দুই রাষ্ট্রনেতা। লিমায় আপেক শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে। ছবি: এএফপি
সাইবেরিয়াতেও কি এত ঠান্ডা পড়ে!
রবিবার পেরুর রাজধানী লিমায় ‘আপেক’ (এশিয়া প্যাসিফিক ইকোনমিক কোঅপারেশন) শীর্ষ সম্মেলনের ফাঁকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা হয় রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের। দু’জনের শীতল চাউনি আর ঠান্ডা করমর্দনে মোড়া চার মিনিটের কথোপকথন বলে দিল, পুতিন-প্রিয় ডোনাল্ড ট্রাম্প ওবামার উত্তরসূরি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ায় দুই রাষ্ট্রনেতার সম্পর্ক আরও ‘শীতল’ হয়েছে।
লিমায় আপেক শীর্ষ সম্মেলনে রবিবার দেখা হয় ওবামা-পুতিনের। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই চার মিনিট কথা বলেন তাঁরা। সূত্রের খবর, তাঁদের আলোচনায় উঠে এসেছে সিরিয়া এবং ইউক্রেনের মতো প্রসঙ্গ।
পরে সাংবাদিক বৈঠকে ওবামা জানান, সিরিয়া এবং রুশ সেনার ধারাবাহিক বোমাবর্ষণ আমেরিকার উদ্বেগ বাড়াচ্ছে। সংঘর্ষবিরতি এবং রাজনৈতিক ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রয়োজন। ওবামার কথায়, ‘‘আমি সৌজন্য দেখিয়েছি ঠিকই। তার সঙ্গে নীতিগত ভাবে আমাদের যে পার্থক্য রয়েছে, তা-ও স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছি।’’ সাক্ষাৎ শেষে পুতিন আর এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘এত বছর ধরে যৌথ-দায়িত্ব পালনের জন্য ওঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছি। ওবামা যদি চান, রাশিয়ায় আসতেই পারেন। আমাদের ভালই লাগবে।’’ ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঝোড়ো সাফল্য নিয়ে দু’জনের কোনও কথা হয়নি বলেই সূত্রের খবর।
মুখে ভাল-ভাল কথা বললেও ছোট্ট এই আলাপচারিতায় দুই প্রেসিডেন্টের ‘শরীরী-ভাষা’ নিয়ে জল্পনায় মশগুল গোটা দুনিয়া। দুই রাষ্ট্রনেতার সম্পর্ক কোনও কালেই সরলরেখায় চলেনি। রবিবারেও দু’জনের মধ্যে বাড়তি সৌজন্যের রেশ খুঁজে পাওয়া যায়নি। দু’জনের মুখে এক চিলতে হাসিও ছিল না।
গত সপ্তাহেই মস্কোর সাইবার হানা নিয়ে পুতিনকে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। হিলারি ক্লিন্টনের প্রচার এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জরুরি ই-মেল ফাঁস করে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনেও প্রভাব ফেলার অভিযোগ উঠেছিল পুতিনের দেশের বিরুদ্ধে। আর এই সূত্রেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট পদে সদ্য নির্বাচিত ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে পুতিনের ‘সুসম্পর্ক’ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। ওবামার তুলনায় পুতিন ঢের ভাল নেতা, এ ধরনের প্রশস্তি করেছিলেন ট্রাম্প। ভবিষ্যতে রুশ রাষ্ট্রনেতার সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রেখে চলার আশ্বাসও দিয়েছেন তিনি। বস্তুত মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচার পর্বে পুতিনও যে রকম খোলাখুলি ভাবে রিপাবলিকান প্রার্থীকে সমর্থন জানিয়ে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিন্টনকে আক্রমণ করেছিলেন, তাতে স্পষ্ট হয়ে যায় যে ভাবী প্রেসিডেন্টের পদে ট্রাম্পকেই দেখতে চান তিনি। হিলারি ক্ষমতায় এলে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হতে দেরি হবে না— এমন মন্তব্যও শোনা যায় রুশ প্রেসিডেন্টের এক ঘনিষ্ঠ সহযোগীর মুখে।
আর দু’মাস পরেই হোয়াইট হাউসের মসনদে বসবেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। কখনও রাজনীতির অলিন্দে পা না-রাখা নতুন প্রেসিডেন্ট তখন মার্কিন-রুশ সম্পর্কে কতটা উষ্ণতার ছোঁয়া আনবেন, সেটাই দেখার।