চোখের জলে: বিস্ফোরণে প্রাণ গিয়েছে স্বজনের। ছবি: রয়টার্স।
পাকিস্তানের পেশোয়ারে পুলিশ সদর দফতরের ভিতরে মসজিদে আত্মঘাতী হামলায় শতাধিক মৃত্যুর খবর সামনে এসেছিল। তবে পাক পুলিশের এক আধিকারিক আজ জানিয়েছেন, নিহতের সংখ্যায় ভুল ছিল। বিস্ফোরণে মৃত্যু হয়েছে ৮৪ জনের। পুলিশের পোশাক পরে থাকায় নিরাপত্তারক্ষীদের নজর এড়িয়ে ঢুকেছিল আততায়ী।
পেশোয়ার সিটি পুলিশের প্রধান মুহাম্মদ ইজাজ় খান জানিয়েছেন, নিহতদের কয়েক জনের পরিবারের তরফে একাধিক বার মৃত্যুর খবর নথিভুক্ত করায় সংখ্যাটা একশো পেরিয়েছিল। তবে ফের গণনায় দেখা গিয়েছে, আত্মঘাতী হামলায় নিহতের সংখ্যা ৮৪। নিহতদের মধ্যে ৮৩ জন পুলিশকর্মী এবং এক মহিলা। ওই মহিলা পুলিশ কম্পাউন্ডেই থাকতেন এবং কাজ করতেন।
খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পুলিশ প্রধান মোয়াজ্জম জা আনসারিও নিহতের নয়া সংখ্যার বিষয়টি জানিয়েছেন। বহু পুলিশকর্মীর অবস্থা এখনও সঙ্কটজনক। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।
নিহতের সংখ্যার পাশাপাশি খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের পুলিশ প্রধান জানিয়েছেন, যে আততায়ী আত্মঘাতী হামলা চালিয়েছিল, তাকে চিহ্নিত করা গিয়েছে। পুলিশের পোশাক, মাস্ক এবং হেলমেট পরে থাকায় নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে ঢুকতে পেরেছিল সে। খাইবার রোড থেকে পুলিশ লাইনস পর্যন্ত অঞ্চলের সিসি ক্যামেরার ফুটেজও খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। হামলার সময়ে মসজিদে শতাধিক পুলিশকর্মী প্রার্থনায় অংশ নিয়েছিলেন।
পুলিশ আধিকারিক আনসারি জানিয়েছেন, দুপুর ১২টা ৩৭ মিনিটে প্রধান প্রবেশদ্বার পেরিয়ে মোটরবাইকে চেপে ঢুকেছিল আততায়ী। প্রহরারত কনস্টেবলকে সে প্রথমে জিজ্ঞেস করে মসজিদ কোথায়। এর পরেই সে হামলা চালায়। ১০ থেকে ১২ কেজি বিস্ফোরক আততায়ীর সঙ্গে ছিল। ওই আততায়ী একা নয়, অনেকে মিলেই পরিকল্পনা করে এই বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে মনে করছেন ওই পুলিশ আধিকারিক।
পুলিশের সদর দফতরে কী ভাবে বিস্ফোরক ঢুকেছিল, তার তদন্তে ২৩ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ চালাচ্ছে পুলিশ।
ইতিমধ্যেই ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে টিটিপি। ওই সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, গত অগস্টে আফগানিস্তানে টিটিপি কমান্ডার উমর খালিদ খুরাসানির হত্যার প্রতিশোধ নিতেই এই হামলা চালানো হয়েছে।
এ দিকে পাকিস্তানের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ় শরিফের কন্যা মরিয়ম নওয়াজ় পেশোয়ার বিস্ফোরণের জন্য ইমরান খান ঘনিষ্ঠ আইএসআইয়ের প্রাক্তন প্রধান ফৈজ় হামিদকেই নিশানা করেছেন। বাহাওয়ালপুরের এক জনসভায় মরিয়মের প্রশ্ন, পেশোয়ারে কোর কমান্ডার হিসাবে কর্মরত হামিদ কেন সন্ত্রাসবাদীদের জন্য আফগানিস্তান থেকে প্রবেশের দরজা খুলে রেখেছিলেন? কেন তিনি জঙ্গিদের পাকিস্তানে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন, প্রশ্ন মরিয়মের। সঙ্গে জানিয়েছেন, হামিদ যদি চোখ-কান খোলা রাখতেন, তা হলে এই ঘটনা ঘটত না।