গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
ভারতের সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ইতিমধ্যেই স্থগিত হয়ে গিয়েছে উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড সরকারের বিতর্কিত ফরমান। কিন্তু সেই আবহেই কাঁওয়ার যাত্রার পথের ধারে দোকানদারদের নাম এবং পরিচয় লেখা বিতর্ক নিয়ে এ বার আন্তর্জাতিক মঞ্চে জলঘোলা করতে সক্রিয় পাকিস্তান!
আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ম্যাথু মিলারের সাংবাদিক বৈঠকে বুধবার বিষয়টি উত্থাপন করে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করল পাক সংবাদমাধ্যম। যদিও মিলার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ভারতের দু’টি রাজ্যের সরকারের ওই নির্দেশ সম্পর্কে ওয়াশিংটন ওয়াকিবহাল। ভারতের সুপ্রিম কোর্ট যে ওই বিতর্কিত নির্দেশের উপর অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়েছে, তা-ও আমেরিকার অবিদিত নয়।
কাঁওয়ার যাত্রার পথে খাবার বিক্রেতাদের নাম লিখতে বাধ্য করা যাবে না বলে সোমবার (২২ জুলাই) উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড সরকারের নির্দেশিকায় অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশ দিয়ে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। বিচারপতি হৃষীকেশ রায় এবং বিচারপতি এসভিএন ভাট্টির বেঞ্চ উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ড সরকারকে শুক্রবারের মধ্যে নোটিস দিয়ে নিজেদের বক্তব্য জানানোর নির্দেশ দিয়েছে। ওই দিনই মামলার পরবর্তী শুনানি। কিন্তু ওয়াশিংটনে পাক সংবাদমাধ্যম মিলারের সাংবাদিক বৈঠকে সেই তথ্যের উল্লেখ না করে বিজেপি শাসিত উত্তরপ্রদেশ এবং উত্তরাখণ্ডে ধর্মাচরণের স্বাধীনতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
জবাবে আমেরিকার বিদেশ দফতরের মুখপাত্র সুপ্রিম কোর্টের অন্তর্বর্তী স্থগিতাদেশের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ‘‘ওই নির্দেশ তো এখন কার্যকর হচ্ছে না।’’ এর পরেই তাঁর মন্তব্য, ‘‘আমরা সব সময় বিশ্বের যে কোনও স্থানে সকলের জন্য ধর্মীয় বিশ্বাসের স্বাধীনতার অধিকারের সুরক্ষার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’’ প্রসঙ্গত, গত ২২ জুলাই থেকে কাঁওয়ার যাত্রা শুরু হয়েছে। তার আগেই পুণ্যার্থীদের যাত্রাপথের সমস্ত খাবার বিক্রেতাকে দোকানে নাম লেখার নির্দেশ দিয়েছিল উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামীর সরকার।
কেন এমন নির্দেশ? যোগীর ব্যাখ্যা ছিল, ‘‘কাঁওয়ার তীর্থযাত্রীদের পবিত্রতা রক্ষার উদ্দেশ্যেই এই সিদ্ধান্ত।’’ বিরোধী শিবিরে একাংশ এবং সুপ্রিম কোর্টে আবেদনকারী পক্ষ অবশ্য ওই নির্দেশের সঙ্গে প্রায় ন’দশক আগের নাৎসি জার্মানিতে প্রশাসনের ইহুদি-বিরোধী নির্দেশের তুলনা টেনেছেন। তাঁদের অভিযোগ, নাম প্রকাশের মাধ্যমে খাবারের দোকানের মালিক ও কর্মীদের ধর্মীয় পরিচয় প্রকাশ্যে নিয়ে আসার উদ্দেশ্যেই বাধ্যতামূলক ভাবে নাম লেখার ওই নির্দেশ।