হরিয়ানার বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: এক্স।
বিধানসভা ভোট আরও মাস তিনেক পরে হওয়ার কথা হরিয়ানায়। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনে মহারাষ্ট্রের ফল দেখে সতর্ক বিজেপি নেতৃত্ব আগেভাগেই তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন। ইতিমধ্যেই সে রাজ্যে বিধানসভা ভোটের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক। এ বার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং বৈঠক করলেন হরিয়ানার বিজেপি সাংসদদের সঙ্গে।
মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদীর ওই ‘চায়ে পে চর্চা’য় হাজির ছিলেন হরিয়ানার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর-সহ লোকসভার পাঁচ বিজেপি সাংসদ। এঁদের মধ্যে খট্টরের পাশাপাশি রাও ইন্দ্রজিৎ সিংহ এবং কৃষ্ণপাল গুজ্জরও কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার সদস্য। এ ছাড়া ছিলেন হরিয়ানা থেকে রাজ্যসভায় নির্বাচিত বিজেপি সাংসদ সুভাষ বারলা, কিসান পনওয়ার এবং বিজেপির সমর্থনে জয়ী নির্দল সাংসদ কার্তিকেয় শর্মা। যদিও ওই বৈঠকের আলোচ্যসূচি সম্পর্কে দলের তরফে কিছু জানানো হয়নি। হরিয়ানা থেকে নির্বাচিত রাজ্যসভা সাংসদ সুভাষ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের নির্দেশ দিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের সামাজিক উন্নয়ন ও জনকল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির সুফল সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে।’’
এ বারের লোকসভা ভোটে বিজেপি শাসিত হরিয়ানায় সমঝোতা করেছিল কংগ্রেস এবং আপ। সে রাজ্যের ১০টি আসনের মধ্যে একটি কেজরীকে ছেড়ে ন’টিতে লড়েছিল রাহুল গান্ধী-মল্লিকার্জুন খড়্গের দল। তার মধ্যে পাঁচটিতে জিতেছেন ‘হাত’ প্রতীকের প্রার্থীরা। বাকি পাঁচটি গিয়েছে ‘পদ্মে’র ঝুলিতে। ২০১৯ সালে ১০টি আসনেই জিতেছিল বিজেপি। আগামী অক্টোবরে হরিয়ানায় বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। ইতিমধ্যেই বিজেপি ভোটের কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক এবং সহ-পর্যবেক্ষক হিসাবে দায়িত্ব পেয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান এবং ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সাংসদ বিপ্লব দেব।
আপের সঙ্গে সমঝোতায় ভাল ফল করেও আগামী অক্টোবর মাসের বিধানসভা ভোটে ফের একলা লড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কংগ্রেস। এর ফলে বিজেপির সুবিধা হতে পারে বলে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন। যদিও ভোট বিশ্লেষকদের একাংশের মতে বাংলায় কংগ্রেস-তৃণমূলের মতোই হরিয়ানায় কংগ্রেস-আপ সমীকরণও আদতে ‘ব্যস্তানুপাতিক’। অর্থাৎ, আপের বাড়বৃদ্ধি হবে কংগ্রেসের ক্ষতিবৃদ্ধি হলে। আবার একই রকম ভাবে কংগ্রেসের উন্নতি হবে আপের অবনতিতে।
২০১৯-এর লোকসভা এবং তার পরের বিধানসভা ভোটে জাঠদের বড় অংশের সমর্থন পেয়েছিলেন মোদী। কিন্তু এ বারের লোকসভা ভোটে দেখা গিয়েছে তা নিম্নমুখী। হরিয়ানার ২৪ শতাংশ জাঠ সম্প্রদায়ের অধিকাংশই কৃষক। সিঙ্ঘু সীমানায় কৃষক আন্দোলনের প্রতি তাঁদের অধিকাংশই খোলাখুলি সমর্থন জানিয়েছেন। হরিয়ানা থেকে অলিম্পিক্সে যোগ দেওয়া, জাতীয় ক্রীড়াক্ষেত্রে পদক জেতা খেলোয়াড়দেরও অনেকে জাঠ। বিজেপি নেতার ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের হাতে মহিলা কুস্তিগিরদের হেনস্থার অভিযোগ নিয়েও ক্ষোভ রয়েছে জাঠদের একাংশের মধ্যে।
মোদী সরকারের অগ্নিবীর কর্মসূচি নিয়েও রুষ্ট জাঠ মন, কারণ এই সম্প্রদায় থেকে সেনায় ভর্তি হওয়ার সংখ্যাটা বরাবরই বেশি। পাশাপাশি, গত এক দশকের বিজেপি শাসনে এক জনও জাঠ মুখ্যমন্ত্রী না করা নিয়েও অসন্তোষ রয়েছে। তবে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করছেন, জাঠদের পাশে না পেলেও অন্য জাত-সম্প্রদায়ের মানুষদের একজোট করে পরিস্থিতি অনুকুলে আনতে সক্রিয় বিজেপি। ব্রাহ্মণ, যাদব, বানিয়া এবং পঞ্জাবিদের সমর্থন নিয়ে তারা আত্মবিশ্বাসী। গুর্জর-সহ ওবিসি-র মধ্যেও সমর্থনভিত্তি বাড়ানোর চেষ্টা চালাচ্ছে পদ্মশিবির।