উজ্জ্বল পোদ্দার
এক সময় ঘুঁটে বিক্রি করে, ঠোঙা বানিয়ে ছেলেদের পড়াতে হয়েছে মাকে। এমন পরিবার থেকে উঠে আসা এক শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ গবেষণার জোরে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায় করে নিলেন। আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় গত দু’বছর ধরে বিশ্বের তাবড় বিজ্ঞানীদের তালিকা প্রকাশ করছে। এ বছর তাতে পশ্চিমবঙ্গের পতিরামের প্রবাসী বাঙালী চিকিৎসক, শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ উজ্জ্বল পোদ্দার স্থান পেয়েছেন। তাঁর প্রকাশিত গবেষণাপত্র মূল্যায়ন করে আমেরিকার ওই বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রতি এই তালিকা প্রকাশ করেছে।
লখনউয়ে ‘সঞ্জয় গাঁধী ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস’-এ কর্মরত ওই চিকিৎসকের নানা গবেষণাপত্র গত ২৫ বছরে প্রকাশ হয়েছে। আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রকাশিত একটি তালিকায় এশিয়ার দুই পেডিয়াট্রিক গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজিস্টের নাম স্থান পেয়েছে বলে গত মাসে তাঁকে জানানো হয়। তার মধ্যে উজ্জ্বলই একমাত্র ভারতীয়। এ দিন লখনউ থেকে তিনি ফোনে জানান, এই কৃতিত্বের বড় অংশীদার তাঁর মা দীপালি।
২০০৮ সালে বাবা মারা যান। অভাবের জন্য বাবার দোকানটিও বিক্রি করে দিতে হয়। তিনি এবং তাঁর ভাই উৎপলের পড়াশোনা তখন মাঝপথে। উজ্বলের কথায়, ‘‘মা শত কষ্ট করেও আমাদের দুই ভাইয়ের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে প্রেরণা দিয়েছেন।’’ এ দিন পতিরামের ডাকবাংলো পাড়ায় তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, মা দীপালি চলাফেরা করতে পারেন না। দেশের বাড়িতে তাঁর ভাই তথা সরকারি চাকুরে উৎপল পরিবার নিয়ে থাকেন। তার পাশে সেই ভাঙাচোরা টিনের চালা এখনও রয়েছে।
উজ্জ্বল জানান, তাঁর একাধিক গবেষণা মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল্যায়ন শাখা গুরুত্ব দিয়েছে। ইউরোপ এবং আমেরিকায় গম থেকে অ্যালার্জির ধারা রয়েছে। ভারতের উত্তর এবং পশ্চিমাঞ্চলেও এই রোগ ছিল। ১৯৯০ সালে তাঁর গবেষণায় সে সব উঠে আসে। পরে শিশুদের গ্যাস্ট্রো এন্টেরোলজির উপর নানা গবেষণাপত্র প্রকাশ পায় একাধিক আন্তর্জাতিক রেফারড জার্নালে।
তিনি জানান, এ পর্যন্ত ১৮০টি গবেষণাপত্র লিখেছেন। তাঁর মধ্যে ওই বিশ্ববিদ্যালয় যাচাই করেছে ১৫৯টি। তার পরেই এ বছর তাঁর নাম আসে। বালুরঘাট কলেজের ওই প্রাক্তনীর দাবি, জীবনে প্রতিষ্ঠা পেতে খুব স্বচ্ছল পরিবার বা নামি-দামী স্কুল না হলেও চলে। কেবল ইচ্ছেটা থাকা চাই।