দু’বছরের পুরস্কার প্রাপকদের নাম ঘোষণা

প্রান্তবাসীদের গল্পকেই কুর্নিশ সাহিত্য-নোবেলে

বৃহস্পতিবার স্টকহলমে সুইডিশ অ্যাকাডেমির অন্দার্স ওলসন বলেন, ‘‘গত বছর এই পুরস্কার ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়েছিল। ২০১৮-র বিজেতা হিসেবে সুইডিশ অ্যাকাডেমি পোলান্ডের লেখক ওল্গা তোকারচুককে বেছে নিয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

স্টকহলম শেষ আপডেট: ১১ অক্টোবর ২০১৯ ০১:৪৭
Share:

ওল্গা তোকারচুক ও পিটার হান্ট।

বিতর্কে আচ্ছন্ন থেকে গত বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার না-দেওয়ার পরে আজ স্টকহলমে ২০১৮ ও ’১৯ সালের প্রাপকদের নাম ঘোষণা করল সুইডিশ অ্যাকাডেমি। পোলিশ ঔপন্যাসিক ওল্গা তোকারচুক এবং অস্ট্রীয় লেখক পিটার হান্টকে এই দু’বছরের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন।

Advertisement

বৃহস্পতিবার স্টকহলমে সুইডিশ অ্যাকাডেমির অন্দার্স ওলসন বলেন, ‘‘গত বছর এই পুরস্কার ঘোষণা স্থগিত রাখা হয়েছিল। ২০১৮-র বিজেতা হিসেবে সুইডিশ অ্যাকাডেমি পোলান্ডের লেখক ওল্গা তোকারচুককে বেছে নিয়েছে। মানুষের জীবন যে নানা ধরনের সীমানা অতিক্রমের কাহিনি, সেটাই ওল্গা তাঁর লেখার মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। আর ২০১৯-এর বিজেতা সম্পর্কে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পিটার হান্টকে আমাদের মানব-অস্তিত্বের একদম খাদে নিয়ে যান। তাঁর ভাষা ব্যবহার অনন্য, স্বতন্ত্র।’’ দু’জনকেই ‘প্রান্তবাসীদের কাহিনিকার’ বলে উল্লেখ করেছে কমিটি। শতাধিক বছরের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারের তালিকায় ওল্গা ১৫তম মহিলা প্রাপক।

যৌন কেলেঙ্কারি ও আর্থিক দুর্নীতিতে নোবেল সাহিত্য অ্যাকাডেমির প্রাক্তন সদস্যা ক্যাটরিনা ফ্রস্টেনসনে স্বামী, ফরাসি চিত্রগ্রাহক জঁ ক্লদ আর্নোর নাম জড়ানোর পরে ২০১৭-র ডিসেম্বরে কমিটির বেশির ভাগ সদস্য পদত্যাগ করেছিলেন। দু’টি ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত ছিলেন আর্নো। তা ছাড়া, বিপুল অর্থের বিনিময়ে সাত বার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রাপকের নাম তিনি ফাঁস করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সেই বিতর্কের পরে গত বছর মে মাসে অ্যাকাডেমি ঘোষণা করে, এ বছর সাহিত্যে নোবেল ঘোষণা করা হবে না। ১৯০১ সালে শুরু হওয়া নোবেল পুরস্কার ঘোষণায় ছেদ পড়েছিল সাত বার। তবে তা দু’টি বিশ্বযুদ্ধের জন্য। কোনও কেলেঙ্কারির জন্য নোবেল ঘোষণা বন্ধ থাকার ঘটনা এই প্রথম। তবে সুইডিশ কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয় এ বছরের পুরস্কার বকেয়া থাকবে, ২০১৯-এ এক সঙ্গে দু’বছরের প্রাপকের নাম ঘোষণা করা হবে।

Advertisement

সাহিত্যে নোবেল ১৯০১-২০১৭

১১০ মোট পুরস্কারের সংখ্যা

১১৪ মোট প্রাপক

১৪ মহিলা বিজেতা

৭ বছর সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়নি

৬৫ প্রাপকদের গড় বয়স

৪১ বছর বয়সে নোবেল পেয়েছিলেন সাহিত্যের তরুণতম বিজেতা রুডইয়ার্ড কিপলিং

৮৮ বছর বয়সে নোবেল পান প্রবীণতম সাহিত্যের নোবেল বিজেতা ডরিস লেসিং

১৯৫৩ সালে সাহিত্যে ‘সুবক্তা’ হওয়ার জন্য নোবেল পেয়েছিলেন তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল

২৯ জন ইংরেজি লেখক সাহিত্যে নোবেল পেয়েছেন। যে কোনও ভাষার মধ্যে ইংরেজি লেখকের সংখ্যাই সব থেকে বেশি

২ জন সাহিত্যিক নোবেল পুরস্কার গ্রহণ করেননি

১৯৫৮ সালে প্রথমে সম্মত হয়েও পরে সোভিয়েত কর্তৃপক্ষের চাপে পুরস্কার নেননি বরিস পাস্তারনাক।

১৯৬৪ সালে পুরস্কার গ্রহণ করতে অস্বীকার করেন জঁ পল সার্ত্র। কেতাবি খেতাব নিতে তাঁর অনীহা ছিল।

০ সাহিত্য নোবেলে যৌথ খেতাবের সংখ্যা। বিজ্ঞান বা শান্তি পুরস্কারে একাধিক বার যৌথ প্রাপক থাকলেও এখনও পর্যন্ত সাহিত্যে কোনও যুগ্ম প্রাপক হয়নি

পোলিশ সাহিত্যের দুনিয়ায় ৫৭ বছর বয়সি ওল্গা তোকারচুক অতি-পরিচিত নাম। ‘বিগুনি’ উপন্যাসটির জন্য গত বছর ম্যানবুকার পুরস্কার পান তিনি। ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত তাঁর প্রথম বইটি অবশ্য কবিতার সঙ্কলন ‘মিয়াস্তা ভ লুস্ত্রাক’ (আয়নার মধ্যে শহর)। তার পরে ১৯৯৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘পোদ্রোজ় লুদজ়ি সিয়েগি (বই-মানুষের যাত্রা)। এর পরেই প্রকাশিত হয় ‘ই.ই.’ (১৯৯৫), ‘প্রাভিক ই ইনে সাৎসি’ (আদিম ও অন্যান্য সময়, ১৯৯৬)। তার পরে অনেকটাই পাল্টে যায় ওল্গার লিখনশৈলি। লিখতে শুরু করেন ছোট গল্প ও অনু-উপন্যাস। ম্যানবুকার পুরস্কার পেয়েছিলেন যে ‘বিগুনি’ (উড়ান, ২০০৭) উপন্যাসটির জন্য, সেটি ১১৬টি অনু-কাহিনির সমষ্টি। পোলিশ পাঠকদের মধ্যে অত্যন্ত জনপ্রিয় হলেও ওল্গার লেখা ইংরেজি (বা অন্যান্য ভাষায়) অনেক পরে অনূদিত হয়। যেমন ‘উড়ান’ ইংরেজিতে অনুবাদ করা হয়েছিল মূল উপন্যাস প্রকাশের ১০ বছর পরে, ২০১৭তে। ২০১৭ সালে লেখা তাঁর সাম্প্রতিকতম উপন্যাস ‘প্রোয়াৎজ় সোজ় প্লোগ প্রেজ়’ (মৃতদের হাড়ের উপর লাঙল চালিয়ে দাও) এখনও ইংরেজিতে অনূদিত হয়নি।

অনুবাদের কল্যাণে বাঙালি পাঠকের কাছে পরিচিত নাম পিটার হান্টকে। সোভিয়েত-অধিকৃত বার্লিনে শৈশব কাটানোর পরে ছ’বছর বয়সে মায়ের সঙ্গে অস্ট্রিয়া চলে এসেছিলেন পিটার হান্টকে। পিটারের যখন ৯ বছর বয়স, আত্মহত্যা করেন তাঁর মা। মাতাল সৎবাবা-র বাড়িতেই কৈশোর কেটেছে পিটারের। পরে চলে যান বোর্ডিং স্কুলে। ছেলেবেলার সেই নানা না-পাওয়াকে তাঁর বিভিন্ন উপন্যাসের বিষয়বস্তু করেছেন পিটার। যেমন মায়ের মৃত্যুর কথা উঠে এসেছে ‘আ সরো বিয়ন্ড ড্রিমস’ (স্বপ্নের ও-পারে দুঃখ) উপন্যাসটিতে। কথাসাহিত্য ছাড়া তাঁর অবাধ বিচরণ নাটক ও অনুবাদের দুনিয়াতেও। লিখেছেন বেশ কিছু সিনেমার চিত্রনাট্যও। তবে সার্বীয় জাতীয়তাবাদ বা ইউগোস্লাভ যুদ্ধ সম্পর্কে তাঁর দক্ষিণপন্থী কথাবার্তার জন্য বহু সমালোচিতও হয়েছেন। বিতর্কের জন্য বহু পুরস্কারে তাঁর নাম ঘোষণার করা হলেও পরে তা বাতিল করে দেওয়া হয়।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement