বুধবারের রায়ে উচ্ছ্বসিত সমকামী সম্প্রদায়ের মানুষজন তথা আন্দোলনকারীরা। ছবি: সংগৃহীত।
সমলিঙ্গ দম্পতিদের বিয়েতে সম্মতি না দেওয়াটা ‘অসাংবিধানিক’। বুধবার একটি ঐতিহাসিক রায়ে সাফ জানাল জাপানের আদালত। জাপানের মতো তথাকথিত রক্ষণশীল দেশে এই রায় নজিরবিহীন বলেই মনে করছেন সমকামীদের বিয়ের আইনি অধিকার নিয়ে লড়াই করা আন্দোলনকারীরা।
বুধবার এই নজিরবিহীন রায় দিয়েছে জাপানের স্যাপোরো জেলা আদালত। জাপানের আন্দোলনকারী তথা সমকামী সম্প্রদায়ের মানুষজনের মতে, সমলিঙ্গে বিয়েকে আইনি তকমা দিতে এই রায় প্রতীকী জয় হয়ে চিহ্নিত থাকবে। কারণ, এই প্রথম জাপানে সমলিঙ্গের বিয়ে আইনি পরিভাষায় বৈধ তকমা পেল। যদিও জাপানে এখনও সমকামীদের বিয়ে নিয়ে আইন তৈরি করা হয়নি। তবে তাঁদের মতে, ভবিষ্যতে সমকামীদের বিয়ের অধিকারকে আইনি পথে নিয়ে যাওয়ার দরজা খুলে দিতে পারে এই রায়।
১৮৮০ সাল থেকেই জাপানে উভলিঙ্গের দম্পতির বিয়ে আইনত বৈধ। তবে সমলিঙ্গের বিয়ে এখনও সে দেশে অবৈধ বলে গণ্য করা হয়। যদিও উভলিঙ্গের বিয়েতে আইনগত ভাবে দু’পক্ষেরই সম্মতির প্রয়োজন।
আইনি বাধার পাশাপাশি রয়েছে জাপানের মতো তথাকথিত রক্ষণশীল সমাজের বাধাও। সমকামী সম্প্রদায়ভুক্তদের জন্য জাপানের সমাজ যথেষ্ট উদার মনোভাবাপন্ন নয় বলেও দাবি অনেকের। স্বাভাবিক ভাবেই, বুধবারের এই রায়ে উচ্ছ্বসিত সমকামী সম্প্রদায়ের মানুষজন তথা আন্দোলনকারীরা। ‘ম্যারেজ ফর অল জাপান’ নামে সমকামীদের বিয়ের অধিকার নিয়ে সরব এক সংগঠনের ডিরেক্টর তথা প্রাইড হাউস টোকিয়ো-র সদস্য গোন মাতসুনাকা এই রায়কে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “(এই রায়ে) আমি সত্যিই খুশি। রায়দানের আগে পর্যন্ত আমরা জানতাম না কী হতে যাচ্ছে। তবে এখন অত্যন্ত আনন্দিত।” উচ্ছ্বসিত ৪৪ বছরের মাতসুনাকার উক্তি, “এই রায়ের মূল্য পরিমাপ করা যাবে না।”
আইনি দিক থেকে এশীয় দেশগুলির তুলনায় যথেষ্ট উদারপন্থী হলেও সামাজিক ভাবে সমকামী সম্প্রদায়ভুক্তদের কার্যত আড়ালেই রেখে দিয়েছে জাপান। বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ জাপানে এই মুহূর্তে বিয়ের অধিকারে বাধা ছাড়াও সমকামী দম্পতিরা তাঁদের সঙ্গীর সম্পত্তির অধিকারী হতে পারেন না। যে বাড়িতে তাঁরা বসবাস করেন, তার উপর আইনি ভাবে অধিকারহীনতা ছাড়াও সঙ্গীর কোনও সন্তান থাকলে, তার অভিভাবকত্বে আইনগত ভাবে বাধা রয়েছে। প্রসঙ্গত, বিভিন্ন পুরসভা থেকে পার্টনারশিপ শংসাপত্রের মাধ্যমে জাপানের সমকামী সম্প্রদায়ভুক্তরা বাড়িভাড়া করতে অথবা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে পারেন। তা সত্ত্বেও উভলিঙ্গের দম্পতিদের মতো সমান অধিকার থেকে সমকামীদের বঞ্চিতই রাখা হয়েছে।
কী ভাবে এই ঐতিহাসিক জয়ের রাস্তা তৈরি হল? স্যাপোরো জেলা আদালতে ২ জন পুরুষ দম্পতি-সহ এক মহিলা জাপান সরকারের কাছে ১ মিলিয়ন ইয়েন (ভারতীয় মুদ্রায় ৬৪ কোটি টাকারও বেশি) ক্ষতিপূরণের আবেদন করে একটি মামলা করেছিলেন। তাঁদের দাবি ছিল, নিজের নিজের সঙ্গীকে আইনত বিয়ে করার অধিকার না থাকায় যে মানসিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে তাঁদের যেতে হচ্ছে, তার স্বীকৃতি দেওয়া উচিত জাপান সরকারের। আন্দোলনকারীরা ছাড়াও আবেদনকারীদের আইনজীবীরাও মনে করেন, এই রায় ভবিষ্যতে বহু আইনি বাধা পেরনোর রাস্তা খুলে দিল।