Business

তিন বাধায় থমকে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি

আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দশ দেশ, চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজ়িল্যান্ড সমেত ১৬ দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে ভারতের সই করার কথা প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০২০ ০৪:৪৫
Share:

প্রতীকী ছবি।

চুক্তির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো সমস্যা মেটাতে, কথা ছিল চিনের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসার। কিন্তু সেই বৈঠক এখনও হয়নি। পিছু ছাড়েনি ‘ভুল বার্তায়’ আমেরিকার চটে যাওয়ার আশঙ্কা। সঙ্গে রয়েছে রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা। বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, মূলত এই তিন কারণেই ১৬ দেশের প্রস্তাবিত মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে (আরসিইপি) যোগ দেওয়ার আহ্বান সত্ত্বেও পা বাড়াতে পারেনি দিল্লি।

Advertisement

আসিয়ান গোষ্ঠীভুক্ত দশ দেশ, চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজ়িল্যান্ড সমেত ১৬ দেশের মুক্ত বাণিজ্য চুক্তিতে ভারতের সই করার কথা প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু গত নভেম্বরে একেবারে শেষ মুহূর্তে তা থেকে সরে আসার কথা ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। পরে কেন্দ্র দাবি করে, মূলত চিনা পণ্যে ভারতের বাজার ছেয়ে যাওয়া রুখতেই এই ‘বলিষ্ঠ’ সিদ্ধান্ত। তা ছাড়া, অস্ট্রেলিয়া, নিউজ়িল্যান্ডের দুগ্ধজাত পণ্যে বাজার ছেয়ে গেলেও এ দেশের উৎপাদক এবং ব্যবসায়ীরা বিপদে পড়তেন।

কিন্তু ভারতের মতো বিশাল এবং সম্ভাবনাময় বাজারকে বাদ দিয়ে ওই চুক্তি যে অনেকটাই জোলো হয়ে যাবে, তা বিলক্ষণ জানে আরসিইপি-র বাকি ১৫টি দেশ। বিশেষত করোনা-পরবর্তী বিধ্বস্ত অর্থনীতিতে ভারতকে টানা আরও জরুরি মনে করছে তারা। সেই কারণেই ভারতকে চুক্তির জন্য ফের আহ্বান জানিয়েছে সিঙ্গাপুর, নিউজ়িল্যান্ড-সহ বিভিন্ন দেশ। শর্ত শিথিলের রাস্তা খোলা রেখেছে আরসিইপি-র কমিটি। পাশাপাশি, আলাদা করে ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার দরজাও খুলে রাখা হয়েছে। কিন্তু ভারত যে এখনও সাড়া দিতে পারেনি, তার কারণ মূলত তিনটি।

Advertisement

প্রথমত, এমনিতেই চিনের সঙ্গে বিপুল বাণিজ্য ঘাটতি (প্রায় ৫,৩০০ কোটি ডলার) ভারতের বড় মাথাব্যথা। তার উপরে এই মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির সুযোগে চিনা পণ্যে এ দেশের বাজার ছেয়ে যাবে বলে আশঙ্কা দিল্লির। বাণিজ্য মন্ত্রক সূত্রে খবর, তামিলনাড়ুর মমল্লপুরমে নরেন্দ্র মোদী এবং চিনের প্রেসিডেন্ট শি চিনফিংয়ের মধ্যে একান্ত আলোচনায় ঠিক হয়েছিল, এই একতরফা বাণিজ্যের সমস্যা সমাধানে আলোচনায় বসবে দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের কমিটি। কিন্তু সেই বৈঠক আর হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, ওই আলোচনায় আরসিইপি-রও জট কাটতে পারত।

দ্বিতীয়ত, আমেরিকার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য চুক্তিও ঝুলে আছে আজ দীর্ঘদিন। সেই পরিস্থিতিতে চিনের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি এগোলে, তা ট্রাম্প প্রশাসনের চক্ষুশূল হত বলে বিদেশ মন্ত্রক সূত্রের আশঙ্কা।

তৃতীয়ত, এই সবে আত্মনির্ভর ভারত গড়ার ডাক দিয়েছেন মোদী। তার সঙ্গে চিনা পণ্য বর্জনের ডাক জুড়ে দিয়েছে স্বদেশি জাগরণ মঞ্চ এবং বিজেপির একাংশ। শুধু তা-ই নয়। দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম বর্ষপূর্তিতে কৃষক, ছোট ব্যবসায়ীদের স্বার্থ মাথায় রেখে আরসিইপি চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসাকেই অন্যতম সাফল্য হিসেবে তুলে ধরেছেন খোদ অমিত শাহ। ফের সেই চুক্তিতেই যোগ দিতে আলোচনার টেবিলে বসা ভুল রাজনৈতিক বার্তা দিতে পারে বলে আশঙ্কা সরকারের।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement