পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী কী মনে করেন?
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের তোলা ‘ষড়যন্ত্রের’ তত্ত্ব গত কালই খারিজ করেছিল পাক সেনাবাহিনী। আজ আরও এক বার ইমরানের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে সেনা জানাল, তাদের পরমাণু অস্ত্র পরিকাঠামো সম্পূর্ণ সুরক্ষিতই রয়েছে।
গত বুধবার পেশোয়ারের জনসভায় শাহবাজ় শরিফের সরকারকে আক্রমণ করে কার্যত সেনার উদ্দেশেই ইমরান বলেন, ‘‘যে ভাবে ষড়যন্ত্র করে এদের ক্ষমতায় আনা হল, তার পরে আমার দেশের প্রতিষ্ঠানগুলিকে প্রশ্ন করতে চাই, এই সব চোর-ডাকাতের হাতে কি আমাদের পরমাণু কর্মসূচি সুরক্ষিত থাকবে? আপনারা কি পাকিস্তানিদের নিরাপত্তার ভার এদের হাতে তুলে দিচ্ছেন না?’’ আমেরিকাকেও এক হাত নিয়ে ইমরান বলেন, ‘‘তোমাদের ক্ষমা চাওয়ার পরোয়া করি না আমরা। শরিফ, জ়ারদারিদের মতো দাসেদের সঙ্গেই তোমরা স্বচ্ছন্দ।’’
সেনার মিডিয়া শাখা আইএসপিআর যদিও আজ ইমরানের উদ্বেগ এক রকম উড়িয়ে দিয়েই বলেছে, দেশের পরমাণু পরিকাঠামো কোনও ব্যক্তিবিশেষের সম্পত্তি নয়। আইএসপিআরের ডিজি বাবর ইফতিকার বলেন, ‘‘আমাদের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে এমন কোনও আশঙ্কাই নেই। বিষয়টিকে রাজনীতিতে টানা উচিত নয়। পারমাণবিক সম্ভারের নিরাপত্তার জন্য আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে সেরা বন্দোবস্ত রাখা হয়েছে।’’ রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের মধ্যেই ইমরানের মস্কো সফর আমেরিকার সঙ্গে পাকিস্তানের সম্পর্কের অবনতিতে অনুঘটকের কাজ করেছে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। এই প্রসঙ্গে অবশ্য সেনা জানিয়েছে, ইমরানের রাশিয়া সফরের সিদ্ধান্তের সঙ্গে তারা সহমত ছিল। ইফতিকার বলেন, ‘‘প্রাতিষ্ঠানিক মত ছিল, প্রধানমন্ত্রীর ওই সফরে যাওয়া উচিত। কেউ দুঃস্বপ্নেও ভাবেনি, তাঁর সফর চলাকালীনই রাশিয়া যুদ্ধ ঘোষণা করবে। এটা দুর্ভাগ্যজনক ও সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিত।’’ যুদ্ধ সত্ত্বেও ইমরানের সফর চালিয়ে যাওয়ার পক্ষেই সেনা মত দিয়েছিল বলে বুঝিয়ে দিয়েছেন ওই সেনাকর্তা।
ইমরানের উৎখাতের প্রতিবাদে লন্ডনে পিএমএল-এন নেতা নওয়াজ় শরিফের বাসভবনের বাইরে বিক্ষোভ দেখিয়েছে পিটিআই। তার পাল্টা ইমরানের প্রাক্তন স্ত্রী জেমাইমা গোল্ডস্মিথের লন্ডনের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেছে নওয়াজ়ের দল। ইমরান এবং তাঁর দুই সন্তানের ছবিতে ‘ক্রস’ চিহ্ন দেওয়া প্ল্যাকার্ডও তৈরি করেছে তারা। সেই প্ল্যাকার্ডের ছবি-সহ জেমাইমা আজ টুইটারে লেখেন, ‘বাড়ির বাইরে বিক্ষোভ দেখানো, আমার বাচ্চাদের নিশানা করা, সমাজমাধ্যমে বিদ্বেষমূলক প্রচার— মনে হচ্ছে যেন নব্বইয়ের লাহোরে ফিরে গিয়েছি।’ এর পরে হ্যাশট্যাগ দিয়ে তিনি লেখেন, ‘পুরানা পাকিস্তান’। তাৎপর্যপূর্ণ
হল, ‘নয়া পাকিস্তান’ গড়ার অঙ্গীকারেই ক্ষমতায় এসেছিলেন তাঁর প্রাক্তন স্বামী।
এ দিকে বালুচিস্তানে বিদ্রোহীদের হামলার মুখে পড়েছে পাক সেনা ও গোয়েন্দা বাহিনীর পরিকাঠামো। গত মঙ্গলবার খরন শহরে সেনার গোয়েন্দা বাহিনীর দফতরের পাশাপাশি আইএসআইয়ের দফতরকে নিশানা করে রকেট ছুড়েছে বালোচ লিবারেশন আর্মি। তাদের মুখপাত্র আজ়াদ বালোচ জানিয়েছেন, ফ্রন্টিয়ার কোরের কয়েকটি চেক পোস্টেও হামলা চালানো হয়েছে।