফের ছাড়পত্র দিয়েছে আমেরিকা। ইউরোপের একাধিক দেশে ফের চালু হয়েছে অ্যাস্ট্রেজ়েনেকার প্রতিষেধক।
ভারতের ভয়াবহ করোনা পরিস্থিতির জেরে একের পর এক দেশ সংযোগ ছিন্ন করেছে। অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, বাংলাদেশের পাশাপাশি আজ থেকে বিমান চলাচল বন্ধ করল মলদ্বীপ। ভয়ঙ্কর সংক্রামক ভারতীয় স্ট্রেনের মিলল ফিজিতেও। বর্হিবিশ্বের সঙ্গে উড়ান চলাচল বন্ধ করার কথা ঘোষণা করল তারা। মঙ্গলবারই ভারত থেকে আসা কারও সে দেশে প্রবেশ নিষিদ্ধ করল বেলজিয়াম।
টিকাকরণের হারে এখন সবচেয়ে এগিয়ে আমেরিকা। ৫০ শতাংশের বেশি প্রাপ্তবয়স্কের অন্তত একটি করে ডোজ় নেওয়া হয়ে গিয়েছে। দুই তৃতীয়াংশের দু’টি ডোজ়ই সম্পূর্ণ হয়েছে। দেশ জুড়ে সংক্রমণ কমছে। এই পরিস্থিতিতে আজ নয়া মাস্কবিধি ঘোষণা করেছে সেন্টার ফর ডিজিজ় কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)। বলা হয়েছে, যাঁরা জনসনের ‘সিঙ্গল শট’ টিকা বা মডার্না, ফাইজারের টিকার দু’টি ডোজ়ই নিয়েছেন, তাঁরা মাস্ক ছাড়াই রাস্তায় বেরোতে পারবেন। তবে অচেনা মানুষের ভিড়ে মাস্ক পরে থাকার পরামর্শই দিয়েছেন তাঁরা। পাশাপাশি, যাঁদের এখনও টিকাকরণ সম্পূর্ণ হয়নি, তাঁরাও ক্ষেত্র বিশেষে মাস্ক ছাড়া বেরোনোর সুযোগ পাবেন। পরিবারের সঙ্গে, বা সম্পূর্ণ টিকাপ্রাপ্তদের সঙ্গে ছোটখাটো জমায়েতে মাস্ক ছাড়াই বেড়াতে পারবেন তাঁরাও। তবে রেস্তরাঁ, জিম বা বদ্ধ জায়গায় এখনও মাস্ক পরার পক্ষে মত সিডিসির।