অর্থনৈতিক সঙ্কট ক্রমশ আরও জাঁকিয়ে বসছে পাকিস্তানে। ছবি: রয়টার্স।
দেউলিয়া ঘোষণার ঠিক আগের ধাপে দাঁড়িয়ে প্রতিবেশী পাকিস্তান। পরিস্থিতি যে দিকে এগোচ্ছে তাতে শাহবাজ শরিফের দেশেরও পরিণতি শ্রীলঙ্কার মতোই হতে চলেছে কি না, তা নিয়েই এখন আলোচনা চলছে। আর সেই আলোচনায় যত সময় যাচ্ছে, ততই অর্থনৈতিক ভাবে রসাতলে যাচ্ছে মহম্মদ আলি জিন্না প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান। এর মধ্যেই মঙ্গলবার পাকিস্তানে এসে পৌঁছবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা ভান্ডারের (আইএমএফ) দল। তাঁরা পাকিস্তানের সামগ্রিক পরিস্থিতি খতিয়ে দেখবেন।
ডলারের তুলনায় পাকিস্তানি মুদ্রার অবমূল্যায়ন, ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি এবং জ্বালানির অভাব— এই ত্রহ্যস্পর্শে ইদানীং গেল গেল রব পাকিস্তানে। মধ্যবিত্তের অবস্থা ক্রমশ আরও খারাপ। দেশে যত শ্রমিক ছিলেন, তাঁদের মধ্যে বহু মানুষ কাজ না পেয়ে ভিক্ষুক হয়ে যাচ্ছেন, এমনই ভয়ঙ্কর কথা জানাচ্ছে পশ্চিমের একাধিক সংবাদমাধ্যম। এই পরিস্থিতি সামাল দিতে একগুচ্ছ পদক্ষেপ করা হয়েছে। কিন্তু তাতে বিপর্যয় ঠেকানো যাবে কি? তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ।
টাকা দেবে আইএমএফ। কিন্তু সেই অর্থ ঋণ হিসাবে পেতে প্রয়োজন বেশ কিছু শর্তপূরণের। তৃতীয় বিশ্বের কোনও দেশের পক্ষেই সেই শর্ত পুরোপুরি মেনে চলা কঠিন। ব্যতিক্রম নয় শরিফের পাকিস্তানও। কিন্তু দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে ইসলামাবাদের। এই অবস্থায় আইএমএফের চাপানো শর্তের বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে। যদিও তাতে জনগণের উপর চাপ আরও খানিক বাড়বে। যে চাপ আগামী দিনে গণ অসন্তোষের রূপ নিতে পারে বলে আশঙ্কা রয়েছে সরকারের। সব মিলিয়ে কড়া দাওয়াইয়ের প্রয়োগে আখেরে গদি টলমল হয়ে যাবে না তো শরিফ সরকারের? এই প্রশ্নেই এখন থমকে ইসলামাবাদ। পরিস্থিতি এমনই যে বিশ্বের পঞ্চম সর্বোচ্চ জনসংখ্যা বিশিষ্ট দেশ পাকিস্তানের রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ভাঁড়ারে এই মুহূর্তে মাত্র ৩৭০ কোটি ডলার অবশিষ্ট রয়েছে। যে অর্থে মাত্র তিন সপ্তাহের আমদানির খরচ চালানো সম্ভব।
বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রাক্তন অর্থনীতিবিদ আবিদ হাসান সংবাদসংস্থা এএফপিকে বলেছেন, ‘‘আমরা পথের একেবারে প্রান্তে পৌঁছে গিয়েছি। কিন্তু আইএমএফের দাবি পূরণের জন্য সরকারকে কিছু কঠিন সিদ্ধান্ত নিতেই হবে। যদি তা না করা হয়, তা হলে পরিস্থিতি শ্রীলঙ্কার চেয়েও খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। যেটা সবচেয়ে খারাপ।’’
সম্প্রতি আইএমএফের শর্ত মেনে জ্বালানি তেলের দাম বিপুল ভাবে বাড়িয়েছে পাকিস্তান। পেট্রল এবং ডিজেলের দাম লিটারপ্রতি বেড়েছে ৩৫ টাকা। পাকিস্তানি মুদ্রার দামও বাজার নির্ধারণ করছে। চেষ্টা চলছে এর মধ্যে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার। কিন্তু এই মুহূর্তে বিপুল পরিমাণ অর্থসাহায্য না পেলে যে পাকিস্তানের অবস্থা ক্রমশ হাতের বাইরে চলে যাবে, তা অনুমেয়। এই অবস্থায় পাকিস্তানে আসছেন আইএমএফ কর্তারা। সরেজমিনে পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে তাঁরা কি অর্থের জোগান দেবেন? করাচি থেকে পেশোয়ার, লাহোর থেকে ইসলামাবাদ— প্রশ্ন এখন একটাই।