ছবি রয়টার্স।
আমেরিকায় গত সাড়ে তিন মাসে করোনায় দৈনিক মৃতের সংখ্যা হাজারের নীচে নামেনি এক দিনও। যা দেখা গেল সোমবার। জন্স হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের দেওয়া এই পরিসংখ্যান দেখে খানিকটা হলেও আশায় বুক বেঁধেছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। রিপোর্ট অনুযায়ী, করোনায় গত ২৪ ঘণ্টায় মৃত্যু হয়েছে ৭৪৯ জনের।
গত জানুয়ারির ১২ তারিখ এক দিনেই আমেরিকায় প্রাণ হারিয়েছিলেন মোট ৪৪৭৩ জন আক্রান্ত। যা এখনও পর্যন্ত সর্বোচ্চ। সেখান থেকে মৃতের সংখ্যা সাড়ে সাতশোর কাছাকাছি নেমে আসার বিষয়টিকে সাফল্যের চোখেই দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা।
বিজ্ঞানীদের মতে, আমেরিকায় সংক্রমণের মাত্রা এবং মৃতের সংখ্যা, এই দুই হার প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে। যা থেকে স্পষ্ট, অতিমারির গতি খানিকটা হলেও মন্থর হয়েছে। ঠিক উৎসবের মরসুমের আগে যেমনটা ছিল। তবে আশঙ্কা মতোই বড়দিন থেকে শুরু করে একাধিক উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলামেশা বাড়ে। যার জেরে নভেম্বরের পর থেকেই বৃদ্ধি পায় সংক্রমণের মাত্রা। বাড়ে মৃতের সংখ্যাও। তবে এ দিনের এই খবরে স্বস্তি মিললেও কড়াকড়ি নিয়ে শিথিলতার কোনও কারণ দেখছেন না স্বাস্থ্যকর্তারা।
সোমবার যদিও আমেরিকার স্বাস্থ্য দফতর জানিয়েছে, যাঁরা প্রতিষেধকের সম্পূর্ণ ডোজ় নিয়েছেন, তাঁরা যদি মাস্ক না-পরে বা দূরত্ব-বিধি বজায় না-রেখে দেখা করেন, তা হলে অসুবিধের কিছু নেই। প্রতিষেধক নেননি এমন কারও সঙ্গেও তাঁদের মাস্ক ছাড়া দেখা করতে বাধা নেই। প্রতিষেধক নেওয়ার পরে কেউ একক ভাবে উপসর্গহীন কোভিড আক্রান্তের সংস্পর্শে এলে নিভৃতবাসে যেতে হবে না। তবে তিনি যদি আক্রান্তের সঙ্গে দেখা করতে হাসপাতালে যান, যেখানে আরও অনেক আক্রান্ত রয়েছেন, তা হলে কোয়রান্টিন বাধ্যতামূলক। পাশাপাশি বাইরে বেরোলে প্রতিষেধক নেওয়া থাকলেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সংক্রমণের মাত্রা আগের চেয়ে কমে আসায় ইতিমধ্যেই দেশের বিভিন্ন প্রদেশে আস্তে আস্তে স্কুল এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলি খোলার চিন্তাভাবনা চালাচ্ছে প্রশাসন। পাশাপাশি ইতিমধ্যেই ৯.২ কোটি মানুষের টিকাকরণ হয়ে গিয়েছে। মে মাসের মধ্যে সব প্রাপ্তবয়স্ককেই প্রতিষেধক দেওয়ার কাজ শেষ করাই লক্ষ্য জো বাইডেন প্রশাসনের। সেই প্রেক্ষিতেই সোমবারের এই নয়া নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে বলে ধারণা সাধারণ মানুষের। বৃহস্পতিবার আমেরিকায় লকডাউনের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে দেশবাসীর উদ্দেশে বার্তা দেওয়ার কথা বাইডেনের। সেখানে তিনি কী বলেন, এখন সে দিকেই নজর সকলের।
এ দিকে, ব্রাজিল স্ট্রেনের বিরুদ্ধে কার্যকর ফাইজ়ার এবং বায়োএনটেকের তৈরি করোনা প্রতিষেধক— এমনটাই দাবি করা হয়েছে এক নয়া রিপোর্টে। সোমবার নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অব মেডিসিন-এর প্রকাশিত ওই রিপোর্টটির দাবি, ফাইজ়ারের টিকার দু’টো ডোজ়ই নিয়েছেন, এমন মানুষের শরীরে ওই স্ট্রেনের উপস্থিতি নির্মূল করা সম্ভব হয়েছে বলে উঠে এসেছে গবেষণায়।
সোমবার মৃতের সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়ানোয় এ বার এই তালিকায় ষষ্ঠ স্থানে উঠে এল ইটালি। করোনা সংক্রমণের জেরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ঘোষিত করোনা পরিস্থিতির এক বছর পূর্ণ হতে চলেছে সামনেই। তার প্রাক্কালে বিশ্বকে ফের সজাগ করে দিলেন সংস্থার প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস। আজ তিনি বলেন, ‘‘বিজ্ঞান, সমাধান ও একতার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি দমনে যতটা সাফল্য এসেছে তা ধরে রাখতে এখনও আরও অনেক দিন দৃঢ়তার সঙ্গে টিকে থাকতে হবে আমাদের।’’