নেতাদের বিরুদ্ধে কিছু বলা যাবে না, সরকার-বিরোধী মতামতও পোষণ করা যাবে না। আর মানবাধিবার! সে সব নাকি এ দেশের মানুষের কাছে স্বপ্নের মতো। সারা বিশ্ব যখন করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে, কী ভাবে এর বিরুদ্ধে এক হয়ে লড়া যায় সে কথা ভাবছে, এই দেশ কিন্তু চলছে নিজের খেয়ালেই।
দেশটার নাম উত্তর কোরিয়া। বিশ্বজোড়া করোনা-ত্রাসের মধ্যেই যারা এখনও ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে বলে খবর। চলছে সামরিক মহড়াও। আর সমানতালে চলছে রাজনৈতিক বন্দিদের উপর অমানবিক অত্যাচার।
কারা এই রাজনৈতিক বন্দি? কোথায় রাখা হয় তাঁদের? সূত্র বলছে, পিয়ংইয়ং থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে কায়েচং কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। এই ক্যাম্পেই আটকে রাখা হয়েছে কয়েক হাজার বন্দিকে।
সে সমস্ত সরকারি কর্মচারীর পারফরম্যান্স ভাল নয়, দেশের যে সমস্ত মানুষ প্রশাসনের বিপক্ষে কথা বলেন, তাঁদের এবং তাঁদের সন্তানদেরও নাকি এই ক্যাম্পে ঠাঁই হয়। কেউ সরকার বিরোধী কোনও কাজ করলেও, তাঁকে এই ক্যাম্পে রাখা হয়।
এঁরাই রাজনৈতিক বন্দি। আর এই সমস্ত বন্দিদের উপর আমানবিক নির্যাতন চালানো হয় এখানে। সম্প্রতি এই ক্যাম্প থেকে দক্ষিণ কোরিয়ায় পালিয়ে আসা এক বন্দির কাছ থেকে সেই অভিজ্ঞতার কথা জেনে শিউরে উঠেছে গোটা বিশ্ব।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কোনওক্রমে প্রাণ বাঁচিয়ে পালিয়ে আসা ওই বন্দি উত্তর কোরিয়ার মানবাধিকার কমিশনকে জানিয়েছিলেন, ওই ক্যাম্পে অন্তত ছয় হাজার বন্দি রয়েছে। তাঁদের উপর দিনভর চরম অত্যাচার চালানো হয়। এমনকি মৃত্যুর পরও তাঁদের নিস্তার নেই। মেল অনলাইন-এ সেই খবর প্রকাশিত হয়।
সেই সব মৃতদেহকে নাকি জৈব সার হিসাবে ব্যবহার করেন নিরাপত্তারক্ষীরা। সেই সব মৃতদেহের উপর সব্জি ফলিয়ে সেই সমস্ত শাক-সব্জি নাকি পরিবারের সঙ্গে আয়েস করে খান নিরাপত্তারক্ষীরা। কেমন ছিল সেই অত্যাচার? পালিয়ে আসা বন্দির থেকে জানা গিয়েছে সে কাহিনিও।
সেই বন্দির দাবি অনুযায়ী, ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত টানা কাজ করে যেতে হয় বন্দিদের। কয়লা খনি, বস্ত্র কারখানা, রাবার কারখানা, জুতো কারখানা, সিমেন্ট কারখানা বা চাষাবাদে লাগানো হয় এই সমস্ত বন্দিদের। এমনকি বাচ্চাদেরও একইভাবে কাজে লাগানো হয়।
কাজে সামান্য কিছু ভুলচুক হলেই বন্দিদের মারধর শুরু করে ক্যাম্পের নিরাপত্তারক্ষীরা। দিনভর এত খাটনির পরও ভাল কোনও খাবার জোটে না তাঁদের।
বেশির ভাগ দিনই বাঁধাকপি আর নুন ছড়ানো ভুট্টা খেয়ে জীবন চালাতে হয় তাঁদের। আর কোনও বন্দিদের ভাগ্যে জোটে ব্যাঙ, পোকা, ইঁদুর বা সাপ।
বেশির ভাগ বন্দিই অপুষ্টির কারণে মারা যান। অপুষ্টি আটকাতে প্রোটিনের প্রয়োজন। বন্দিরা তাই কাজ করার সময় এমন সব প্রাণী দেখতে পেলেই খেতে চান।
কিন্তু মাঠে-ঘাটে ঘুরে বেড়ানো এই সব প্রাণীদেরও অত সহজে খেতে পারেন না বন্দিরা। তার জন্যও প্রথমে নিরাপত্তারক্ষীদের অনুমতি প্রয়োজন।
নিরাপত্তারক্ষীরা অনুমতি দিলে তবেই সেগুলো তাঁরা খেতে পারেন। রান্নার কোনও ব্যবস্থা নেই যদিও। ব্যাঙ, ইঁদুর, সাপ মেরে নাকি তাদের কাঁচা চিবিয়ে খেতে হয় বন্দিদের।
এই ভাবে থাকতে থাকতে যত দিন যায় নানা রোগ এবং অপুষ্টির শিকার হয়ে মৃত্যু হয় বন্দিদের। আর মৃত্যুর পর সমস্ত মৃতদেহগুলোকে ক্যাম্পের পাশের পাহাড়ি জমিতে ফেলে দিয়ে আসা হয়।
পাহাড়ি অনুর্বর জমিতে জৈব সারের কাজ করে এই মৃতদেহগুলো। সেই জমিতেই সব্জি ফলিয়ে ক্যাম্পের নিরাপত্তারক্ষীরা খেয়ে থাকেন বলে দাবি করেছেন ওই বন্দি।