—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
মঙ্গলবার সন্ধ্যাতেই বালুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটায় পাক ‘আর্মি অ্যাভিয়েশন কোর’-এর ঘাঁটি থেকে চারটি হেলিকপ্টারের উড়ান নজরে এসেছিল। রাত গড়াতে পাক সংবাদমাধ্যম জানিয়ে দিল, মাশকাফের ৮ নম্বর সুড়ঙ্গে বালুচ বিদ্রোহীদের কব্জায় থাকা জাফর এক্সপ্রেসের পণবন্দিদের মুক্ত করতে শুরু হয়েছে অভিযান।
রাত থেকেই সশস্ত্র গোষ্ঠী বিএলএ (বালুচিস্তান লিবারেশন আর্মি)-র যোদ্ধাদের বিরুদ্ধে পাক সেনার বেল এএইচ-১ কোবরা হেলিকপ্টার হামলা শুরু করে বলে প্রকাশিত কয়েকটি খবরে দাবি। মূলত, সুড়ঙ্গের আশপাশের পাহাড়ে অবস্থান নেওয়া বিদ্রোহীদের নিকেশ করতেই ‘থার্মাল ইমেজ়িং সেন্সর’ ব্যবহার করে ভারী মেশিনগানের গুলি এবং বোমাবর্ষণ চলে।
পাক সেনার দাবি, মঙ্গলবার সকালে বালুচিস্তানের রাজধানী কোয়েটা থেকে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের রাজধানী পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেসে হামলা চালিয়েছিল বিএলএ-র মোট চারটি বাহিনী। এর মধ্যে ফিদায়েঁ (আত্মঘাতী) মজিদ ব্রিগেডের বিস্ফোরক বোঝাই ভেস্ট পরা যোদ্ধারা প্রায় ৫০০ যাত্রী-সহ ট্রেন কব্জা করে শতাধিককে পণবন্দি বানিয়েছিলেন। তাদের সহযোগী হিসাবে পাক নিরাপত্তাবাহিনীর হামলা প্রতিরোধের দায়িত্বে রয়েছে আরও তিনটি বাহিনী— ‘ফতেহ স্কোয়াড’, জ়িরাব ইউনিট এবং কমান্ডো হানা রুখতে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ‘স্পেশাল ট্যাকটিক্যাল অপারেশন্স স্কোয়াড’ (এসটিওএস)।
প্রাথমিক ভাবে রাতের অন্ধকারে পাক সেনার চপার মূলত ওই তিন সহযোগী ইউনিটের যোদ্ধাদের নিশানা করে। এর পরে ভোরের আলো ফুটতেই ৮ নম্বর বাদে মাশকাফের বাকি ১৬টি সুড়ঙ্গকে বিদ্রোহী-মুক্ত করার অভিযান শুরু করেন পাক সেনার ‘স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ’ (এসএসজি) কমান্ডোরা। হামলার ধরন দেখে নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের একাংশ মনে করছেন, পণবন্দি শতাধিক রেলযাত্রীর প্রাণের আশা কার্যত ছেড়েই দিয়েছে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সরকার।
বস্তুত, কাচ্চি জেলার বোলান এলাকার পেহরো কুনরি এবং গাদালারের মাঝামাঝি বিদ্রোহীদের কব্জায় থাকা ট্রেন থেকে ১৫৫ জন পণবন্দিকে উদ্ধারের কথা পাক সরকার জানালেও তাঁদের আদৌ সেনা অভিযানে মুক্ত করা হয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, এখনও পর্যন্ত মুক্তি পাওয়া যে রেলযাত্রীরা সামনে এসেছেন, তাঁদের সকলেই বালুচ জনগোষ্ঠীর। এ ছাড়া রয়েছেন মহিলা ও শিশুরা। তাঁদের কয়েক জন জানিয়েছেন, পরিচয়পত্র দেখে, জাতিগত পরিচয় সম্পর্কে নিঃসংশয় হয়েই তাঁদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বালুচ বিদ্রোহীদের মূল অভিযোগ ‘পঞ্জাবী আধিপত্যবাদের’ বিরুদ্ধে। এখনও পর্যন্ত কোনও পঞ্জাবী অসামরিক পুরুষ বা জাফর এক্সপ্রেসের যাত্রী পাক সেনা ও আধাসেনা মুক্তি পাননি।